পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মা, পাশেই বসা এক বছরের ফুটফুটে ছোট্ট সন্তান

জবি প্রতিনিধি

একটু পরপর সন্তান মায়ের পরীক্ষার খাতা টানছে, আবার কলম ধরছে। পরীক্ষার মধ্যেও মায়ের মন সন্তানের জন্য বিচলিত। কখন আবার চোখে কলমে খোঁচা লাগে, কখন পড়ে যায়। অন্যদিকে আবার ঘড়ির কাঁটায়ও তাঁকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে।

কারণ, নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা শেষ করতে হবে শিক্ষার্থীর এমন অবস্থা দেখে এগিয়ে এলেন পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করা জবি শিক্ষক, ছাত্রী ফাতেমা আক্তারের মেয়ে মারিয়ামকে কোলে নিয়ে হলে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আর কেউ নন তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম। ইতোমধ্যে তার এমন মহৎ কাজের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী মুহাম্মদ অধ্যাপক কামরুল ইসলামের সাথে আজ বুধবার সকালে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, গতকাল ৩১মে (মঙ্গলবার) রফিক ভবনের চারতলায় স্নাতক তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার মিডটার্ম পরীক্ষা ছিল, আমি সে হলে দায়িত্ব পালন করছিলাম।

হলে ঢুকেই প্রথম আমার শিক্ষার্থীর বাচ্চার উপর নজর যায়, খাতা দেওয়ার পর সবাই লিখা শুরু করেছে, এরপর লক্ষ্য করি ফাতেমা তার বাচ্চাকে বেঞ্চের উপর বসিয়ে এক হাত দিয়ে বাচ্চাকে ধরে রেখে অন্য হাত দিয়ে লিখার চেষ্টা করছিলো। তার বাচ্চা মাত্রই বসা শিখছে। বাচ্চা কলম ধরছে খাতা টানছে তাই লিখতে পারছিলো না সে।

আসলে ফাতেমা তার বাচ্চার জন্যই ঠিকমতো ক্লাস করতে পারেনি আমার সাথে এর আগে দেখা করেছিল, এটেনডেন্স নাম্বার ও নাই তার পরীক্ষা যদি ভালো না দিতে পারে তাহলে তার রেজাল্ট খারাপ হয়ে যাবে, আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম এই পরীক্ষাটা ভালো করে দাও।

আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম জুনিয়র কারো কাছে তোমার বাচ্চা রাখার ব্যবস্থা করতে পারতা মুলত ঠিকমতো ক্লাস না করার কারনে সবার সাথে তার ঐরকম সম্পর্ক তৈরি হয়নি। তাই উপায় না পেয়ে আমিই তার ফুটফুটে বাচ্চাটি কোলে নিয়ে তাকে নির্বিগ্নে পরীক্ষা দিতে সহায়তা করেছি। পাশের রুমেও আমার কোর্সের পরীক্ষা চলছিল দুইরুমেই বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছি।

জবি শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার জানান, তিনি ঢাকায় স্বামী, সন্তান ও ননদ নিয়ে থাকেন। ননদ ছোট, স্কুলে পড়ে। আর স্বামী জরুরি কাজে বাইরে থাকায় সন্তানকে বাসায় রেখে আসতে পারেননি। তাই সন্তানকে নিয়েই পরীক্ষার হলে এসেছেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ডে কেয়ার সেন্টারের আহ্বায়ক ড. আবদুস সামাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ২০১৮ সালের মে মাস থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে কেয়ার সেন্টার চালু আছে। আমাদের ডে কেয়ার সেন্টারে ২৫ থেকে ৩০ জন ছেলেপেলে রাখা যায় কিন্তু বাচ্চা পাই ৮ থেকে ১০ জন।

আমাদের ডে কেয়ার সেন্টারে সব সুবিধাই আছে বাচ্চাদের খেলনা আছে, খাবার পানির ব্যবস্থা, ফ্রিজ আছে,খাবার গরম করার ব্যবস্থা আছে, কার্টুন দেখার জন্য টিভিও রয়েছে। ডে কেয়ার সেন্টার পরিচালনার জন্য আছে তিনজন স্টাফ, একজন ক্লিনার, একজন সুপারভাইজার। যিনি সুপার ভাইজার তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট পাস করা।

তিনি আরো জানান বিভাগের মাধ্যমে ডে কেয়ার সেন্টারের সুবিধা নিয়ে শিক্ষক,কর্মকর্তা,কর্মচারী সকলকে নোটিশ করেছি কিছু বিভাগের দায়িত্বহীনতায় নোটিশগুলো শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাদের কাছে পৌছায় না। আমাদের এখানে শিক্ষক,শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের বাচ্চা রাখার সু ব্যবস্থা আছে। এমনকি কেউ চাইলে একদিনের জন্যও কিংবা খন্ডকালীন ও বাচ্চা রাখতে পারবে।

শিক্ষকের এমন মহৎ কাজ নিয়ে মোসারাত রহিম নামে একজন লিখেছেন, ছাত্রীর পরীক্ষা দিতে সমস্যা হচ্ছিলো, তাই পরীক্ষার পুরোটা সময় জুড়ে ছাত্রীর মেয়েকে সামলে রেখেছেন আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক। শিক্ষক যেন মাথার উপর বিশাল ছায়া ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষকগণ এতটাই আন্তরিক এতটাই অমায়িক। আপনাকে শ্রদ্ধা জানাই স্যার।

ইবাংলা /জেএন /০১ জুন ,২০২২

ছোট্টফুটফুটেসন্তান
Comments (0)
Add Comment