বিশ্ব মেডিটেশন দিবস পালিত। ‘ভালো মানুষ ভালো দেশ স্বর্গভূমি বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি উদযাপন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২১ মে) রফিক ভবনের নিচে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৭টা ১০ মিনিট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেডিটেশন করার মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসটি উদযাপন করার মূল উদ্যোক্তারা হলেন নাট্যকলা বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোঃ মহিউদ্দিন (বন্ধু), ইংরেজি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের মোঃ ফাহিম, এবং ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী রাজিব।
এসময় জবি শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন বলেন, নিয়মিত মেডিটেশন চর্চাকারীরা বোঝেন মেডিটেশন বা ধ্যানচর্চা একজন মানুষের ভেতরে কীভাবে শুভ শক্তি বা ভালো বৈশিষ্ট্যগুলোকে জাগিয়ে তোলে। নিয়মিত মেডিটেশন চর্চাকারীর মনের ভেতর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আত্মবিশ্বাস, সাহস, সমমর্মিতা, পরার্থপরতা, দেশপ্রেমসহ যাবতীয় মানবিক গুণাবলী।
পাশাপাশি এ চর্চা ‘মন্দ’ জিনিসগুলোকে মুছে ফেলতে সাহায্য করে। এই মন্দের ভেতর রয়েছে রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা, ঈর্ষা, লোভ, লালসা, অহম, হীনম্মন্যতা, ভয়, দুশ্চিন্তা, নেতিচিন্তা, অবিশ্বাস আর সংশয় ইত্যাদি সকল আত্মবিধ্বংসী উপাদান। সব মিলিয়ে মন্দ মুছে মন হয় ময়লামুক্ত।
জানা যায়, মনের সার্বজনীন ব্যায়াম হচ্ছে ধ্যান বা মেডিটেশন। যেকোনো বয়সের মানুষ প্রতিদিনই এটি চর্চা করতে পারেন। মেডিটেশনের নিয়মিত অনুশীলন জাগিয়ে তোলে মানুষের ভেতরের ইতিবাচক সত্তাকে, শুভ শক্তিকে। নিয়মিত মেডিটেশন চর্চায় মনের রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ হতাশা, দুশ্চিন্তা, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ দুর হয়।
নেতিবাচকতা থেকে ইতিবাচকতায় বদলে যায় দৃষ্টিভঙ্গি। মন প্রশান্ত থাকলে, মনে মমতা জাগলে পারিবারিক, পেশাগত, সামাজিক সম্পর্কগুলোও সুন্দর হয়ে ওঠে। মানসিক চাপমুক্ত থাকা যায় বলে বাড়ে পেশাগত দক্ষতা। শুধু নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা করেই একজন মানুষ পেতে পারেন প্রশান্তি, সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য।
বিশ্বজুড়ে এখন প্রায় ৫০ কোটি মানুষ নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন করেন। গত কয়েক বছর ধরে পৃথিবীজুড়ে কিছু প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের উদ্যেগে ২১ মে বিশ্ব মেডিটশন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা ও বয়সের মানুষ এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। উজ্জীবিত হচ্ছেন শক্তি ও উদ্যোমে। নতুন গতি অনুভব করেছেন স্বাস্থ্য ও মনে।
বাংলাদেশে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস পালনের মূল উদ্যোক্তা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। ২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হচ্ছে দিনটি। দিবস পালনের বিষয়টি আসলে প্রতীকী।
যখন কোনো সমাজ বা জনগোষ্ঠীকে কোনো বিষয়ে সচেতন করার প্রয়োজন হয়, গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে কথা বলার প্রেক্ষাপট হয়; তখন একটি দিনকে নির্দিষ্ট করে সেদেশের সরকার সংগঠন বা জাতিসংঘ এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। সেভাবেই উদ্ভব হয় বিশ্ব মেডিটেশন দিবসের।
বছর পাঁচেক আগে উইল উইলিয়ামস নামে এক ব্রিটিশ মেডিটেশন প্রশিক্ষক প্রথম এ দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেন। উইল উইলিয়ামস অনিদ্রার রোগী ছিলেন মেডিটেশনের মাধ্যমে নিরাময়ের পর তিনি এ সম্পর্কে আরো উৎসাহী হয়ে ওঠেন।
গভীর ধারণা লাভের জন্যে তিনি ভারতে এসে সেখানকার দুজন গুরুর সান্নিধ্য লাভ করেন। সেই সঙ্গে চীনা, মিশরীয় ও অ্যামাজন অঞ্চলের ধ্যান সম্পর্কে পাঠ নেন। এক পর্যায়ে ’বিজা’ মেডিটেশন নামে একটি ধ্যান পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। যার মূল সুর উৎসারিত হয়েছে প্রাচ্য ধারার ধ্যান পদ্ধতি থেকে।
মেডিটেশন সম্পর্কে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.ফারজানা আহমেদ বলেন,আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি মেডিটেশন আমাদের কোন কিছু অনুভব করতে সাহায্য করে।
আমরা বিভিন্ন সময় নানান চিন্তা করতে থাকি কোন কিছুতে মনোযোগ দিতে সমস্যা হয়,আমরা যদি পঞ্চইন্দ্রিয় দিয়ে কাজটি ফিল করি তখন আমরা যেকোনো কাজে বেশি ফোকাসড হতে পারি। এক কথায় বলতে গেলে মেডিটেশন আমাদেরকে চিন্তা থেকে অনুভব করতে সাহায্য করে।
মেডিটেশন সম্পর্কে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, মেডিটেশন হলো মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বা এটাকে একধরনের মানসিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও বলা যায়।
মেডিটেশনের মাধ্যমে মানুষ শারীরিক ও মানসিক ও শারীরিক দুইভাবেই ভালোবোধ করে। তিনি আরো বলেন যদি আমরা মেডিটেশন করতে পারি তাহলে মানসিক ও শারীরিকভাবে আমরা সুস্থ ও ভালো থাকবো।
ইবাংলা/টিএইচকে/২১ মে,২০২২