পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় আসতে শুরু করেছে মানুষ পদবম্ন দুই পাড় জনসমুদ্রে পরিণত হচ্ছে। শনিবার (২৫ জুন) সকালে মাওয়া প্রান্তে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে দিয়ে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবে দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল।
ভোর রাত থেকেই মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ভিড় জমিয়েছেন রাজধানী ও দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মানুষ। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে পুরো মাদারীপুর জেলায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
ভোর থেকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের অংশ ও বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে মিছিলে-স্লোগানে উজ্জীবিত নেতাকর্মীদের স্রোত জনসভাস্থলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। লাল-সবুজের টি-শার্ট ও মাথায় ক্যাপ পরে পায়ে হেঁটে বা পিকআপ ভ্যান, ট্রাক ও বাসযোগে বিভিন্ন সড়ক ধরে ঘাটের দিকে আসছেন নেতাকর্মীরা। মিছিলে বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা আছেন।
সেতুটির জমকালো উদ্বোধন উপলক্ষে সারা দেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বিশেষ করে সেতুটি দিয়ে যোগাযোগের সুবিধা পাওয়া দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষের মধ্যে বেশি উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। সেজন্য সেতু উদ্বোধনের দিন বিকালের সমাবেশে যোগ দিতে ভোর থেকেই হাজারো মানুষ ভিড় করছেন সমাবেশ এলাকায়। মিছিল নিয়ে দলে দলে মানুষ যোগ দিচ্ছেন সমাবেশস্থলে।
প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জনসভাস্থলের সভামঞ্চ পদ্মা সেতুর আদলে সাজানো হচ্ছে। থাকছে ছয় দিনব্যাপী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজন। আর এসব ঘিরে মানুষের মনে, বিশেষ করে পদ্মা পাড়ের মানুষের ঘরে বইছে উৎসব। ঘরে ঘরে যেন ঈদের আনন্দ বইছে।
পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত অনুষ্ঠানস্থলটি ১১টি পিলারের ওপর ১০টি স্প্যান বিশিষ্ট একটি প্রতীকী অস্থায়ী পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে জমকালোভাবে সাজানো হয়েছে। প্রতীকী সেতুর সামনে উদ্বোধনী মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। অস্থায়ী সেতুটি ২০০ ফুট লম্বা ও ৮ ফুট চওড়া। মঞ্চটি ১৫ ফুট লম্বা এবং ৪০ ফুট চওড়া। মঞ্চের সামনে একটি ৬০ ফুট লম্বা বিশালাকার নৌকা পানিতে ভাসছে। এ ছাড়া সেখানে বেশ কিছু ছোট নৌকাও রয়েছে। প্রায় ১৫ একর জায়গার ওপর ভেন্যু প্রস্তুত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠান মঞ্চ প্রাঙ্গণে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্য, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট এবং এসএসএফ সদস্যরা অনুষ্ঠানস্থলে কাজ করছেন।
এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিশাল সমাবেশে প্রায় ১০ লাখ মানুষ যোগ দেবে বলে জানিয়েছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক।
তথ্যমতে, বাংলাদেশের বুকে সবচেয়ে বড় অবকাঠামোর নাম পদ্মা সেতু। ছয় দশমিক পাঁচ কিলোমিটারের সেতুটি ঢাকা বিভাগের দুই জেলা মুন্সীগঞ্জ আর শরিয়তপুরকে সংযুক্ত করেছে। সেতুর ডাঙার অংশ যোগ করলে মোট দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার। স্টিল আর কংক্রিটের তৈরি দ্বিতল সেতুর ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক আর নিচে একক রেল পথ। উদ্বোধনের দিন থেকেই সেতুতে দৈনিক ১২ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
বিশ্বের খড়স্রোতা নদীর তালিকায় আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান। এমন খরস্রোতা নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। তাই সেতুকে টেকসই করতে নির্মাণের সময় বিশেষ প্রযুক্তির পাশাপাশি উচ্চমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়।
ইবাংলা/টিএইচকে/২৫ জুন,২০২২