চীনারা তরমুজকে কতটা ভালবাসে এবং কীভাবে তরমুজ চাষ করে? ২০২০ সালে চীনে তরমুজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯শ টন। তা বিশ্বের তরমুজ উৎপাদনের মোট পরিমাণের ৫৯.২৯ শতাংশ। ফলে চীন তরমুজ উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে।এখানে দেখা যায়, দ্বিতীয় থেকে দশম স্থানে থাকা দেশগুলোর তরমুজ উৎপাদনের পরিমাণ যোগ করলে চীনের উৎপাদন পরিমাণের মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ হয়। কারণ চীন একাই বিশ্বের ৬০ শতাংশ তরমুজ উৎপাদন করে। তবে, ২০২০ সালে চীন ৯৭ হাজার টন তরমুজ আমদানি করে। আর একই বছর চীনের তরমুজ রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৪৪ হাজার টন। এ থেকে বোঝা যায়, চীনারা কত বেশি তরমুজ খায়।যদিও চীনের তরমুজ চাষের ইতিহাস খুবই পুরনো। তবে, অতীতে চাষের জমির আয়তন খুব বেশি ছিল না। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার সময় চীনে তরমুজ চাষের জমির আয়তন ৬৭ হাজার হেক্টরের কম ছিল। তখন কেবল দক্ষিণ চীনের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় তরমুজ চাষ হত। তখন তরমুজেরমান ও উৎপাদনের পরিমাণ ভাল ছিল না এবং কেবল গ্রীষ্মকালে তরমুজ পাওয়া যেত।
গত শতাব্দীর ৭০-এর দশক থেকে কৃষি-জমির জল সংরক্ষণ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি, সূক্ষ্ম জাতের প্রবর্তন, প্রজনন এবং প্রচারের পাশাপাশি উন্নত সার ও উদ্ভিদ প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করার মাধ্যমে চীনে তরমুজের ফলনের স্তর এবং গুণগত মান একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে উন্নত হয়েছে। তারপর ৮০-এর দশকে তরমুজ চাষ চীনে দ্রুত বাড়তে থাকে। রসালো এ ফলের প্রজাতিও বাড়তে থাকে। ভাল প্রজাতির তরমুজ সারা চীনে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
৯০-এর দশকে তরমুজ উৎপাদনের পরিমাণ ৮৩ শতাংশ বেড়েছে। চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে বিংশ শতাব্দীর ৯০-এর দশকে তরমুজ চাষের জমির আয়তন স্থিতিশীল হয় এবং সারা বছর চাষ সম্ভব হয়। গ্রীনহাউসে তরমুজ চাষও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তখন থেকে চীনারা বছরের যে কোন সময়ে তরমুজ খেতে পারছে।
একবিংশ শতাব্দীতে ফলের রাজা থেকে স্বাস্থ্যকর ফলে পরিণত হয় তরমুজ। বড় তরমুজের তুলনায় লোকজন মাঝারি ও ছোট আকারের তরমুজে বেশি পছন্দ করে। পাশাপাশি, জৈব তরমুজ, সবুজ খাবার তরমুজও জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
আরও পড়ুন………তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান
আজকাল চীনের তরমুজ শিল্পের সমৃদ্ধিতে সরকারের সমর্থন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিনিয়োগ বড় অবদান রাখছে। বিংশ শতাব্দীর ৯০-এর দশকের শেষ দিক থেকে চীন তরমুজ গবেষণা ও উত্পাদন উন্নয়নের উপর বেশ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ২০০৬ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে প্রতিষ্ঠিত হয় চীনা জাতীয় তরমুজ ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি রিসার্চ সেন্টার এবং ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় তরমুজ শিল্প প্রযুক্তি ব্যবস্থা।
প্রযুক্তির সাহায্যে এখন মানুষের চাহিদা অনুযায়ী, বিভিন্ন ধরনের তরমুজ চাষ হচ্ছে। যেমন: অনেকে তরমুজের বীজ পছন্দ করেন না; তাই বিজ্ঞানীরা বীজহীন তরমুজ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। গত শতাব্দীর ৮০-এর দশকে প্রতি বছর চীন বিদেশে ৩০ হাজার টন বীজহীন তরমুজ রপ্তানি করত। কেউ কেউও আবার বীজসহ তরমুজ খেতে পছন্দ করেন। তাদের চাহিদা পূরণে বেশি বীজের তরমুজের গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তরমুজের খালি বীজও খাওয়া যায়। মিষ্টি তরমুজ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত নয়, তাই তাদের জন্য বিশেষভাবে স্বল্প মিষ্টির তরমুজও আছে।
প্রযুক্তির উন্নয়নের সাহায্যে চীনারা এখন সারা বছর তরমুজ খেতে পারে এবং নিজের পছন্দ অনুযায়ী বড় বা ছোট, মিষ্টি বা হালকা মিষ্টি, বীজহীন বা বেশি বীজের নানা ধরনের তরমুজ খেতে পারে। আমরা তাকে তরমুজ খাওয়ার স্বাধীনতা বলে ডাকি। আর ভবিষ্যতে তরমুজ শিল্পেরও রয়েছে অপার সম্ভাবনা। সূত্র:সিএমজি।
ইবাংলা/ মশিউর/২৯ জুলাই,২০২২