টানা ৩৬ ঘণ্টা পরেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের আগুন। সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপো যেন মৃত্যুপুরী। এ পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও আরও লম্বা হতে পারে মৃত্যুর সংখ্যা।
নিহতদের মধ্যে ৯জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। দগ্ধ ও আহত হয়েছেন চার শতাধিক। ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পর ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। এতে আশপাশের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে।
বিরামহীন জ্বলন্ত কনটেইনার ডিপো যেন মৃত্যুকূপ। একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এলাকা। হাজার হাজার পণ্যবোঝাই কনটেইনার দাউদাউ করে জ্বলছে। সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার বিএম ডিপোতে লাগা এই আগুনের ভয়াবহতা যেন এখন ধ্বংসস্তূপ আর মৃত্যুকূপে ক্রমশই রূপ নিচ্ছে। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে পোড়া জিনিসপত্র। ভেতরে আগুনের লেলিহান শিখায় বিভীষিকাময় অবস্থা।
ডিপোর ভেতরে ৫০০ মিটারের শেডের টিনের পুরো অংশ উড়ে গেছে। পুড়ে গেছে পোশাকশিল্পের হাজার কোটি টাকা মূল্যের কনটেইনারভর্তি মালামাল। কেমিক্যালের বিস্ফোরণের পরই ছড়িয়ে পড়ে আগুন। যে যেভাবে পেরেছেন চেষ্টা করেছেন বের হতে। কাউকে কাউকে আবার ভেতরেই পুড়ে মরতে হয়েছে।
সোমবার (৬ জুন) সকাল ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ৩৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ডিপোতে আগুন জ্বলছিল, উঠছিল ধোঁয়া। অন্যদিকে, আগুন নিয়ন্ত্রণে বিরামহীন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস ও সেনাসদস্যরা।
হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড থাকার কারণেই আগুনের ভয়াবহতা বেশি। অগ্নিকাণ্ডের শুরুতে ডিপো কর্তৃপক্ষের ভুল তথ্যের জন্যই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
এ অবস্থায় অভিযানে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দেড় শতাধিক সদস্য। তারা চেষ্টা করছেন কোনোভাবেই যেন রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ সাগরে ছড়িয়ে যেতে না পারে।
ঘটনাস্থলে থাকা চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কনটেইনার ডিপোটিতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রয়েছে। আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আমাদের কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।’
এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে জেলা প্রশাসন। হতাহতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন। আর তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।
আশরাফ উদ্দিন বলেন, বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। আর আহত প্রত্যেক ব্যক্তিকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস পাঁচ সদস্যের এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ইবাংলা/টিএইচকে/৬জুন,২০২২