ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েট) বিশেষজ্ঞরা রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার পড়ে পাঁচজনের মৃত্যুর বিষয়টিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ‘চরম অবহেলা’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন ।তারা বলেন, নির্মাণ কাজের যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল, তা নেওয়া হয়নি।
নির্মাণাধীন এলাকায় যান চলাচলের যে বিধান রয়েছে তাও অনুসরণ করেননি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।বিআরটি প্রকল্পে অতীতে দুর্ঘটনা ঘটলেও সেগুলো থেকে শিক্ষা না নেওয়ায় এমনটা হচ্ছে। তবে বিআরটি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরে প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনের রাস্তায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার একটি প্রাইভেট কারের উপর পড়ে যায়। এতে গাড়িতে থাকা পাঁচজনই মারা যান।
আরও পড়ুন…উত্তরায় ভায়াডাক্ট পড়ে দু’ই শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু
দুর্ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, প্রথমে বলব এটা স্রেফ চরম অবহেলা।কনস্ট্রাকশন প্রাকটিসের যে ন্যূনতম গ্রামার থাকার কথা, তা কিছুই মানা হয়নি। গ্রামারটি হলো-নির্মাণ কাজ দিনে বা রাতে হোক অবশ্যই নিরপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে হবে।
বেষ্টনী তৈরির পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকবল থাকবে দুইপাশে। তারা সেখানে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবেন; যেন কোনো কারণে যানবাহন বা মানুষ নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ঢুকে না পড়ে। অতীত থেকে শিক্ষা না নেওয়ায় প্রাণহানি ঘটেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অতীতেও বিআরটি প্রজেক্টে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমরা তা থেকে শিক্ষা নিইনি।
আরও পড়ুন…হাবিপ্রবিতে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীযের মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালিত
এ ধরনের ঘটনা ঘটার পরে আইনের আওতায় এনে দোষীদের শাস্তি দেওয়া ও জবাবদিহিতার ব্যাপক ঘাটতি আছে। দোষীদের দায় মুক্তি দেওয়ার ফলে এই সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।হাদিউজ্জামান বলেন, এ ধরনের কাজে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ও সেফটি নিশ্চিত করার জন্য বড় অঙ্কের টাকা বরাদ্দ থাকে। সেই টাকা নেয় কিন্তু কাজে তা ব্যয় করে না।
কনসালটেন্টও সঠিকভাবে কাজ মনিটরিং করছে না। তিনি বলেন, এ দুর্ঘটনায় দুটি বিষয় তদন্ত করে দেখতে হবে। এক, গার্ডারের ওজন এবং ক্রেনের যে সক্ষমতা সেখানে ভারসাম্য ছিল কি না।দুই, ক্রেন যিনি অপারেট করছিলেন, তার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং লাইসেন্সটি সঠিক কি না। কারণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সব সময় একটা প্রবণতা থাকে অদক্ষ অপারেটর দিয়ে কাজ করানোর।
আরও পড়ুন…ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে জাতীয় শোক দিবস পালন
এতে টাকা কম লাগে। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, সুপারভিশন কনসালটেন্ট এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার সমন্বয়হীনতা রয়েছে বলে আমি মনে করি।বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমানও প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, এটাকে আমরা দুর্ঘটনাই বলব। তবে অবহেলার জন্য দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এখানে সেফটি রুলস মানা হয়নি।এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিআরটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, নির্মাণ কাজ যেখানে করা হচ্ছে সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনী রয়েছে।গার্ডার যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে গার্ডারটি নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে পড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নির্মাণ কাজের নিরাপত্তা বা ব্যাক্তি গাফিলতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাফিলতি থাকার কথা নয়।
আরও পড়ুন…বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে জয় বাংলা সাংস্কৃতিক পরিষদের শ্রদ্ধা
প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, কারিগরি ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। সেখানে ব্যক্তিগত কারও দায় থাকলেও তা উঠে আসবে।
ইবাংলা/তরা/১৬ আগস্ট,২০২২