সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ, বিমানবন্দরে পানি

সিলেট ব্যুরো

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেট ও সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। সিলেট নগরীসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা এবং সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি খুবই ভয়কর রূপ ধারণ করছে। এতে নানা দুর্ভোগ আর চরম ভোগান্তিতে পড়ছে বন্যাকবলিতরা। বন্যার কারণে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।

বসত বাড়িতে ঢুকেছে পানি। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও টার্মিনাল। এতে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশ ও বিদেশের বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুর থেকে তারা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছেন। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য নৌবাহিনীরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আজকের মধ্যেই তারাও কাজ শুরু করতে পারেন।

বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকায় ক্রমাগত পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে সিলেট নগর, ২০টি উপজেলা ও দুইটি পৌরসভা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ২৫ লাখ মানুষ।

এরই মধ্যে বন্যা কবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে সেনাবাহিনী। দুই জেলার ৮ উপজেলায় সেনাবাহিনীর ৯টি ইউনিট কাজ করছে। নৌকা দিয়ে বাড়িঘর থেকে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয় আসছেন সেনা সদস্যরা।

সিলেট সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল হামিদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় সিলেটের ৩ উপজেলা ও সুনামগঞ্জের ৫ উপজেলায় সেনাবাহিনী পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম চালাবে। এর মধ্যে সিলেট জেলার সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ জেলার সদর, দিরাই, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জ উপজেলা রয়েছে।

হামিদুল হক আরও জানান, সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি প্রবেশ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি খাদ্য গুদাম হুমকিতে রয়েছে। এগুলো রক্ষায়ও সেনা সদস্যরা কাজ করছেন।

জিওসি জানান, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বন্যা কবলিত এলাকায় পাঁচটি কাজ করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে-পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা। বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। বন্যা আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা। স্পর্শকাতর স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সীমিত পরিসরে খাদ্য সামগ্রী ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা।

সেনাবাহিনী আরও জানায়, সেনাবাহিনী নিজস্ব নৌকা দিয়ে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করছে। ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে আরও ‘রেসকিউ বোট’ আনা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের নৌকাগুলোও উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এদিকে সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নদনদী ও হাওরের পানি হু হু করে বাড়ছে। সুরমার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় এক থেকে দেড় ফুট করে পানি বেড়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের অর্ধেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সময়ে সময়ে পানি বাড়ায় পুরো শহর প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২০ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এ কারণে পানি কমার সম্ভাবনা নেই। পানি আরও বাড়লে সিলেটে চরম বিপর্যয় দেখা দেবে।

ইবাংলা/টিএইচকে/১৭জুন,২০২২

বিমানবন্দরে পানি
Comments (0)
Add Comment