সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই দেশ তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তানের মধ্যে সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ জন নিহত ও বহু সংখ্যক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) উভয় দেশের মধ্যে সীমান্তে সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশ দুটি প্রায়ই সীমান্ত সংঘর্ষে লিপ্ত থাকে। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ইউএসএসআর-এর (সোভিয়েত ইউনিয়নের) পতনের পর থেকে উভয় দেশের মধ্যে সীমানা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
কিরগিজস্তান-তাজিকিস্তান সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও দুই দেশের হতাহতের ঘটনা কাতার ভিত্তিক ও ব্রিটিশ গণমাধ্যম আল জাজিরা ও বিবিসি এ সংঘর্ষের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে। শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নিজেদের প্রতিবেদনে এ খবর জানায় সংবাদমাধ্যম দুটি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ডজন খানেক লোক আহত হয়েছে। সীমান্তের স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই কিরগিজস্তানের। সহিংসতা এড়াতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
আরও পড়ুন…রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে হত্যাচেষ্টায় গাড়ি বহরে হামলা
বিবিসির প্রতিবেদনের তথ্যমতে, কিরগিজস্তান-তাজিকিস্তানের মধ্যে ১ হাজার কিলোমিটর সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্তের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি বিতর্কিত। এ নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষে লিপ্ত হয় দুই দেশ। মূলত, গত শতাব্দীর ৯০ দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সীমানা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। উভয় দেশে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়া সত্ত্বেও গত সপ্তাহের শুরুতে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়।
উভয় পক্ষই সহিংসতা শুরু এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য অপরকে দোষারোপ করছে। উল্লেখ্য, গত বছরে উভয় দেশের মধ্যে নজিরবিহীন লড়াইয়ে প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।সীমান্তে সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনায় একে অপরকে দোষারোপ করেছে মধ্য এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তান। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন নিহত হয়েছে।
কিরগিজস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার ভোরে জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী বাটকেন অঞ্চলের একটি হাসপাতালে অন্তত ২৪টি মরদেহ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ৮৭ জন আহত হয়েছে এ ঘটনায়। অন্যদিকে তাজিকিস্তান থেকে প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।
গত সপ্তাহের শুরুতে দুই দেশের সীমান্তে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। তারপরও দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। শুক্রবার কিরগিজস্তান-তাজিকিস্তান সীমান্তে ট্যাঙ্ক, কামান ও রকেট লঞ্চার নিয়ে সংঘর্ষ হয়। নতুন করে সংঘর্ষ হওয়ায় দেশ দুটিই আবার একে অপরকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য দোষারোপ করছে।
খবরে আরও বলা হয়, সংঘর্ষের অংশ হিসেবে তাজিক বাহিনী রকেট দিয়ে কিরগিজস্তানের আঞ্চলিক রাজধানী বাটকেনে আঘাত হানে। পাল্টা আক্রমণ করে কিরগিজ বাহিনীও।
আরও পড়ুন…রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে দেখতে ৮ কিলোমিটার লম্বা লাইন
স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল চারটা থেকে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। কিন্তু এর পরে বাটকেনের দুটি গ্রামে গোলাবর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। হামলায় ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান ব্যবহারের অভিযোগও করে দেশটি।
কিরগিজ বাহিনী ভারী অস্ত্রসহ একটি ফাঁড়ি এবং সাতটি গ্রামে গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তাজিকিস্তান।কিরগিজস্তানের জরুরি মন্ত্রণালয় বলেছে, সংঘর্ষপূর্ণ এলাকা থেকে ১ লাখ ৩৬ হাজার নাগরিককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশ দুটির মধ্যে এবারকার লড়াইয়ের কারণ কী তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়। তবে, এর আগে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় কিরগিজস্তান-তাজিকিস্তান। দুই দেশের বর্ডার গার্ড প্রধানরা বৈঠকে বসেন এবং সংঘর্ষ অবসানে একটি যৌথ মনিটরিং গ্রুপ তৈরিতে সম্মত হন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, সহিংসতা এড়াতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এ তথ্য জানিয়েছে রেড ক্রসের একটি আঞ্চলিক শাখা। শুক্রবারের সংঘর্ষ নতুন করে দুই দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ইউএসএসআর-এর (সোভিয়েত ইউনিয়নের) পতনের পর থেকে উভয় দেশের মধ্যে সীমানা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যে কারণে দুই দেশের সীমান্তে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। ২০২১ সালের এ সংঘর্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছিল। এদিকে এ দুই দেশের ঘনিষ্ঠ রাশিয়া। কিরগিজস্তান-তাজিকিস্তান সহিংসতা বন্ধে দেশটিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ‘জরুরি’ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মস্কো।
ইবাংলা/টিএইচকে