আমরা মুসার চরের মানুষ আর কতদিন নদীর পানি খামো

ডেস্ক রিপোর্ট

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদে জেগে ওঠা একটি চরের নাম ‘মুসার চর’। চরটি জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। চরে ৪০টি পরিবারের প্রায় তিনশ মানুষের বসবাস। খাবার পানিসহ ব্যবহারিক কাজে চাহিদা মেটাতে আছে মাত্র পাঁচটি নলকূপ। ফলে পরিবারগুলো সারা বছরই থাকে বিশুদ্ধ পানির সংকটে। টিউবওয়েল বসানোর সামর্থ্য না থাকায় সারা বছর তারা নদীর পানি পান করেন। এতে প্রায়ই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা।

আরও পড়ুন…নব-নির্বাচিত সভাপতি রিক্তাকে দলীয় অভিনন্দন ও ফুলেল শুভেচ্ছা

কথা হয় মুসার চরের ইউপি সদস্য আবু বক্কর খাঁনের সঙ্গে। ‘বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত ওয়ার্ড মুসার চর। এখানকার মানুষজনের দুঃখ-কষ্টের সীমা নেই। আয় থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান—সবদিক দিয়ে পিছিয়ে আছে এখানকার বাসিন্দারা। এই চরবাসীর পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানসহ সবার এগিয়ে আসা উচিত।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্রের বুকে দ্বীপের মতো দাঁড়িয়ে আছে মুসার চরটি। এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। লোকালয় থেকে প্রায় এক ঘণ্টার নদীপথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় এই চরে। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র। নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়েছেন। তাদের আয়ের একমাত্র উৎস মাছ ধরা। কেউবা গরু-ছাগল পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

১০ বছর আগে মূল চরটি নদীভাঙনে বিছিন্ন হয়ে যায়। যাদের সামর্থ্য ছিল তারা পাড়ি জমিয়েছেন শহরে কিংবা নিরাপদ কোনো লোকালয়ে। যাদের বাইরে যাওয়ার সামর্থ্য নেই তারা পড়ে আছেন এই চরে।

আরও পড়ুন…ঢাকায় ৪ স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হচ্ছে বাস

মতিয়ার রহমান নামের একজন বলেন, ‘নলকূপ সংকটের কারণে আমাদের অনেক সময় নদীর পানি খেতে হয়। এতে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। জ্বর-কাশি সারা বছর লেগেই থাকে। শুনি প্রতি বছর সরকার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে নলকূপ দেয়। আমরা আজ পর্যন্ত নলকূপতো দূরের কথা, একটা বিশুদ্ধ পানির বোতলও পাইলাম না।’

চরের বাসিন্দা লালবানু বেওয়া বলেন, ‘চারপাহে (চারপাশে) পানি আর পানি কিন্তু ভালা (ভালো) পানি নাই। গোডায় বছর (সারা বছর) হামরা (আমরা) ভাল পানি পাইয়ে না (সংকটে ভুগি)। এই চরে সরকার একটা টিউবওয়েল দেই না। হামরা (আমরা) গরিব মানুষ টিউবওয়েল পামো কোন্টে (পাব কোথায়)? বন্যা হলে নদীর পানি এমন ঘোলা হয় খাওয়া যায় না (পান সম্ভব হয় না)। তিনবেলা খাবার জোটাতে পারি না, নলকূপ দেয়ার টাকা পাবো কই? মুসার চরের মানুষ আর কতদিন নদীর পানি খামো (খাবো)?’

বাসিন্দা রেজিয়া খাতুন বলেন, ‘পাশের বাড়িতে নলকূপ আছে। সবসময় ওদের ওখানে গেলে ওরা অনেক সময় বিরক্ত হয়। আমরা বউ-ঝি মানুষ। পানির জন্য আমাদের নদীর পাড়ে যেতে হয়। আমাদের লজ্জা করে। বাড়িতে একটা নলকূপ থাকলে খুবই ভালো হতো।’

বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বাবুল মিয়া বলেন, মুসার চরে ৪০-৪৫টি পরিবারের জন্য আছে মাত্র পাঁচটি নলকূপ। ওই এলাকায় নলকূপ দেওয়ার জন্য আমি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।

আরও পড়ুন…যুবককে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা,বাবা-মা,ভাইসহ গ্রেফতার ৩

এ বিষয়ে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমার বলেন, ‘মুসার চরে নিম্নস্তরের ১০০-১৫০ ফুট গভীরে আর্সেনিক, আয়রন রয়েছে। এজন্য আপাতত হোম সিস্টেম নলকূপ দেওয়া উপযুক্ত মনে হচ্ছে না। এ চরের জন্য কোন ধরনের নলকূপ বসানো যায়, সে বিষয়টা নিয়ে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইবাংলা/জেএন/০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

আর কতদিন নদীর পানি খামো