সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি ‘চিপ ও প্রযুক্তি বিলে’ স্বাক্ষর করেছেন। এতে মার্কিন মিডিয়া সম্প্রতি তাদের সন্দেহ প্রকাশ করেছে। ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ বলেছে যে, বিলটি উচ্চাভিলাষী, তবে বহু বছরেও এটি কার্যকর হবে না। ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড্যানজিম্যানের এক নিবন্ধ প্রকাশ করে বলেছেন, চিপ বিল একটি ‘ব্যায়বহুল বিল’ ও প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়।
বিলটি কেন এত ব্যাপক সন্দেহ জাগিয়েছে? কারণ বিলের বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য সরল নয়। এর ৩টি প্রধান বিষয়বস্তু রয়েছে; একটি হলো সেমি কন্ডাক্টর শিল্পে ৫২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে; দ্বিতীয়টি হলো শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রায় ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ দেওয়া হবে; তৃতীয়টি হলো ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিংসহ বিভিন্ন ফ্রন্টলাইন প্রযুক্তিকে সমর্থন দেওয়া হবে। এই বিষয়বস্তু থেকে বোঝা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্র ২৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি খারাপ চেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো কোম্পানিগুলিকে যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা নির্মাণে আকৃষ্ট করা, এবং যুক্তরাষ্ট্রে উন্নত চিপ উত্পাদন বজায় রাখা, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বজায় থাকে।
কিছু বিশ্লেষক এই বিলটিকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অফশোর শিল্পকে পুনসমর্থন করার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রচেষ্টা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তথ্য অনুসারে, ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর উত্পাদন শিল্পের শেয়ার ৩৭ শতাংশ ছিল এবং ২০২০ সালে তা ১২ শতাংশে নেমে আসে। যুক্তরাষ্ট্র জরুরি ভিত্তিতে এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে চেয়েছে।
আরও পড়ুন…আমার চেতনায় বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধু
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিল অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের ভর্তুকি পাওয়া কোম্পানিগুলিকে দশ বছরের মধ্যে চীন বা অন্যান্য দেশের সাথে, যা ‘যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ’, কোন ‘বড় লেনদেন’ করতে পারে না। এতে চীনকে সরাসরি নামকরণ করা হয়েছে- যা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত উদ্বেগ স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, চীনসহ কিছু দেশ সেমিকন্ডাক্টর উত্পাদন শিল্পে অগ্রগতি রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই বিলের উদ্দেশ্য হলো চীনসহ বিভিন্ন দেশের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করা, এবং চিপ উত্পাদন শিল্পে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী অবস্থান উন্নত করা।
যুক্তরাষ্ট্রের নিজের উন্নয়নের অধিকার আছে। তবে তাদের অন্যদের উন্নয়নে বাধা দেওয়া উচিত নয়। প্রথমে এই বিলটি শিল্পের উন্নয়নের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। মার্কিন কিছু লোক মনে করে যে তাদের এবং চিপ শিল্পের মধ্যে যে ব্যবধান শুধুমাত্র ভর্তুকি। এটি ভুল ধারণা। এর প্রধান কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্র সামগ্রিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার অবস্থানে নেই। গ্লোবাল চিপ বাজারের আউটপুট মূল্য ও লাভের তুলনা করে, মার্কিন সরকারের ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ভর্তুকি কোনোভাবেই আকর্ষণীয় নয়।‘চিপ এবং প্রযুক্তি বিল’ আশা করে যে, মিত্রদের চিপ উত্পাদনকারী সংস্থাগুলি যুক্তরাষ্ট্রে উত্পাদন করে চিপ সরবরাহ করবে, কিন্তু এর ফল হলো যুক্তরাষ্ট্রের নিজের মিত্রদের কোম্পানিগুলিকে প্রথমে হুমকিতে ফেলেছে।
বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধারণা করছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে প্রযুক্তির মাধ্যমে দমনের নীতি গ্রহণ করে, এটি স্বল্পমেয়াদে চীনের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পপ্রতিষ্ঠান আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটি প্রত্যাশিত যে, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানের ১৮ শতাংশ গ্লোবাল বাজারের শেয়ার হারাবে এবং ১৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার উচ্চ দক্ষতার চাকরি হ্রাস করবে।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বাজারের নিয়ম লঙ্ঘন করবে এবং প্রযুক্তিগত অবরোধ উন্নয়নের সাধারণ প্রবণতার বিরুদ্ধে যায়। সময় প্রমাণ করবে যে, যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিযোগীদের জন্য, বিশ্বে চিপ শিল্প সরবরাহের চেইনের জন্য এবং বিশ্বের চিপ বাজারে যে বাধা দিচ্ছে, তা শেষ পর্যন্ত নিজের ক্ষতি করবে।
সূত্র: জিনিয়া,সিএমজি!
ইবাংলা/জেএন/১৩ আগস্ট,২০২২