অডিট ভবনে প্রশাসনিক ১-এর আদেশ উপেক্ষা করে পদোন্নতি

আমিনুল ইসলাম

অডিট ভবনে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় করে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, পিএসসির শর্ত ভঙ্গ ও প্রশাসনের ট্রাইব্যুনাল কোর্টের স্ট্যাটাসকোর আদেশ অমান্য করে পদোন্নতি প্রদান । সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম দুর্নীতি ও খামখেয়ালী কর্মকাণ্ডকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। সংবাদ প্রকাশের পর অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় দপ্তরের অধিভুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

তারা দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দাবি করেছেন।ইতিপূর্বে এসব বিষয়ে বিস্তারিত সংবাদ অনলাইন নিউজ পোর্টাল ই- বাংলা ডট প্রেস এ প্রকাশ হলে। নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধান কর্তা ব্যক্তিরা। অন্যদিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে ২৬ জনকে বাদ দেয় তাদের অনেকেই খুব প্রকাশ করেছেন। বলেছেন অনৈতিক সুবিধা দিতে পারিনি বলেই আমাদের বাদ দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, কম্পটোরাল অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মাহবুবুল হক এর অনুমোদনক্রমে এসএ এস/এসআরএস দ্বিতীয় পর্ব পরীক্ষা ২০১৯ এ ৫৭৪ উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া সরকারি হিসাব ব্যবস্থা ও বাণিজ্যিক হিসেবের সমন্বয়ে ধারণা বিষয়ে ৯৩ জন ও উক্ত হিসাববিধি ও পদ্ধতি বিষয়ে ২১৯ জন, রাজস্ব ট্রাফিক ভান্ডার ও কারখানা হিসাব বিষয়ে ১৫৮ জন পরীক্ষার্থীকে বিষয়ভিত্তিক অব্যাহতি প্রদান করা হয়।

তথ্য বলছেমোঃ শরিফুল ইসলাম মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং এস এম মাহমুদুল হাসান সহকারী মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত চিঠি ইস্যু করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে আদালতের দুটি আদেশ অমান্য করে যে কাজ করেছে তা প্রশাসনের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। একটি সূত্র জানান ২০১৯ ব্যাচের ঝামেলা শেষ না হলে 2020 তম ব্যাচ সুবিধা বঞ্চিত হবে। সুতরাং অতি দ্রুত ২০১৯ তম ব্যাচের প্রশাসনিক ঝামেলা নিষ্পত্তি প্রয়োজন।

আরও পড়ুন…পিএসসির শর্ত ভঙ্গ ও ট্রাইব্যুনালের আদেশ অমান্য করে পদোন্নতি

সূত্র বলছে, কম্পট্টরাল জেনারেল মাহবুবুল হকের এপিএস-২ রফিকুল ইসলাম রফিক সকালে অডিট ভবনে অফিস করেন। বিকেলে এসএফসি নেভি অফিসে বসেন। সেখানে চেক ইস্যুর মাধ্যমে অবৈধ অর্থ আয় করেন, যা সরকারি অফিস আইন সম্মত নয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কম্পটরাল জেনারেল মাহবুবুল হকের সমস্ত কাজ এপিএস রফিকুল ইসলাম রফিক করে থাকেন।

একই সাথে রফিক ভবনের প্রভাব বিস্তার করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যম হাতিয়ে নেয় বিপুল অর্থ।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একই পরীক্ষার রেজাল্ট তিনবার ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৯ সালে এসএএস পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। প্রথমবার ফলাফল প্রকাশ করে ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর। সেই পরীক্ষায় পাশ দেখানো হয় ৫৭৪ জনকে।

একই পরীক্ষার ৯ মাস পর দ্বিতীয়বার ফলাফল প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর সকালে। এ পর্যায়ে উত্তীর্ণ করা হয়েছে ৫৫০ জনকে এবং একই দিন বিকেলে তৃতীয়বার ফলাফল প্রকাশ করে এতে পাস করানো হয় ৫৪৮ জনকে। এসব হঠকারী সিদ্ধান্তে ঘুষ দুর্নীতি ও অনিয়ম জড়িত বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন…ধর্মঘটের কারনে খাদ্যসংকটে চা শ্রমিকরা…
সূত্র জানায়, পিএসসির ক্লিয়ারেন্স এর শর্ত প্রতিফলন না করেই পদোন্নতি প্রদান! অনুসন্ধানে জানা যায়, সিএজি অফিস উপরে উল্লেখিত পরীক্ষার বিগত ৬-৯-২০২০ তারিখের বিকেলে তৃতীয় ফলাফলের ভিত্তিতে পিএসসি থেকে সুপারদের ক্লিয়ারেন্স প্রদান করেন।

পিএসসির ৯/১২/ ২০২০ তারিখের ক্লিয়ারেন্সপত্রে তিন নাম্বার কলামে শর্ত সুস্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যে, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আদালতে কোন মামলা পদ সংরক্ষণ আদেশ বিভাগীয় মামলা হয়ে থাকলে তা নিষ্পত্তি বা এত সংক্রান্ত সকল আদেশ প্রতিপালন সাপেক্ষে পদোন্নতির সুপারিশ কার্যকর করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

আরও পড়ুন…বঙ্গোপসাগরে ১১ ট্রলারডুবি,৩৪ জেলে নিখোঁজ

অথচ তৃতীয় রেজাল্টে যে ২৬ জনকে ফেল করানো হয় তারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় রেজাল্ট বাতিল চেয়ে আদালতে রিট করেন। আদালত উক্ত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় রেজাল্ট বাতিল করে প্রথম রেজাল্ট বহাল রাখেন। প্রথম রেজাল্ট বহাল রাখলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় রেজাল্ট বাতিল হয় এবং সেই সাথে তৃতীয় রেজাল্টের ভিত্তিতে পিএসসি থেকে আনা ক্লিয়ারেন্সও বাতিল হিসেবে গণ্য হয়।

পিএসসির ক্লিয়ারেন্স বাতিল হলে তাদের প্রাপ্ত সুপারপদ নিয়মিত করণীয় বাতিল হবে। অর্থাৎ ৯ -১২- ২০১৯ তারিখের রেজাল্ট এর প্রেক্ষিতে তাদের পুনরায় ক্লিয়ারেন্স না হওয়া পর্যন্ত সুপার পদে রেগুলার হওয়ার কোন নিয়ম নেই। সুতরাং সুপার পদে রেগুলার না হইলে এএন্ডএও পদে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য নয়। দ্বিতীয় শ্রেণি চার্জে থেকে প্রথম শ্রেণীর চার্জে দেওয়ার বিধান নাই।

আরও পড়ুন…নবগঠিত ডাসার উপজেলা পরিষদ পরিদর্শনে এমপি গোলাপ
এখানে উল্লেখ্য যে ৯/১২/২০২০ তারিখে পদোন্নতি ক্লিয়ারেন্স হয়। এবং মামলা হয়েছে ৩-১২/২০১৯ তারিখে। উক্ত মামলার রায় হয়েছে ৮-১২/২০১৯ তারিখে। এক্ষেত্রে তথ্য উপাত্ত প্রমাণ করে যে, সিএন্ডএজি অফিস মামলার রায়ের কপি গ্রহণ করেন ১৫/১২/২০২০ তারিখে।
তারপরেও ১৭-১২ ২০২০ তারিখে সকল নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে সুপার পদে ১২ হাজার ৫০০ টাকা স্কেল থেকে ১৬ হাজার টাকার স্কেলে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে।

যা নিয়ম-নীতি ও সর্বোপরি আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে দুর্নীতি এবং অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে করা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি সাধন করা হয়েছে।এখানে উল্লেখ্য যে, পিএসসির শর্ত অমান্য এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও অদৃশ্য কারণে সকল শর্ত উপেক্ষা করে ৪৮০ জনকে পদোন্নতি দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন করা হয়েছ ।

আরও পড়ুন…কেরানীগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরীর ফ্যাক্টরিতে আগুন

তথ্যসূত্র বলে, পদোন্নতি বঞ্চিতদের মধ্যে কয়েকজন বাদী হয়ে বিগত ১৭-১২-২০২০ তারিখের পদোন্নতির কার্যক্রম বাতিল ও স্থগিত চেয়ে পুনরায় মামলা করে এবং আদালত সকল কার্যক্রম স্থগিত করে ১৮/ ৫ /২০২২ তারিখে। উক্ত মামলা নম্বর ০৫/ ২০২২ রায় প্রদান করেন।জানা গেছে, পিএসসি শর্ত এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও দুর্নীতির মাধ্যমে আবারো পদোন্নতি প্রদান।

বিজ্ঞ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরেও তাদের এএন্ডএও পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য ২৯১ জনের ডিপিসি করেন। বিগত ১৮-০৫-২০২২ তারিখের স্ট্যাটাসকোর আদেশ ২৩-৫-২০২২ তারিখে সিএসসি অফিস গ্রহণ করার পরও বিধি বহির্ভূতভাবে এএন্ডএও পদে ২৩-৬-২০২২ তারিখে ১০০ জনের পোস্টিং করা হয়েছে, যা আদালত অবমাননা এবং দেশের প্রচলিত আইনকে অসম্মান করার শামিল।

আরও পড়ুন…বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ‘বাঙ্গালী সাংস্কৃতিক বন্ধনের‘ শ্রদ্ধা

অতিরিক্ত উপ মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক ( প্রশাসন ) এ কে এম হাছিবুর রহমান স্বাক্ষরিত পোস্টিং অর্ডার দেয়া হয়। এসব বিষয়ে এডমিন হাছিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কিছুই জানেন না বলে এ প্রতিবেদককে জানান।

তিনি আরো বলেন, পুরো বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখা জানেন। আপনারা চাইলে সেখান থেকে তথ্য নিতে পারেন। এসব বিষয়ে অডিট ভবনের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উক্ত ঘটনায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠানের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্য করা হয়েছে।

ইবাংলা/তরা/২০ আগস্ট ২০২২

পদোন্নতি প্রদান