সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচে বড় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা আগামী পহেলা অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষ্যে প্রতিটি পূজা মন্ডপে চলছে দূর্গা পূজার প্রস্তুতি। ঘনিয়ে আসছে পূজার সময়, তাই শেষ সময়ে প্রতিদিনই পূজা মন্ডপগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পিরা।
গেল বছর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল নোয়াখালীতে। জেলার চৌমুহনী এলাকার অন্তত ১১টি পূজা মন্ডপ ও ৬টি মন্দিরে একযোগে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া বেগমগঞ্জের ছয়ানীতে একটি পূজা মন্ডপ, একটি কালি মন্দির ও দুর্গাপুরে একটি পূজা মন্ডপে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছিল।
২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর শুক্রবার বিকালে চৌহমুনীর ওই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞে দুইজনের প্রাণহানীসহ লুটপাট করা হয় মন্দিরগুলোর অর্থ, ভাংচুর করা হয় মন্ডপগুলোর সব প্রতিমা। চৌমুহনীতে মন্দির ও পূজা মন্ডপের সেই ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষত এখনো শুকায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বাধিক তৎপরতার মধ্যে অতীতের সকল শঙ্কাকে শক্তিতে রূপান্তর করে জেলায় বাড়ানো হয়েছে শারদীয় দূর্গা পূজা মন্ডপ।
আরও পড়ুন… বিএনপির ১৩৯ নেতাকর্মীর হাইকোর্টে জামিন
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ নোয়াখালী জেলা শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে জেলায় ১৬৯টি মন্ডপে প্রতিমা পূজা এবং ঘট পূজা হয় ৬টি মন্ডপে। এরমধ্যে বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভায় ১১টি মন্ডপে দূর্গা পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। চৌমুহনীর ১১টি মন্ডপেই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ সংঘঠিত হয়। এবার জেলায় নতুন করে আরো ৬টি পূজা মন্ডপ বাড়িয়ে ১৭৫টি মন্ডপে প্রতিমা পূজা এবং ৫টিতে ঘট পূজা পালিত হবে। এরমধ্যে চৌমুহনী পৌরসভাসহ বেগমগঞ্জে ২৫টি মন্ডপে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ বেগমগঞ্জ উপজেলা শাখার সদস্য সচিব জয় ভূ্ঞাঁ বলেন, গত বছর চৌমুহনীতে ৬টি মন্দির ও ১১টি পূজা মন্ডপে একযোগে যেভাবে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তাতে যে ক্ষত তৈরী হয়েছিল, তা এখনো শুকায়নি। তার পরও সনাতন ধর্মালম্বীরা সেই শঙ্কাকে শক্তিতে রূপান্তর করে অনেকটা ক্ষুদ্র আকারে মায়ের পূজা আরচনা করে আসছে। আমাদের ওপর যতই নির্যাতন হোক মায়ের পূজা আমাদেরকে করতেই হবে। তিনি বলেন, এবার পূজা মন্ডপ ও মন্দিরগুলোতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাধিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলা হলেও গত বছরের ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমরা এখনো আতঙ্কিত। আশা করছি প্রশাসন এ ব্যাপারে প্রয়োজনী নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নোয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি বিনয় কিশোর রায় বলেন, গতবার দুর্গাপূজার উৎসবে চৌমুহনীতে মন্দির ও মন্ডপে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় এখনো ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও মন্ডপগুলোতে ক্ষত রয়ে গেছে। তাই গতবারের তুলনায় এবার পূজার প্রস্তুতিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে আমরা মনোবল হারায়নি। পূজার প্রস্তুতি স্বল্প পরিসরে হলেও এবার জেলায় আরো ৬টি পূজা মন্ডপ বাড়ানো হয়েছে। প্রশাসনের দিক থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। শঙ্কা থাকলেও মায়ের আরচনাতে কোন কমতি থাকবেনা।
বিনয় কিশোর রায় আরো বলেন, চৌমুহনীতে মন্দির ও মন্ডপে গতবার হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মোট ১৮টি মামলা হয়েছে। দায়ের করা মামলার মধ্যে ১০টি মামলার বাদী পুলিশ। বাকি ৬টি মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্থ মন্ডপ পূজা কমিটির সদস্য, ১টি মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘরের মালিক ও ১জন ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ। এখন পর্যন্ত কোন মামলাই নিষ্পত্তি হয়নি। সব মামলা চলমান রয়েছে। ওই মামলাগুলো দ্রুত বিচার আইনে কার্যক্রম পরিচালনা করলে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে ন্যায় বিচার পাবো বলে আশা করছি।
আরও পড়ুন…শেখ হাসিনা আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার কারিগর
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম (পিপিএম) বলেন, সব ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দুর্গাপূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মন্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তা (আইনশৃঙ্খলা) বাহিনী, এটা পুলিশ হতে পারে, আনসার হতে পারে, যেখানে যেটা প্রয়োজন, সেভাবে ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া বড় মন্ডপগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনী টহলে থাকবে।
গত বছর শারদীয় দুর্গোৎসবে জেলার বেগমগঞ্জের চৌমুহনী ও ছয়ানী ইউনিয়নে ঘটে যাওয়া হামলার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, সেটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। ওই ধরনের ঘটনা এড়াতে সরকারের নির্দেশনা মেনে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের আহবান জানান তিনি।
ইবাংলা/জেএন/২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২