পঁচাত্তর পরবর্তী জাতির আলোকবর্তিকা, মানবতার জননী, বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথপ্রদর্শক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দার্শনিক যার জাদুর ছোঁয়ায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল, যার নিরন্তর ছুটে চলা জাতিকে স্বপ্ন দেখানো, যিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং প্রাকৃতিক যে কোনো দুর্যোগ দুর্বিপাকে ধীরস্থিরভাবে নিঃশঙ্ক চিত্তে এগিয়ে যাওয়া এবং সময়ের সবচেয়ে যৌক্তিক ও কার্যকর পরামর্শ শুধুমাত্র যার মস্তিষ্ক থেকেই আসে তিনিই শেখ হাসিনা।সত্যিকার অর্থে সব বিকল্পের বিকল্প থাকলেও শেখ হাসিনার বিকল্প তিনি নিজেই।
মুকুট ধন্য হয় যে মণিতে, সেই মণি শেখ হাসিনা। নানা বিশেষণে বিশেষায়িত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন ২৮শে সেপ্টেম্বর। ১৯৪৭ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন আমাদের সকলের প্রিয় হাসু আপা। ইতিহাসের প্রয়োজনে পুণর্জন্ম হলেও তিনি নিজেই ইতিহাস সৃষ্টির কারিগর। তাই ইতিহাসের নৈবৃত্ত সাজানো, সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে অন্ধকার অমানিশাকে পাড়ি দিয়ে মুক্তিযুুদ্ধের চেতনায় অপ্রতিরোধ অগ্রযাত্রায় দুর্গম পথের একমাত্র পথিক প্রবীণ মানুষের আদরের শেখের বেটি ।
আরোও পড়ুন…বাংলাদেশ দল থেকে বাদ মুস্তাফিজ
৭৫-এর ১৫ আগস্ট দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস, বর্বরোচিত ও কলঙ্কিত হত্যাকাণ্ডের সময় বিদেশে অবস্থান করায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা। এই নৃশংস হত্যার পর বহু ধারায় দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করতেই তার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। স্বাধীনতার সকল অর্জন লুটেরা লুট করে কফিনবন্দি করলে অন্ধকার থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার দৃপ্ত শপথ নিয়ে সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১৬ বছর সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার একটানা জেল-জুলম, অত্যাচার ও অকুতোভয় সংগ্রামের মধ্যদিয়ে স্বৈরশাসনের যবনিকাপাত ঘটে।
কথায় আছে, রাখে আল্লাহ মারে কে? শেখ হাসিনার চলার পথ ছিলো কণ্টকাকীর্ণ। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে নিজেই হামলার বীভৎসতার শিকার হয়েছেন। ঝড়, বৃষ্টি, সংকটে ও সংগ্রামে বাঙালি জাতির পাশে থেকে চষে বেড়িয়েছেন বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। মৃত্যঞ্জয়ী শেখ হাসিনাকে বুলেট সবসময় তাড়া করে ফিরে। প্রায় ২১ বার মৃত্যু উপত্যকা থেকে আল্লাহর রহমতে ফিরে এখন তিনিই আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার। সেই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস ছিল ২০০৪ এর ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা।
বারবার মৃত্যুকূপ থেকে ফিরে এসে নতুন উদ্যমে বাংলাদেশ গড়তে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তিনি। শত্রুর বুলেট, বোমা, গ্রেনেড ও গুলি তাঁকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। কষ্টসহিষ্ণু পথ পেরিয়ে তাঁর অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে দাঁড়িয়ে, বিভিন্ন সূচকে অনেক দেশকে ছাড়িয়ে ইমার্জিং টাইগার উপাধি পেয়েছে।
বঙ্গকন্যা যেন বঙ্গবন্ধুর এক অনন্য প্রতিচ্ছবি। আষাঢ়ে গল্পের ইতিহাস আর বন্ধুর পথ মাড়িয়ে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়নে জাদুর কাঠির মত আবির্ভূত হন শেখ হাসিনা। তিনি দেশের পুনঃজাগরণের নতুন এথেনা। তার মমত্ববোধ, মানবিকতা, মহানুভবতা ও উদারনৈতিক মানসিকতা,সাহস, প্রজ্ঞা, কৌশল,নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, অসীম ধৈর্য, বিচক্ষণতা, দৃঢ়তা, ঔদার্য, সক্ষমতা, মানবীয় গুণাবলী, মানবিক দৃষ্টান্তের প্রশংসায় পঞ্চমুখ পুরো বিশ্ব।
পাশাপাশি সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে চরম ধৈর্যের সঙ্গে উদ্ভূত ভয়ংকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে সমগ্র দেশবাসীর ভালোবাসা ও সুনাম অর্জন করতে পারাটা কেবল শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব । সমসাময়িক বাংলাদেশে বঙ্গকন্যা মানবীয়রূপে নব চেতনায় বাঙালির সৌরভ ও গৌরবকে সমুন্নত রাখার একমাত্র কারিগর।
বঙ্গকন্যা শুধুমাত্র একটি নাম নয় একটি প্রতিষ্ঠান । সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েও তিনি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় । এছাড়া আর্থসামাজিক উন্নয়ন, মাদক সন্ত্রাস,দারিদ্র্য বিমোচন, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষা, শান্তি ও শৃঙ্খলা, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্বের বহু খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়, সংগঠন ও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান তাকে খেতাব ও সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রীতে ভূষিত করেছে।
মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য পদক, পুরস্কার ও স্বীকৃতির পালক এখন বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার মুকুটে একের পর এক যুক্ত হচ্ছে। গান গেয়ে ও গল্পের বই পড়ে জীবন কাটিয়ে দিতে চাওয়া মেয়েটিই এখন বাঙালি জাতির আশার বাতিঘর। শিক্ষা জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে ছাত্রী সংসদে ভিপিও নির্বাচিত হন। শৈশব থেকেই মনোজগতের ভাবনায় ছিল অন্ধকারে আশার প্রদীপ হয়ে শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা। হয়তো এই জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসার নিদর্শন রিকশাচালক হাসমত আলীর কষ্টের টাকায় জমি কিনে এতিম শেখ হাসিনার জন্য রেখে যাওয়া।
অন্ধকারের সিন্ধুতীরে একলাটি ওই মেয়ে, আলোর নৌকা ভাসিয়ে দিল আকাশপানে চেয়ে।” রবী ঠাকুরের কবিতার মত ফিনিক্স পাখি শেখ হাসিনা। পদ্মাকন্যা শুধুমাত্র রাষ্ট্রনায়ক নন বরং তিনি লেখক, গবেষক ও দার্শনিক । তার দর্শন হলো সত্য, ন্যায় ও শ্বাশ্বত পথে অবিচল থেকে মানবতাবিরোধীদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর দৃশ্যায়ন। রাষ্ট্রনায়ক থেকে বিশ্বনেতা হয়ে ওঠার নেতৃত্বই উন্নত বিশ্বে শেখ হাসিনা উন্নয়নের রোল মডেল । মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অগ্রপথিক হিসেবে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা অনন্য। তিনি আমাদের কাছে স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িকতার শব্দব্রহ্ম। উন্নয়নশীল বাংলার ইহজাগতিকতার বীজমন্ত্র ও তিমির হননের আলোকবর্তিকা।
আরোও পড়ুন…মঙ্গলে জমেছে ৭ হাজার কেজিরও বেশি আবর্জনা
উন্নয়নের ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব আপাদমস্তক বিনয়ী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা শ্বেত কপোতের মতোই শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের ছোঁয়া ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে এখন জীবন্ত কিংবদন্তি। পাকিস্তানের জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করে একাত্তরে অধিকারবঞ্চিত বাঙালিদের যেভাবে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, ঠিক তেমনিভাবে পিতার আদর্শ নিয়ে বিশ্বের নির্যাতিত, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের ত্রাণকর্তা হিসেবে অদম্য বাংলাদেশের অনিরুদ্ধ অগ্রযাত্রায় মাথার মুকুট হবেন এই প্রত্যাশায় শুভ জন্মদিন শেখ হাসিনা।
ইঞ্জিনিয়ার ফকর উদ্দিন মানিক
লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট
সভাপতি- কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ এলামনাই এসোসিয়েশন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইল – fokoruddincse@gmail.com
ইবাংলা/আরএস/২৭ সেপ্টেম্বর,২০২২