দেশের উত্তর অঞ্চলের আবিষ্কৃত ৫টি কয়লাখনির মধ্যে দীঘিপাড়ার কয়লাখনির কয়লা উত্তোলণ করে জ্বালানী খাতে ব্যবহার করার এখনি সুযোগ। বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি নির্ভর ও অর্থ ব্যয় করে কয়লা আমদানি করা বন্ধ করে দিঘীপাড়ার কয়লাখনি কয়লা দিয়ে জ্বালানি খাতের উন্নয়ন করা এখনি সঠিক সময়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কয়লার চড়া মুল্য হওয়ায় দেশে স্থাপিত কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলি ভবিষ্যতে কয়লার অভাবে যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য সরকারকে এখনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ৫টি কয়লাখনির মজুদ ৩,১৯৭মিলিয়ন টন কয়লা রয়েছে। বাংলাদেশের জ্বালানির উৎস গ্যাস।
আরও পড়ুন…হাতিয়াতে ২ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার
বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে জ্বালানি খাতের অবস্থা অনেকটা লাজুক। এছাড়া দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়েকটি পাওয়ার প্লান গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। দেশের গ্যাস মজুদ যেহেতু অফুরন্ত নয়, তাই আগামী দিনে বিকল্প জ্বালানী হিসেবে কয়লার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে উত্তর অঞ্চলের ৫টি কয়লা খনি।
দেশে আবিষ্কৃত কয়লা ৫৩টিসিএফ গ্যাসের মজুদ, যা দেশে এ পর্যন্ত আহরিত গ্রাসের প্রায় ৪গুন বেশি। দিনাজপুরের ৩টি আবিষ্কৃতি খনি বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী ও দিঘীপাড়া অপরদিকে আরো ৩টি খনি হচ্ছে রংপুরের খালাশপীর ও জয়পুর হাটের জামালগঞ্জ।
শুধু দিনাজপুরের আবিষ্কৃত কয়লাখনিতে মজুদ রয়েছে ১ হাজার ৪শত ৬২ মিলিয়ন টন কয়লা। ১৯৮৫ সালে বিওএইচপি নামক একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান ফুলবাড়ী,পার্বতীপুর, বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে আর একটি কয়লা খনি আবিষ্কার করেন। ১৯৯৭ সালে লন্ডন ভিত্তিক একটি বহুজাতিক কোম্পানি এই এলাকায় ১০৭টি কুপ খননের মাধ্যমে উন্নতমানের কয়লা আবিষ্কার করেন।
এই কয়লাখনিতে ৬.৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৫শত ৭২ মিলিয়ন টন কয়লার মজুদ নির্ধারণ করেন। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দিঘীপাড়া কয়লাখনিটি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ভূতাত্তিক জরিপ অধিদপ্তর এই খনিটি আবিষ্কার করেন।
দীর্ঘ ১যুগ ধরে বেশ কয়েকটি কুপ খনন করে ৫শত মিলিয়ন টন কয়লা মজুদের পরিমাণ যাচাই করেন। বর্তমান বাংলাদেশ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রানালয়ের আওতায় বিসিএমসিএল এর মাধ্যমে ৩বৎসর মেয়াদী জরিপ কাজ চালানো হয়। জরিপ কাজ শেষে চীনা কোম্পানী দিঘীপাড়া কয়লাখনিটি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেন। এই খনিটির তদারকের দায়িত্বে ছিলেন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে মোঃ জাফর সাদিক।
আরও পড়ুন…তারুণ্য‘র উদ্যোগে ইবিতে পরিছন্নতা অভিযান
প্রকল্প পরিচালক সমীক্ষা শেষ করে খনিটির বাস্তব চিত্র তুলে ধরে খনিটি বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ে পাঠান। মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। বর্তমান সরকার দেশের ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলন করে জ্বালানী খাতে ব্যবহার করবেন না বলে জানিয়ে দিলেও বর্তমান জ্বালানী খাতের সংকটের কারণে এই খনিটি বাস্তবায়ন হবে বলে জানা গেলেও এখন পর্যন্ত সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
এই খনিটি বাস্তবায়ন করা হলে মজুদ কয়লা জ্বালানী খাতে সহায়ক হবে। দেশের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলে যেসব কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশিয় অর্থে ও বিদেশি বিনিয়োগে তৈরি করা হয়েছে সেসব কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ না থাকলে এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে। যার কারণে এখনি উত্তম সময় দিঘীপাড়ার কয়লা খনিটি বাস্তবায়ন করে কয়লা উত্তোলন করা প্রয়োজন।
তেল, গ্যাস এর উপর নির্ভর করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সরকার। বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়লা আমাদের দেশের মত এত উন্নত নয়। তারা তাদের দেশের অউন্নত কয়লা বিদেশে রপ্তানি করছে। এতে একদিকে যেমন সরকার অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে অন্যদিকে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি নির্ভর কমে যাবে।
বর্তমান বড়পুুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা দিয়ে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু রাখ হয়েছে। ৬.৬৮ বর্গকিলোমিটার কয়লার ক্ষেত্রে ১১৮ থেকে ৫০৬ মিটার গভীরতায় ৬টি স্থরে কয়লার মজুদ ৩৯০ মিলিয়ন টন। ২০০১ সাল থেকে শুরু করে ১৯ শে জুলাই ২০২২ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি মেট্রিকটন কয়লা উৎপাদন হয়েছে।
আরও পড়ুন… প্রদর্শনী কেন্দ্রে নারিকেল বীজ ক্রয় অনিয়মের অভিযোগ
বর্তমান বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভ থেকে সুরঙ্গ পথে কয়লা উত্তোলণ অব্যাহত রয়েছে। সুরঙ্গ পথে চীনা প্রযুক্তিতে কয়লা তোলায় খনিটির অফুরন্ত ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে খনিতে ব্যয় বাড়ছে। থেকে যাচ্ছে প্রায় ৮০ভাগ কয়লা। উঠে আসছে ২০ভাগ কয়লা। এ পদ্ধতি পরিবর্তন করে দিঘীপাড়া কয়লাখনিটি ওপেন মাইনিং পদ্ধতিতে করলে সরকার লাভবান হবেন।
এইএলাকার মানুষের নতুন নতুন কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হবে এবং জীবন জীবিকার পথ সুগম হবে। দিঘীপাড়ার কয়লাখনির মজুদ কয়লা উত্তোলনে সরকারের এখনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।
ইবাংলা/জেএন/২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২