সরকার সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম আরেক ধাপ অবিশ্বাস্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। প্রতি লিটার অকটেন ৪৬ টাকা, পেট্রোল ৪৪ টাকা আর ডিজেল দাম ৩৪ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন থেকে পেট্রোল ১৩০ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা আর ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা লিটারে ক্রয় করতে হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে নতুন এই দাম নির্ধারণের ঘোষণা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এক লাফে জ্বালানি তেলের দাম এত বৃদ্ধি কোন সরকার করেনি।
অর্থাৎ জ্বালানি তেলের দাম শতাংশে ডিলেজ ও কেরোসিন ৪২.৫ অকটেন ৫১.৬৮ আর পেট্রোলে ৫১.১৬ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
গত বছর নভেম্বরে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছিল তখন ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটার ১৫ টাকা বাড়ানো হয়। এতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে হয় ৮০ টাকা।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)-এ পরিশোধিত এবং আমদানি ক্রয়কৃত ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের মূল্য সমন্বয় করে ভোক্তা পর্যায়ে এই দাম পুনর্নির্ধারণ করা হলো।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার ২
গতকাল নতুন দাম ঘোষণার পর দেশব্যাপী জ্বালানি তেলের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে ক্রেতারা। পেট্রোল পাম্পগুলোতে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়।অনেক পাম্পের বিরুদ্ধে দুই ঘণ্টা বিক্রি বন্ধ রাখার অভিযোগও এসেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় আমজনতার স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। যতদিন সম্ভব ছিল ততদিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির চিন্তা করে নাই। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই কিছুটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করে থাকে। ভারত গত ২২ মে থেকে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২.৭৬ রুপি এবং পেট্রোল লিটার প্রতি ১০৬.০৩ রুপি নির্ধারণ করেছে যা এখন বিদ্যমান আছে। এই মূল্য বাংলাদেশি টাকায় যথাক্রমে ১১৪.০৯ টাকা এবং ১৩০.৪২ টাকা। মূল্য কম থাকায় তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকেও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করেছে মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন…চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে
জ্বালানি তেল ও সারের মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা ধরনের কর্মসূচি দিয়েছে এবং বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন,বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে তখন তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কৃষি, শিল্প, পরিবহন সহ সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়িয়ে দেবে আর সাধারণ নাগরিকের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে। দুর্নীতি ও লুটপাটের বোঝা জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দুর্বৃত্ত তোষণের রাজনীতি চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দুপুরে বিএনপির নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. নুরে আলম হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বারবার বাড়ানো হচ্ছে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ পানির মূল্য। এরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মানুষের প্রতি অত্যাচার শুরু করেছে। একের পর এক মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণ আজ দিশেহারা।’
আরও পড়ুন…গাজীপুরের সড়কে গণপরিবহন কম থাকায় ভোগান্তিতে যাত্রীরা!
রাজনৈতিক দল ও সংগঠন পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ভিতরে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাড়বে পণ্য পরিবহন খরচ ও যাত্রী ভাড়া। কৃষি ব্যয় বৃদ্ধি পাবে করণ সেচ খরচ বেড়ে যাবে আর সেচের ব্যয় বৃদ্ধিতে কৃষকের খরচ বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে খাদ্য দ্রব্য উৎপাদন ও খাদ্য পরিবহন বৃদ্ধির ফলে খাদ্যদ্রব্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাবে।
ইবাংলা/জেএন/৬ আগস্ট,২০২২