গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন সরুপাইতলী এলাকায় জমি বিক্রি ও মাপার জের ধরে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন হয়েছে। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড গত (১২ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে তাদের নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর নিহতের ছোট ভাই পালিয়ে গেছেন। নিহতের নাম আলিমুদ্দিন (৫০)। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন সরুপাইতলী এলাকার দিদার আলীর ছেলে। আর অভিযুক্ত ছোট ভাইয়ের নাম আজগর আলী।
আরও পড়ুন…যে ৫ লক্ষণে বুঝবেন ত্বকের আর্দ্রতা কমছে
আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ঘটনা দেশের দায়িত্বশীল গণমাধ্যমগুলোতে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হয়। মৃত্যুর দুই দিন পর (১৩ জুলাই) কাশিমপুর থানায় নিহতের স্ত্রী হাসেলা বেগম বাদী হয়ে হত্যা (মামলা-১১) দায়ের করেন। নিহতের ছোট ভাই আজগর আলী মামলার প্রধান আসামী থাকলেও এ মামলায় বেশ কয়েকজনকে আসামি বানিয়ে সুকৌশলে ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, ঘটনার প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হলেও মামলার প্রধান আসামী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ মামলায় অপরদের কে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে যারা ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। এলাকার কয়েক শতাধিক নারী পুরুষের সাথে সাংবাদিকদের কথা হলে তারা একই বাক্যে নিরপরাধ মানুষগুলোর মুক্তি চাই বলে দাবি জানিয়েছেন।
এ মামলায় কলেজ পড়ুয়া এক ছেলে আনছার আলীকে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এজন্য সে ফেরারী হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, লেখাপড়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। আনছার আলীর পিতা সালাউদ্দিন একই মামলায় জেল হাজতে কারা ভোগ করছেন। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন, হামিদুল ইসলাম, মোস্তফা ও সাবের আলী।
আরও পড়ুন…অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে কিশোরীর ধর্ষণ, চালক গ্রেফতার
ওই এলাকার পঞ্চাশোর্ধ বৃদ্ধ মফিজ উদ্দিন বলেন, জমি নিয়ে ভাইকে ভাই হত্যা করেছে এই ঘটনাটা আমরা সবাই জানি, কিন্তু যারা ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিল না, নিরপরাধ মানুষগুলোকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
অপরদিকে একই এলাকার নাসির উদ্দিন নাসু বলেন, বাবা ছেলেকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে, অথচ মূল আসামিকে পুলিশ ধরছে না। সালাউদ্দিন বিনা দোষে জেল খাটছে।
রহিমা খাতুন নামের এক নারী বলেন, আজগর আলী হত্যার মূল আসামী। অন্য সকল মানুষগুলো নিরপরাধ, আমরা চাই এ মামলা থেকে নিরপরাধ মানুষগুলোকে মুক্তি দেওয়া হোক।
সালাউদ্দিনের স্ত্রী ও আনছার আলীর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে কোনদিন মামলা মোকাদ্দমা হয়নি, আমরা অন্যের কোন ক্ষতি করিনি, অথচ আমার স্বামী ও সন্তানকে মিথ্যা একটি মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, মানসিকভাবে যন্ত্রণায় আছি। এ ঘটনায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় বিচারের দাবি জানাই।
মামলার বাদী হাসেলা বেগমের (৪৯) কাছে মূল আসামি গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আসামি পলাতক রয়েছে, পুলিশের কাছে মামলা করেছি, যখন খুশি তখন ধরবে, তবে অন্য আসামিদেরকে কেন হয়রানি করছেন তখন তিনি জানান, আমার স্বামীকে আজগর আলী হত্যা করেছে কিন্তু অপর আসামিরা সহযোগিতা করেছে, একা মারতে পারেনি। থানায় ছুরি জব্দ আছে। অপর আসামিদেরকে আপনার চোখে দেখেছেন কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি উত্তর দিতে পারেননি!
উল্লেখ্য, হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, সরুপাইতলী এলাকায় আজগর আলী তার জমি বিক্রি করছিলেন। কিন্তু তার বড় ভাই আলিমুদ্দিন ওই জমি অন্যের কাছে বিক্রি করতে নিষেধ করেন এবং তিনি কিনে নিতে চান।
আরও পড়ুন…অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা, বাড়তে পারে বৃষ্টি
এক পর্যায়ে আজগর আলী তার জমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে বিক্রি করবেন বলে তার ভাইকে জানান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আজগর আলী তার বড় ভাই আলিমুদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় তাকে গুরুত্ব আহত অবস্থায় জামগড়া নারী ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আলিমুদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
ইবাংলা/জেএন/০২ অক্টোবর ২০২২