গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের সবটায় বিক্ষোভ করেছেন কয়েক লাখ মানুষ। টেক্সাসে নতুন একটি আইন হয়েছে। তাতে এই রাজ্যে গর্ভপাতের অধিকারকে মারাত্মকভাবে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এর বিরোধিতাকারীরাও এই বিক্ষোভের সঙ্গে শামিল হয়েছেন। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এমন ৬৬০টি বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে সুপ্রিম কোর্টের সিঁড়িতেও বিক্ষোভ হয়েছে। টেক্সাসে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ৬ সপ্তাহ পরে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। টেক্সাসের এই আইন কার্যকর হয়েছে গত মাসে।
দেশে এটাকেই সবচেয়ে বেশি কঠোর ব্যবস্থা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা ও বিবিসি।
বিক্ষোভকারীরা সুপ্রিম কোর্টের সিঁড়িতে এবং আশপাশের সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন- ‘মাই বডি, মাই চয়েস’। অর্থাৎ আমার শরীর। পছন্দ আমার। ড্রামের তালে তালে তারা তারস্বরে চিৎকার করে এ স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের অনেকের হাতে ছিল প্লাকার্ড, ব্যানার। তাতে লেখা- ‘মাইন্ড ইওর ওন ইউটেরাস’। অর্থাৎ নিজের জরায়ুর খবর নিন। আরেকটি ব্যানারে লেখা- ‘আই লাভ সামওয়ান হু হ্যাড অ্যান অ্যাবরশন’ ‘অ্যাবরশন ইজ এ পার্সোনাল চয়েজ, নট এ লিগ্যাল ডিবেট’। কারো কারো পরনে ‘১৯৭৩’ লেখা টি-শার্ট ছিল। এটাকে ব্যবহার করা হয়েছে ঐতিহাসিক রোই বনাম ওয়েড সিদ্ধান্তকে বুঝানোর জন্য। ওই সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতকে বৈধতা দেয়া হয়েছিল।
ওয়াশিংটনে র্যালি ফর অ্যাবরশন জাস্টিস নামের বিক্ষোভে প্লানড প্যারেন্টহুডের প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সিস ম্যাকগিল জনসন বলেছেন, আপনি কোথায়, কিভাবে বসবাস করছেন সেটা কোনো ব্যাপার নয়। এ এক অন্ধকার সময়। টেক্সাসে ওই আইন হওয়ার কারণে বিভিন্ন স্থানে ঘন্টার পর ঘন্টা লম্বা লাইনে অবস্থান করছেন অনেক নারী। তারা গর্ভপাত করাতে চাইছেন আইনের আওতায় পড়ার আগেই। তাদের উদ্দেশে তিনি বক্তব্য রাখেন। ম্যাকগিল জনসন বলেন, এই সময়টা খুব অন্ধকারময়। এ জন্যই আমরা এখানে সমবেত হয়েছি।
উল্লেখ্য, টেক্সাসে গর্ভপাত বিরোধী ওই আইনকে কেউ কেউ ‘হার্টবিট’ আইন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কোনো মানব ভ্রুণের মধ্যে যদি হার্টবিট শনাক্ত করা যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে গর্ভপাত নিষিদ্ধ। এ আইনে স্বাক্ষর করেছেন টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট। সাধারণত, মানব ভ্রুণের হৃদযন্ত্র সচল হতে প্রায় ৬ সপ্তাহ সময় লাগে। তবে অনেক অন্তঃসত্ত্বা নিজে যে অন্তঃসত্ত্বা তা বোঝার অনেক আগেই গর্ভস্থ সন্তানের হার্টবিট শুরু হয়ে যায়।
টেক্সাসের এই আইনে ধর্ষিতা বা আত্মীয়ের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কে অন্তঃসত্ত্বা হওয়াকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়নি। যদি কেউ অবৈধ উপায়ে গর্ভপাত করাতে সাহায্য করেন, তাদেরকে কমপক্ষে ১০ হাজার ডলার জরিমানা করার কথা বলা হয়েছে। টেক্সাসের রাজধানী অস্টিনে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন আলেজান্দ্রা মারকুয়েজ। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, আমার শরীর নিয়ে কি করতে পারি বা কি করতে পারি না, আমার মনে হয় সে সিদ্ধান্ত প্রবীণরা, রাজনীতিকরা নির্ধারণ করে দিতে পারেন না। আমি আরো মনে করি, প্রতিটি নারী কখন সন্তান নেবেন, কিভাবে নেবেন, কতটি সন্তান নেবেন- সে সিদ্ধান্ত তারই থাকা উচিত।
টেক্সাসের গর্ভপাত বিরোধী এই আইনের বিরুদ্ধে আইনজীবীরা এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয় রাজ্য ও ফেডারেল কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। তাতে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়েছে, এতে রোই বনাম ওয়েড নীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে।