বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) শুরু হওয়া এসএসসি সমমানের দাখিল পরীক্ষার প্রথম বিষয় কুরআন মাজিদ পরীক্ষা দিয়েই শুক্রবার(১৬ সেপ্টেম্বর) বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল দুই পরীক্ষার্থীর। প্রশাসন খবর পেয়ে একটি স্থগিত এবং অপরটি আয়োজন করেও শেষ করতে পারেনি বিয়ে। প্রশাসনের উদ্যোগে বন্ধ হয়েছে বাল্য বিয়ে। ফলে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হলো না কোমলমতি দুই এসএসসি ও সমমানের দাখিল পরীক্ষার্থীর।
জানা যায়, মধুপুর উপজেলার রাধানগর ব্রাহ্মণবাড়ী ফাজিল মাদরাসার দাখিল পরীক্ষার্থী রাশিদা আক্তার রাশি। ওই গ্রামেরই রাজ্জাকের মেয়ে রাশিদার মধুপুর পৌর এলাকার নাগবাড়ীর বাসিন্দা জনৈক কছিম উদ্দিন কছুর প্রবাসী ছেলের সাথে বিয়ের কথা ছিল। সামিয়ানা টানানো, গেইট তৈরিসহ সমস্ত আয়োজন প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল।
আরও পড়ুন…চীন-পাকিস্তানের মধ্যে রেলপথ ও ই-কমার্সসহ নানা খাতে সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর
প্রথম পরীক্ষা শেষে রাশিদা বাড়ি ফিরে নিজের বিয়ের আয়োজনের এ দৃশ্য দেখেছেন। খবরটি জানাজানি হলে দুই পক্ষের অভিভাবকরা বিপদ শঙ্কায় অবশেষে বিয়ে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে শুক্রবার সকালে গেইট, সামিয়ানা খুলে ফেলা হয়। স্থানীয় একাধিক সূত্র, মাদরাসার জনৈক শিক্ষক এবং সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপর দিকে, মধুপুর পৌর এলাকার পুন্ডুরা গ্রামের খন্দকার মনির হোসেন ওরফে ময়নার মেয়ে মধুপুর আদর্শ ফাজিল মাদরাসার দাখিল শিক্ষার্থী খন্দকার মিতুর বিয়ে হচ্ছিল পাশের উপজেলা ঘাটাইলের বরের সাথে। অনেকটা মেজবানী আয়োজনে ধুম ধামে শুক্রবার দুপুরে মিতুর বিয়ে হতে যাচ্ছিল। বর আসবে বলে অপেক্ষা চলছিল।
খাওয়া ধাওয়া শেষে বিয়ের পর্বের একটু আগে প্রশাসন পুলিশসহ হাজির হয়ে বিয়ে বন্ধ করে দেয়। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) জাকির হোসাইন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ১ হাজার টাকা জরিমানা করেন। বয়স না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দিবে না মর্মে মুচলেকা নিয়ে নেয়া হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) জাকির হোসাইন এমন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত বরেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মধুপুর আদর্শ ইসলামীয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে ১৯টি মাদরাসার ৪২৮ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। কেন্দ্র সচিব ও কেন্দ্র মাদরাসার অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ জানান, চার ছেলে ও আট মেয়ে মিলে ১২ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত।
দুর্ঘটনায় একজন আহত ছাড়া বাকিদের সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ের পর পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে এমন পরীক্ষার্থী প্রায় সব মাদরাসার তালিকাতে থাকার তথ্য মিলেছে। কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ আরও জানান, তার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠানের কেউ অনুপস্থিত না থাকলেও ২৪ জনের অন্তত চার জন আছে বিবাহিত। তার একজন সন্তান সম্ভবা।
আরও পড়ুন…অস্ত্র রেখে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে ফাঁসলেন নিজেই
রাধানগর ব্রাহ্মণবাড়ী ফাজিল মাদরসার ৩৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে একাধিক পরীক্ষার্থী বিয়ের পরও পরীক্ষা দিচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানেরর একজন সন্তানসম্ভবা। জলছত্র দাখিল মাদরাসার শরীফা পরীক্ষা দিচ্ছে সন্তান নিয়েই। শালিখা ফাজিল মাদরাসার ২৭ জনেও বিবাহিত আছে। গাংগাইর নজমুল ইসলাম ফাজিল মাদরাসাসহ প্রায় মাদরাসার মেয়েরা বিযের পরও পরীক্ষা দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ এসব বাল্য বিয়ে বিষয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা পরীক্ষা চলাকালীন মেয়ের বিয়ের আয়োজনকে অভিভাবকদের কান্ড জ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত বলে অভিহিতি করেছেন।
ইবাংলা/জেএন/১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২