নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে’র ছাত্র রাহুল দেব রায় ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করায় তুলকালাম কান্ড ঘটে। কিন্তু একটি চক্র ছাত্র রাহুলের বিচার চাওয়া অপেক্ষা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র বিরূদ্ধে অপপ্রচারে উৎসাহি হয়ে উঠে। তাদের কারনে গোটা এলাকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়।
বুধবার (২২জুন) সরজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি চক্র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র চেয়ার দখল করে ৫জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের নিয়োগ বাণিজ্য করতে দীর্ঘ দিন ধরে তৎপরতা চালিয়ে আসছে। তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাহুলের বিরূদ্ধে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। এরপর ঠিক সময় মত মিথ্যা কাল্পনিক অপবাদ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের অপসারন দাবি করে আন্দোলন শুরু করে।
অহেতুক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের নামে কুৎসা রটনা করে সাধারণ জনগন ক্ষেপায় তোলে। মুলতঃ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র পদ হতে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে নামিয়ে দেয়া। তবে প্রকৃত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাহুলের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে সোচ্চার ও অনড় ছিলেন।
সূত্রে জানা যায়, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ’র ছাত্র রাহুল দেব রায় শুক্রবার (১৭জুন) ফেসবুকে ভারতের নুপুর শর্মা’র ছবি দিয়ে “প্রনাম নিও বস নুপুর শর্মা, জয় শ্রী রাম ” ক্যাপশন দেয়।
শনিবার (১৮জুন) সকালে তাকে কলেজে দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার বিশ্বাস তাৎক্ষনিক বিষয়টি উপস্থিত শিক্ষকদের জানান। এরপর স্থানীয় মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মুরসালিন, কলেজের জিবি’র সভাপতি অচিন চক্রবর্তী, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান,নড়াইল-১ আসনের সাংসদ কবিরুল হক মুক্তি সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানান।
মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মুরসালিন কলেজে গিয়ে রাহুলকে নিয়ে আসতে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মারমুখি হয়ে উঠেন এবং বাঁধা দেন। কিছু সময়ের মধ্যে নড়াইল সদর থানার ওসি শওকত কবির অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে সেখানে পৌছান। রাহুলকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম আরোও পুলিশ নিয়ে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে যান।
সাধারণ শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের বুঝিয়ে রাহুলকে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। আস্তে আস্তে লোকজন বাড়তে থাকে আর উত্তেজনা বাড়তে থাকে। আরোও অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় সেখানে যান। রাহুলের উপযুক্ত বিচার দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ওই এলাকার সাধারণ জনগন ও শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাহুল রায়কে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন।
নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় পরিস্থিতি শান্ত করার সর্বাত্তক চেষ্টা করেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় লোকজন যোগ দেয়ায় পুলিশের সাথে জনগনের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
হয়। পুলিশ লাঠি চার্জ করে। এমনকি ৬ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। এ সময় কলেজ চত্বর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
কয়েকজন পুলিশ, কলেজ ছাত্র ও সাধারণ মানুষ আহত হন। মারাতœক রক্তাক্ত জখম হন কলেজ’র বাংলা বিষয়ের শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ। বিক্ষুব্ধরা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন বিশ্বাস, শিক্ষক প্রশান্ত রায় ও শিক্ষক অরুন কুমার মন্ডলের মোটরসাইকেল ভাংচুর করে পুড়িয়ে দেয়। সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তান্ডব চলে। বিকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলে যান।
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার দু’জন মিলে উপযুক্ত বিচার দেয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে রাহুলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। ছাত্র রাহুলের বিরূদ্ধে আন্দোলন চলাকালে একটি কুচক্রী মহল তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরূদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে আন্দোলন ঘনিভুত করে।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র চেয়ার ও কলেজ’র ৫টি পদে কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে সক্রিয় থাকা ওই চক্র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র বিরূদ্ধে সুকৌশলে অপপ্রচার করে সাধারণ মানুষদের বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র চেয়ার দখল করার জন্য বেশ আগে থেকে ওই চক্র নানা ধরনের কুট কৌশল অবলম্বন করে আসছে। তারা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র চেয়ার দখল করে ৫জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
সুযোগ বুঝে নিরাপরাধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরূদ্ধে উস্কানী দিয়ে ছাত্র ও সাধারণ জনগন ক্ষিপ্ত করে তোলে। ইতোপূর্বে এ চক্র নানা ভাবে কলেজে নৈরাজ্য সৃষ্টি ও শান্তি নষ্ট করেছে। এ চক্রের নেতা রাজনৈতিক পদ ব্যবহার করে কলেজ সহ অত্র এলাকা অশান্ত করে তুলেছে। কলেজ ও রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার মত একাধিক ঘটনা ঘটালেও ওই খল নায়ক সব সময় ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছেন।
এদিকে রোববার (১৯জুন) সকালে নড়াইল-১ আসনের সাংসদ কবিরুল হক মুক্তি কলেজে গিয়ে শান্তি সভা করেন। সভায় কলেজের জিবি’র সভাপতি অচিন কুমার চক্রবর্তী অনাকাংখিত ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে সকলকে শান্তিপূর্ণ সহবস্থানে থাকার অনুরোধ জানান। সেই সাথে কলেজের শিক্ষকদের মোটরসাইকেল ভাংচুর করা ও পোড়ানো, শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা ও
মারপিটের ঘটনায় কোন মামলা করবেন না বলে জানান।
সাংসদ কবিরুল হক মুক্তি সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতী বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করেন। উপস্থিত সকলে শান্তিপূর্ণ সহবস্থানে থাকার প্রতিশ্রæতি দেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন না ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে। এলাকার সচেতন মহল মুসলমান ধর্মের উপর আঘাতকারি রাহুলের বিচার দাবি করার পাশাপাশি উস্কানী দিয়ে কলেজ এলাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টিকারি এবং নাশকতার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।
ইবাংলা / জেএন / ২২ জুন,২০২২