একনেকে ৭১৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) শতভাগ রাজস্ব সংগ্রহের পাশাপাশি সিস্টেম লস লাঘব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আজ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ৭১২.৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে।

একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরে-বাংলা নগর এলাকায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ ও সচিবগণ অংশ গ্রহণ করেন।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আজ আনুমানিক ২ হাজার ৬৬৫ দশমিক ২১ কোটি টাকার মোট নয়টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন। অনুমোদিত নয়টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি নতুন, বাকীগুলো সংশোধিত প্রকল্প।

প্রধানমন্ত্রীর কিছু নির্দেশনার কথা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন যে, এই প্রি-পেমেন্ট মিটার প্রচেষ্টা জোরদার হলে, সিস্টেম লস উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পারে।

মান্নান বলেন, যাদের বিদ্যুৎ বিল বড় ধরনের বকেয়া রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন সরকার প্রধান।

প্রধানমন্ত্রী সরকারি-বেসরকারি যেই হোক না কেন, বিদ্যুৎ বিল যে বা যেই প্রতিষ্ঠান বকেয়া রাখবে-তাদের বিরুদ্ধেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। এমনটি নোটিশ প্রদানের পরও যদি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করে তবে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ কর্তনেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

মান্নান আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী ধাপে ধাপে দেশের সবগুলো স্থল-বন্দরকে আধুনিকায়ন করতে নৌ-মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রায় ২৪টি স্থল-বন্দর রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সবগুলো স্থল-বন্দরে আধুনিক সরঞ্জামাদি ও পদ্ধতি স্থাপন করা হবে, যাতে সরকার আরো ভাল সেবা প্রদান করতে পারে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকারের বর্তমান পরিকল্পনা হচ্ছে- নতুন রাস্তা নির্মাণের পরিবর্তে বিদ্যমান সড়কগুলোর সংস্কার ও সেগুলো উন্নয়ন করা। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী কোন অবকাঠামো নির্মাণের আগে পরিবেশ, নদী, খাল ও বনাঞ্চল সংরক্ষণের দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব তহবিলে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেই অভিজ্ঞতার কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীর কাছ থেকে তিনি পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছেন বলেই আওয়ামী লীগ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এমন একটি বিরাট অবকাঠামো নির্মাণ করতে পেরেছে।

আগামী ১৫ থেকে ২১ জুন শুরু হতে যাওয়া দেশের ষষ্ঠ আদম শুমারী (পপুলেশন ও হাউজিং সেন্সাস) সফল করার জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী দেশবাসীর সহায়তা কামনা করেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৪টি জেলার অধীনে ৩৩টি উপজেলায় এবং দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল- শতভাগ রাজস্ব সংগ্রহ নিশ্চিত করা, সিস্টেম লস কমানো, রিয়েল টাইম বিলিং সিস্টেম প্রবর্তন, ওভার বিলিং ও আন্ডার বিলিং বন্ধ করা, গ্রাহকদের অনলাইনে বিল ও অর্থ প্রদান নিশ্চিত করা এবং লোড নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার বাস্তবায়ন করা।

মূল প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- প্রায় ১১ লাখ ১৩ হাজার ৬০৮টি এক ফেজ ও ৮৬ হাজার ৩৯২টি তিন ফেজ স্মার্ট মিটার স্থাপন, প্রায় ১৩ হাজার ৬১৯টি ডেটা কনসেনট্রেটর ইউনিট স্থাপন, প্রায় ৩টি হেড-এন্ড সিস্টেম ও ৭০টি হ্যান্ড হেল্ড ইউনিট স্থাপন এবং ১২ লাখ মিটারের জন্য ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ও বিলিং সফটওয়্যার প্রস্তুত করা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন এবং উন্নত গ্রাহক পরিষেবা নিশ্চিত করা হবে।

সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- রূপকল্প ২০৪১ : ১৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র সঞ্চয় যুক্ত করা, ১৯৯.০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দারুল আরকাম ইবতেদিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও এর কার্যক্রম পরিচালনা, ১৩৮.৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম জোনের জন্য ৫০ বিজি ও ৫০ এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজের পুর্নবাসন।

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য প্রথম সংশোধিত অতিরিক্ত ব্যয় ৬৫১.৭২ কোটি টাকা, ৮৭.৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে রংপুরের পীরগঞ্জ, হারাগাছ ও বদরগঞ্জ পৌরসভার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পটুয়াখালীতে বিএনএস শের-ই-বাংলা প্রতিষ্ঠায় প্রথম সংশোধিত ১৯৬.৭৩ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয়।

দক্ষিণ এশীয় উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা’র (এসএএসইসি) সমন্বিত বাণিজ্য সুবিধা সেক্টর উন্নয়ন প্রকল্প : বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ (বিএলপিএ)-এর অংশ সহ ২১৭ কোটি টাকা এবং দক্ষিণ এশীয় উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এসএএসইসি) সমন্বিত বাণিজ্য সুবিধা সেক্টর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ৩১৩ কোটি টাকা।

ইবাংলা/টিএইচকে/১জুন,২০২২

প্রকল্প অনুমোদন
Comments (0)
Add Comment