পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের মাধ্যমে কেবল দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, বলা হচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে সেতুকেন্দ্রিক স্থানীয় মানুষের জীবনেও। তবে কিছুটা সংশয়ে আছেন ঘাটকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা ক্ষুদ্রব্যবসায়ীরা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই সব ক্ষুদ্রব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ত্বরান্বিত হবে উন্নয়ন। আর এর জন্য স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে সরকারকে।
পদ্মা সেতু হওয়ার খবরে আর সবার মতো ভীষণ খুশি আলী দেওয়ানও। তবে, চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ঘাট বন্ধ হবার শঙ্কায়। আলী দেওয়ান বলেন, এটা ছেড়ে হয়তো অন্য কাজ করব। দোকান এখানে আর চলবে না। লঞ্চ নেই, ফেরি না থাকলে; আসবে কারা আর খাবে কারা।
ছাত্তার মাদবরের ফেরিঘাটের এই বাজারে কমবেশি দোকান রয়েছে অন্তত তিনশটি। মূলত ঘাটে যাত্রী পারাপারের ওপর ভর করেই গড়ে উঠেছে এসব দোকান। তবে সেতু পুরোপুরি চালু হলে কী হবে তাদের ভবিষ্যৎ, তা নিয়ে শঙ্কায় তারা।
এক দোকানি বলেন, আমরা গরিব হলেও এটা আমাদের গর্ব- আমাদের এলাকায় পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে। ঘাট থাকার সময় ভালো চলেছে। এখন একটু খারাপ লাগতেছে। অত টাকা পয়সা নেই, আমরা গরিব মানুষ।
এক সিএনজি চালক বলেন, সিএনজি যদি সেতুতে না উঠতে দেয়, আমাদের সিএনজি চালানো বন্ধ হয়ে যাবে। সংসার চালাতে সমস্যা হবে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পদ্মাসেতুকে ঘিরে যে আগাম ভবিষ্যৎ অর্থনীতির কথা ভাবছে সরকার, তাতে এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও যুক্ত করার পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এখানে নতুন ব্যবসা চালু হবে বা পুরোনো ব্যবসাগুলো বড় হবে, তারা হয়তো সেগুলোতে সম্পৃক্ত হতে পারবে না। সেক্ষেত্রে সরকারের একটা দায়িত্ব থাকে, নতুন যে সুযোগগুলো আসবে সেগুলো গ্রহণ করতে গিয়ে তাদের কোথায় ঘাটতি আছে।
অর্থনীতিবিদ ড. খলিকুজ্জামান বলেন, তাদেরকে প্রণোদনা দিয়ে অন্যকোনো জায়গায় যেন তারা আরেকটা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারে। তাদের জীবন জীবিকা যেন এগিয়ে নিতে পারে। পদ্মার জাজিরা প্রান্তে এমন বাজার রয়েছে আরও তিনটি, অপরদিকে মাওয়া প্রান্তেও রয়েছে ছোটবড় মিলিয়ে চারটি বাজার।
পদ্মা পাড়ের এই মানুষগুলোর ছোট ছোট আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আজকের স্বপ্নের পদ্মা সেতু বলাই যায়। তবে সেতু চালুর পাশাপাশি ব্যবসায়িক ক্ষতির যে আশঙ্কা করছেন এই মানুষগুলো, সেটিও কিন্তু এক ধরনের বাস্তবতা। তাই সেতু চালুর পাশাপাশি স্থায়ী কোনো বাজার ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছেন এই দোকানিরা।
ইবাংলা / জেএন / ১৪ জুন,২০২২