একবার কলকাতার একটি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার পাশে বসে থাকা একজন লোক আমাকে বললেন, দাদা আপনি কবে এসেছেন? আমি বললাম, আমি কবে এসেছি মানে? আপনি কী আমাকে চেনেন?
তিনি বললেন আরে দাদা, আপনি তো আমাদের লোক। আপনি যে ছবি বানিয়েছেন তাতে তো আমার সংসারে শান্তি ফিরে এসেছে। এমন ছবি মাঝে মাঝে আরও বানাবেন। এই কথাগুলো শুনলে মনটা খুশিতে ভরে যায়। দুই বাংলাতেই এমন ভালোবাসা পাই।
আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান
আমার কাছে রংবাজের ৩ পৃষ্ঠার একটি গল্প ছিল, সত্য ঘটনার গল্প। ছবিটি করার আগে আমার থিয়েটারের এক বন্ধুকে ডেকে স্ক্রিপ্ট করতে বললাম। ও বললো, বন্ধু এটা চলবে না। বললাম, কেনো? ও বলবো, তুমি মারামরি করছো, মদ খাচ্ছো? এটা এদেশে রূপ নেবে না। আমি বললাম, ধুর! রাখ তো।
শুটিং দেখে তো কামাল সাহেব আঁতকে উঠলেন। বললেন, তুমি এটা কী করছো? মদ খাচ্ছো, হাতে ছুরি, বাঈজি বাড়ি যাচ্ছো। এটা কিন্তু দর্শকরা গ্রহণ করবে না। আমি বললাম, দেখা যাক। এরপর তো ছবিটি মুক্তির পর দারুণ হিট হলো।আমাদের সময় কাজ নিয়ে প্রতিযোগিতা হতো। আমি, ফারুক, পারভেজ, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, উজ্জ্বলকে এনেছি।
এমনও হয়েছে ওরা হিরোর চরিত্র করছে, আমি সাইড ক্যারেক্টার করছি। এতে আমার লাভ হলো আমি বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে কাজ করছি, ওদের ছবিও হিট হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিও বসে গেল না। আমি সব সময়ই চেষ্টা করেছি নতুন আর্টিস্ট তুলে আনার। নতুন অনেক নায়িকাকেও আমি সুযোগ দিয়েছি। এমনকি সাবানা তখন উর্দু ছবি করতো। বাংলা ছবিতে তাকে কেউ নিতে চাইতো না। আমিই জোর করে তাকে বাংলা ছবিতে নিয়েছি।
আরও পড়ুন…পিএসসির শর্ত ভঙ্গ ও ট্রাইব্যুনালের আদেশ অমান্য করে পদোন্নতি
জহির ভাইয়ের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলেন এস এম পারভেজ। তার সঙ্গে আমারও অদ্ভুত এক সম্পর্ক ছিল। আমার শুটিং না থাকলে জহির ভাই গাড়ি নিয়ে আমার এখানে চলে আসতেন। আমরা গল্প করতে করতে আরিচা পর্যন্ত চলে যেতাম।
একদিন জহির ভাইকে বললাম, আপনার নামে এত কেলেঙ্কারি হচ্ছে, পারভেজ সাহেব তো আপনার বন্ধু। আপনি না করতে পারেন না? তিনি বললেন, রাজ্জাক, যেদিন এই লেখালেখি বন্ধ হবে সেদিন সেই ব্যক্তি জিরো! আমি বললাম, মানে?
তিনি বললেন, যতদিন আপনাকে নিয়ে লেখালেখি হবে ততদিন আমি ভ্যালিড। আর লেখালেখি বন্ধ হলে মনে করবেন আপনি শেষ! আপনার সুনাম থাকলে বদনাম হবেই।
আরও পড়ুন…রক্তস্নাত আগস্টের আরেকটি রক্তস্নাত দিন আজ…
কারণ শুধু সুনাম দিয়ে পৃথিবী চলতে পারে না। কী চমৎকার কথা! আমার সারাজীবন কথাটি মনে থাকবে। একদিন খামাখা আমাদের মাঝে ঝগড়া হলো। কেউ একজন তাকে বলেছিল, আমি নাকি শবনমকে পাকিস্তান থেকে আসতে দিচ্ছি না।
এমনকি সাবানা, চম্পা, ববিতার চামচামো করছি। শুনে আমি বললাম, কী বাজে কথা বলছেন আপনি? এ নিয়েই ঝগড়া শুরু হলো। আমাদের সময় সাংবাদিকরাও আমাদের এবং সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে ভালোবাসতেন। ভালো সিনেমা হলে ধুমধাম লিখে ফেলতেন। তবে আমার আর কবরীর প্রেম ধরার জন্য অনেক চেষ্টাই করেছেন।
কিন্তু কেউ রেকর্ড করতে পারেনি। কারণ আমাদের প্রেম তো ওপেন ছিল! আমরা কখনও গোপনে ডেটিং করতে যাইনি। শুটিংয়ে খুনসুটি করলে তো কারও কিছু মনে করা থাকে না। তবে সবাই জানতো আমরা খুব ভালো বন্ধু এবং ভাবতো আমরা হয়তো গোপনে প্রেম করছি। কিন্তু আমাদের তখন চিন্তা ছিল কীভাবে ভালো কিছু ছবি উপহার দেওয়া যায়।
ইবাংলা/তরা/২১ আগস্ট ২০২২