দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও বৈষম্য হ্রাসের লক্ষ্যে সরকার ২০১৫ সালে জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল নীতি প্রনয়ণ করে, যার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিনত করা।
শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয়, বিদ্যালয়গামী শিশুরাও এই সামাজিক সুরক্ষা কৌশলের আওতাভুক্ত। বর্তমান সরকার তাদের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রাথমিক শিক্ষায় উপবৃত্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যাক্ত করে, যার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার কমিয়ে ধীরে ধীরে তা শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনা।
আরও পড়ুন…কোটি টাকা আত্মসাত: ৪ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৫ জনকে ৭০ বছরের কারাদন্ড
এর আওতায় প্রাক প্রাথমিক এর প্রতি শিক্ষার্থী মাসিক ৭৫ টাকা, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর প্রতি শিক্ষার্থী মাসিক ১৫০ টাকা, ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীর প্রতি শিক্ষার্থী মাসিক ২০০ টাকা হারে উপবৃত্তি প্রদান করা হয়। বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দিচ্ছে সরকার।
ইতোমধ্যে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা, ২০২১ অনুসারে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনের আওতায় অর্থ বিভাগ কতৃক অনুসৃত (Government to Private- জিটুপি) পেমেন্ট পদ্ধতিতে মোবাইল ফাইন্যান্সিং সার্ভিসের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষায় উপবৃত্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেবা সহজীকরণ ও জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার যে অনন্য উদ্যোগ গ্রহ্ণ করা হয়েছে তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে মোবাইল ফাইন্যান্সিং এর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষায় উপবৃত্তি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা। ইতোপূর্বে একটি নির্দিষ্ট মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের মাধ্যমে উপবৃত্তির অর্থ বিতরণ করা হলেও এখন যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টেই শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা পাবার উদ্যোগের ফলে তা আরও সহজ এবং ব্যবহারবান্ধব হবে।
এর ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি প্রদান কার্যক্রমে সহজীকরণ ও গতিশীলতা আনয়ন সম্ভব হয়েছে। উপকারভোগীর টিসিভি(টাইম,কস্ট,ভিসিট) কমানোর পাশাপাশি একইসাথে এটি এই ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে সক্ষম বলে সকলেই তা সাদরে গ্রহণ করেছে।
মোবাইল ফাইন্যান্সিং সেবার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মা, বাবা ও বৈধ অভিভাবকদের পছন্দ অনুযায়ী তাদের সক্রিয় মোবাইল একাউন্টে সরাসরি উপবৃত্তির অর্থ প্রদান করা হয়। এই উদ্ভাবনী উদ্যোগের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক নির্বাচনের ক্ষেত্রে মা’কে অগ্রাধিকার প্রদান করা।
প্রথমত, মা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির অর্থ মায়ের একাউন্টে সরাসরি প্রেরণ করা হয়। মা সেই মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব দিয়ে উপবৃত্তির অর্থ পাওয়া ছাড়াও অন্যান্য লেনদেনও করতে পারেন। এটি গ্রামের প্রান্তিক নারীদের ক্ষমতায়নের একটি অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে সেই সাথে উপবৃত্তি বিতরণে নিশ্চিত হচ্ছে সুশাসন।
আরও পড়ুন…সুবর্ণচরে ইউপি সদস্যের যোগসাজশে বসতভিটা জবর-দখলের চেষ্টার অভিযোগ
অর্থাভাবে শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে এবং ঝরে পড়া রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে বৃত্তির অর্থ দেয়া হয়। মোবাইল ফাইন্যান্সিং সেবার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষায় উপবৃত্তি কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন হবার ফলে তা প্রাথমিক শিক্ষা চক্রের সমাপ্তি হার বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ,সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার হওয়া, নারীশিক্ষার প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণসহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের গুনগত ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে দৃশ্যমান ও কার্যকরী ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে।
ইবাংলা/জেএন/০৩ অক্টোবর ২০২২