সম্প্রতি ‘আন্ডার দ্য লায়ন রক’ নামে টিভি সিরিজ খুব দ্রুত দর্শকদের মন জয় করেছে এবং দর্শকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও পেয়েছে। এই টিভি সিরিজে দক্ষিণ চীনের হংকংয়ে ৪০ বছরব্যাপী পরিশ্রমের ইতিহাস তুলে ধরা হয়।
মেনল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী লিয়াং হুয়ান গত শতাব্দীর ৮০’র দশকে তার স্বামী লি গাও শানের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার জন্য মেয়ে লি ইউ হাউকে নিয়ে হংকংয়ে আসেন। কিন্তু লি গাও শান অপ্রত্যাশিতভাবে মারা যান। স্বামীকে হারানোর পর লিয়াং হুয়ান তার মৃত স্বামীর চায়ের রেস্তোরাঁটি নিজেই পরিচালনা করতে থাকেন। তিনি অদম্য ছিলেন, সৌভাগ্যবশত, লি গাও শানের প্রাক্তন বন্ধু লুও ই থোং এবং লাও জিনের সাহায্যে এবং চা রেস্তোরাঁর সব কর্মীদের সহায়তায় তারা সংগ্রাম করে প্রতিকূলতার মধ্যেও উন্নতি করেন এবং একই নৌকায় একে অপরকে সাহায্য করেন।
১৯৯৭ সালে যখন হংকং মাতৃভূমির কোলে ফিরে আসে, তখন লিয়াং হুয়ানসহ প্রধান চরিত্রের সন্তানরা বড় হয়ে ওঠেন এবং চাকরি শুরু করেন।
তাঁরা এশিয়ার আর্থিক সংকট, সার্স মহামারী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাবপ্রাইম মর্টগেজ সংকটের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ক্যারিয়ার, ভবিষ্যত ও আবেগের পছন্দের মুখোমুখি হয়ে তাঁরা এখনও একসাথে কঠোর পরিশ্রম করে এবং লায়নরকের চেতনা পালন করে। তাদের ব্যবসা হংকং-এ বিকশিত হয়েছে পরে তারা তাঁদের চা রেস্তোরাঁর ব্যবসাও মেনল্যান্ডে প্রসারিত করেন। তারা বিশ্বাস করে যে, যত দিন হংকং মাতৃভূমির সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং মাতৃভূমির দৃঢ় সমর্থনে হংকং অবশ্যই একটি উন্নত ভবিষ্যত সূচনা করবে।
এক কথায় বলা যায়, ‘আন্ডার দ্য লায়ন রক’ টিভি সিরিজে হংকংয়ের খুব সাধারণ একটি চা রেস্তোরাঁর ওপর ফোকাস করা হয়েছে।
তৃণমূল পর্যায়ে চা রেস্তোরাঁ বরাবরই হংকংবাসীদের পছন্দের স্থান। বিশেষ করে হংকংয়ের দ্রুতগতির জীবনে লোকেরা সেখানে গিয়ে এক কাপ দুধ চা পান করতে বা এক টুকরা পাউরুটি খেতে পছন্দ করেন। এভাবে জীবনের নানা চাপ দূর করেন তারা।
টিভি সিরিজে চা রেস্তোরাঁর সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যময় খাবার একের পর এক দর্শকদের সামনে হাজির হয়। যেমন লেবু চা, রোস্ট হাঁস এবং ডিমওয়াফেলস প্রভৃতি শতাধিক খাবার।
অনেক দর্শক বলেছেন, এ টিভি সিরিজটি সুগভীর হংকং স্টাইলে পরিপূর্ণ। এই সুগভীর হংকং স্টাইল কোথা থেকে এসেছে?
প্রথমত, এই টিভি সিরিজের অভিনেতা -অভিনেত্রীরা। তাঁরা দর্শকদের কাছে পরিচিত হংকংয়ের অভিনেতা -অভিনেত্রী।
দ্বিতীয়ত, এ টিভি সিরিজের নাম। লায়নরক হলো হংকংবাসীদের অপরিবর্তনীয় আধ্যাত্মিক চেতনা।ঔপনিবেশিক যুগে লায়নরকের ওপর এবং নীচ দুটি বিভিন্ন শ্রেণী এবং দুটি বিভিন্ন জীবন শৈলীর প্রতিনিধিত্ব করেছে।যারা লায়নরকের ওপরে বাস করতো তারা অধিকাংশই উপনিবেশকারী। লায়নরকের নীচে বাস করলে, তাঁরা খুব সাধারণ হংকংবাসী, তারাই হচ্ছেন হংকংয়ের সত্যিকার নির্মাতা।
তৃতীয়ত, টিভি সিরিজে গল্পের সময়টি ১৯৮৪ সাল বাছাই করা হয়। সেই বছরে চীন ও ব্রিটেন হংকংয়ের প্রত্যাবর্তনের চুক্তি স্বাক্ষর করে।
হংকংয়ের বিখ্যাত লেখক মা চিয়া হুই মনে করেন, হংকংয়ের সংস্কৃতি আসলেই চা রেস্তোরাঁ’র সংস্কৃতি। পশ্চিম নয়, পূর্ব নয়, তবে পূর্বের সঙ্গে পশ্চিমের মিশ্রণ। এখানে আপনি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার ক্ল্যাসিকাল সুস্বাদু খাবার খুঁজে পাবেন। সারা বছরে নতুন অনুভূতি পাবেন। এটিই মানুষের ওপর হংকংয়ের প্রভাব।
দিন দিন নতুন হচ্ছে এবং সবসময়ই সহনশীল। এখানে কখনওই একঘেয়ে বোধ করবেন না।যদি আপনি হংকংয়ের যে কোনো একটি চা রেস্তোরাঁ যান, আপনি আবিষ্কার করবেন যে, সেখানে সব ধরনের খাবার আছে। ইউরোপের স্প্যাগেটি থেকে চীনের ওয়াল্টন নুডলস ও হটপোট, আপনি একই রেস্তোরাঁয় পাবেন।
আসলে সবার আগে চা রেস্তোরাঁর ঠান্ডা পানীয় এবং স্যান্ডউইচ বিক্রি করা হতো। পশ্চিমা জীবন শৈলী জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে পশ্চিমা খাদ্যও ধাপে ধাপে হংকংবাসীদের জীবনে প্রবেশ করেছে।
তবে চা রেস্তোরাঁ দেখা দেওয়ার আগে পশ্চিমা খাদ্য সস্তা ছিলো না।
২০ শতাব্দীর ৪০’র দশকে চা রেস্তোরাঁ নামে এক ধরনের রেস্তোরাঁগুলো দেখা দেয়। সর্বপ্রথমে চা রেস্তোরাঁ ছিলো ঐতিহ্যবাহী ঠাণ্ডা পানীয় খাবার এবং পশ্চিমা খাদ্য সমন্বয়ের ফলাফল। ধীরে ধীরে বিভিন্ন জায়গার বৈশিষ্ট্যময় খাবার যুক্ত হয়েছে, সরবরাহ করা খাবারও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে। গত শতাব্দীর ৮০’র দশকে নানা রকমের চা রেস্তোরাঁ হংকংয়ের বড় ছোট রাস্তাঘাটে দেখা দেয়।
প্রতিবেশী বা বন্ধুরা এখানে আড্ডা দেন, চা রেস্তোরাঁর টিভিগুলো খেলা দেখার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান হয়ে ওঠে। চা রেস্তোরাঁ দিনে তিন বেলা খাবার সরবরাহ করে।
তাই চা রেস্তোরাঁ নিঃসন্দেহে হংকংবাসীদের অভিন্ন স্মৃতি এবং সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স হয়ে উঠেছে। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হংকং বেতার এক বার ইন্টারনেট কার্যক্রম সংগঠন করেছে। হংকংয়ের সেরা প্রতিনিধিত্ব করা ডিজাইন নির্বাচন করতে নেটিজেনদের ভোট দেওয়া হয়। ফলে চা রেস্তোরাঁ সবচেয়ে ভোট পেয়েছে।
ইবাংলা / জেএন / ০২ জুলাই,২০২২