বাউন্ডারী না থাকা ও জলাবদ্ধতায় চরম ঝুঁকিতে শিশু শিক্ষার্থীরা

হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল প্রতিনিধি

নড়াইলের ক্রিড়াঙ্গনের সুতিকাগারখ্যাত শিব শংকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। অন্যতম প্রধান দু’টি সমস্যার একটি হচ্ছে মহাসড়কের পাশে অবস্থিত এ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর না থাকায় শিশু শিক্ষার্থীদের চরম ঝুঁকিতে থাকতে হয়। অপর সমস্যাটি হলো সামান্য বৃষ্টি হতেই বিদ্যালয় মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

কোমলমতি শিশুরা জলাবদ্ধতার কারনে ঠিকমত ক্লাসে আসতে পারে না। ১৯৫৬ সালে নড়াইল শহরের কুড়িডোব মাঠের পাশে যশোর-নড়াইল-ঢাকা মহাসড়কের পাশে এ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। সে সময়ে এ সড়কটি খুব বেশি ব্যস্ততম সড়ক ছিল না।

আরও পড়ুন…মিয়ানমারের উস্কানি ইস্যুতে ঢাকার প্রশংসা কূটনীতিকদের

সময়ের বিবর্তনে এটি নড়াইলের সবচেয়ে ব্যস্ততম প্রধান সড়কে পরনিত হয়েছে। সড়কের গা ঘেষে অবস্থিত এ বিদ্যালয়ের কোন সীমানা প্রাচীর না থাকায় শিশু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ব্যস্ততম সড়কের পাশে তাদের সন্তানদের পড়াশুনা করতে দিয়ে সব সময় উদ্বিগ্ন থাকেন। এ বিদ্যালয় এলাকায় প্রায়ই ছোট-বড় দূর্ঘটনার সংবাদ শিক্ষক ও অভিভাবকদের ভাবিয়ে তোলে।

শিক্ষকরা সার্বক্ষনিক আতংকিত থাকেন কোন সময় যেন কি ঘটে যায়! বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী তথা পিয়ন না থাকায় শিক্ষরাই সার্বক্ষনিক শিশু শিক্ষার্থীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষন করেন। কোন শিশু শিক্ষার্থী যাতে স্কুল হতে বেরিয়ে রাস্তায় না উঠে তার জন্য সব সময় তাদের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখেন। এ বিদ্যালয়টি নড়াইল তথা সারা দেশে ক্রিড়াঙ্গনের সুতিকাগার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে খেলাধুলার জন্য। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় খুবই পারদর্শী।

তাদের ক্রিড়া নৈপূণ্য ক্রিড়াঙ্গনে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বাংলাদেশে এটি একমাত্র প্রতিষ্ঠান ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে ছেলে ও মেয়ে দল নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহন করেছে। অথচ জলাবদ্ধতার কারনে বছরে প্রায় ৬ মাস তাদের সকল ধরনের খেলাধুলা বন্ধ থাকে। লেখাপড়ার দিক দিয়েও তারা এগিয়ে। ফলাফলের দিক দিয়ে জেলার সেরাদের মধ্যে রয়েছে তাদের অবস্থান। অথচ সামান্য বৃষ্টিতে এ বিদ্যালয় মাঠে হাটুজল জমে।

পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় এ পানি দীর্ঘ স্থায়ী থাকে। এ কারনে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা ভয়ে বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। তাছাড়া পানি বাহিত রোগের ভয়ে অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পান। শিশু শিক্ষার্থীরা স্কুল মাঠে থাকলে পানিতে অঘটনের ভয় আবার রাস্তায় উঠে আসলে দূর্ঘটনার ভয়। উভয় সংকটে চলছে তাদের পড়াশুনা।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সরজমিন এ বিদ্যালয়ে গেলে শিক্ষক আশিকুর রহমান,ফারহানা ইয়াসমীন ও ফাতেমা খানম বলেন মহাসড়কের পাশে স্কুল,কিন্তু কোন বাউন্ডারী নেই। আবার মাঠে পানি জমে আছে। শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় সারা দিন।

শিক্ষক খন্দকার রুমানা পারভিন কেয়া,আইরীন সুলতানা ও নাজনীন বলেন স্কুল সময়ের অনেক আগেই এসে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়, যাতে কোন শিশু শিক্ষার্থী স্কুল সময়ের বেশি আগে এসে কোন দূর্ঘটনায় না পড়ে। আবার ছুটির পরে তারা স্কুল ত্যাগ না করা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়। স্কুলের বাউন্ডারী ও জলবদ্ধতা নিরসন একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।

বিদ্যালয়ের সভাপতি শাহেদ আলী শান্ত বলেন,নড়াইল পৌরসভার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যস্ততম সড়কের পাশে স্কুলটি অবস্থিত হওয়ায় বাউন্ডারী দেয়া একান্ত জরুরী। সেই সাথে রয়েছে জলাবদ্ধতার সমস্যা। তিনি সমস্যা দু’টি নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আরও পড়ুন…ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রিলিফের ২২ মেট্রিক টন চাল পাচার: গ্রেফতার ৩

প্রধান শিক্ষক মৌসুমী কাবেরী বলেন, বাউন্ডারী নির্মান ও জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য জেলা প্রশাসক,জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তওে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে আশ্বস্ত করেছেন। সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আতিকুর রহমান বলেন শিব শংকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাউন্ডারি নির্মান করা ও জলাবদ্ধতা নিরসন খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে।

উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, যাতে দ্রæত সীমানা প্রাচীর নির্মান ও জলাবদ্ধতা নিরসন হয়,তার জন্য উপর মহলে চেষ্টা চলছে। আশা করা যায় দ্রæতই সমস্যার সমাধান হবে।

ইবাংলা/টিএইচকে

ঝুঁকিতেশিশু শিক্ষার্থীরা