মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রান্তিক, সুবিধাবঞ্চিত ও তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ (আইজিএ) প্রকল্প। ৬০ দিনের এই প্রকল্প শেষে প্রত্যেক প্রশিক্ষনার্থী নারী ১২ হাজার টাকা পাবার কথা।
দৈনিক হারে তারা পাবে ২’শ টাকা করে ভাতা। তবে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় পৃথক দুটি ব্যাচের ৫০ জন নারী পেয়েছেন ৫৪ দিনের ভাতা। বাকি ছয় দিনের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিরঞ্জন কুমারের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন…দেশে তেলের মূল্য হ্রাসের সম্ভাবনা
এ নিয়ে গত ১১ আগষ্ট উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে পুরো টাকা পাবার দাবিতে আন্দোলন করে পৃথক দুটি ট্রেডের ৫০ জন প্রশিক্ষনার্থী। ঘন্টা ব্যাপী চলে তুমুল বাকবিতন্ডা।
তাদের অভিযোগ, তারা ৬০ দিন উপস্থিত ছিলেন। হাজিরা খাতাতেও তাদের ৬০ দিনের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তবে টাকা দেওয়ার সময় তাদেরকে উপস্থিতির উপর সর্বমোট ৫৪ দিনের ভাতার চেক প্রদান করেছে কতৃপক্ষ। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রæতিতে ফিরে যান আন্দোলনকারী নারীরা।
এর আগেও এই প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া প্রশিক্ষকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকা এবং ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নিয়মিত বেতন উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছিল।
আরও পড়ুন…দুর্ঘটনায় নারীসহ ৩ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু
প্রকল্পের নীতিমালা বলছে, সারা দেশে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। তারা পৃথক ১১টি ট্রেডে মহিলাদেরকে প্রশিক্ষণ দিবে। উপজেলা পর্যায়ে তিন মাস পরপর দুটি করে ট্রেডে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাবে তারা। প্রতিটি ট্রেডে ২৫ জন নারী প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পাবে। প্রশিক্ষণ শেষে দৈনিক ২০০ টাকা হারে উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে তাদের ভাতা প্রদান করা হবে।
এদিকে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ঘোড়াঘাট উপজেলায় ফ্যাশন ডিজাইন এবং ক্রিস্টাল শো পিচ ট্রেডে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান আছে। এসব ট্রেডের ১৪ ও ১৫ তম ব্যাচের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সমাপ্তি হয়েছে। তবে ৬০ দিনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের জায়গায়, এই দুটি ব্যাচের প্রশিক্ষনার্থীদের ৫৪ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি অভিযুক্ত উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিরঞ্জন কুমারের।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরুর আগে আমরা আগ্রহী মহিলাদের কাছে আবেদন আহŸান করি। এসব আবেদনপত্র যাচাই বাছাই শেষে চুড়ান্ত তালিকা করা হয়। তবে ১৪ ও ১৫ তম ব্যাচের চুড়ান্ত তালিকায় কিছুটা ত্রæটি ছিল। সেখানে অনেক স্বচ্ছল নারী এবং ইতিপূর্বেও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এমন মহিলাদের নামও ছিল। তাদের অনেকে তথ্য গোপন করে আবেদন করেছিল।
তিনি আরো বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আসায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সিন্ধান্তে চুড়ান্ত তালিকাটি পুণঃরায় যাচাই বাছাই করার কারণে আমাদের কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়েছে। তাই এই দুটি ব্যাচের প্রশিক্ষনার্থীদের ৬০ দিনের পরিবর্তে ৫৪ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
১৫ তম ব্যাচের প্রশিক্ষণ নেওয়া আশা বেগম বলেন, আমি ৩ দিন অনুপস্থিত ছিলাম। ৫৪ দিনের হিসেবে আমাকে ৫০ দিনের ভাতা দেওয়া হয়েছে। আমার আরো ৬ দিনে টাকা তারা আত্মসাৎ করেছে। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমাকে বলেছে আপনাদের ছয় দিনের টাকা সরকারের ফান্ডে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান
আজমিনা আক্তার বলেন, আমি ৬০ দিনই উপস্থিত ছিলাম। হাজিরা খাতায় আমরা ৬০ দিনই স্বাক্ষর করেছি। এর মাঝে বেশ কয়েকদিন সাদা পাতাতে আমাদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে টাকা দেওয়ার সময় আমাকে ৫৪ দিনের হিসেবে ১০ হাজার ৮০০ টাকার চেক দিয়েছে তারা।
এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কমিটির সভাপতি রাফিউল আলম বলেন, তারা আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছিল।
তবে তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাদের কোন টাকা কেও আত্মসাৎ করেনি। তাদেরকে ৫৪ দিনের হিসেবে ভাতার চেক দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে এই সংশ্লিষ্ট সকল বৈধ কাগজপত্র আছে।এতে করে প্রশ্ন উঠেছে ৬০ দিনের প্রকল্প ৫৪ দিনে শেষ করা নিয়েও।
ইবাংলা/জেএন/২৯ আগস্ট ২০২২