জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব করা হয়েছে দলের কো-চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নুকে। দলের সদ্য প্রয়াত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর জায়গায় তাকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হলো।
শনিবার (৯ অক্টোবর) তাকে মহাসচিব ঘোষণা করেন দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
পদ পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বিকেল সোয়া ৫টার দিকে মুজিবুল হক চুন্নু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০ মিনিট আগে আমার সঙ্গে দলের চেয়ারম্যানের (জি এম কাদের) সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি দলের নতুন মহাসচিব হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এখন আমার দায়িত্ব হলো, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে শক্তিশালী করা, দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২ অক্টোবর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
জাপার নেতারা জানান, গত ২ অক্টোবর বাবলুর মৃত্যুর পর পরবর্তী মহাসচিব হিসেবে মসিউর রহমান রাঙ্গা, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশিদ ও অতিরিক্ত মহাসচিব গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নাম আসে। তবে সম্প্রতি তারা ব্যাকফুটে চলে যান। নতুন করে আসে দলের কো-চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু ও অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার নাম।
জাপার চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জাপার পরবর্তী মহাসচিব হিসেবে মুজিবুল হক চুন্নু ও রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া নাম প্রস্তাব করেন দলের চেয়ারম্যান গোলাম (জি এম) মোহাম্মদ কাদেরের কাছে। তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন মহলে (আওয়ামী লীগ) চুন্নুর গ্রহণযোগ্যতা বেশি। অন্যদিকে, দলের মধ্যে রেজাউল ইসলামের ভাবমূর্তি ভালো হলেও বয়সের কারণে তিনি পিছিয়ে পড়েন।
মুজিবুল হক চুন্নু সম্পর্কে
মুজিবুল হক চুন্নু ১৯৫৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার কাজলা মধ্যপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম প্রয়াত মুন্সী আব্দুল মালেক এবং মাতা প্রয়াত হারুননেসা।
১৯৬০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন মুজিবুল হক চুন্নু। ১৯৭০ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭২ সালে এইচএসসি পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ১৯৭৯-৮০ সালে অনার্স ও ১৯৮০-৮১ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
ছাত্র জীবনেই তিনি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৮০-৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮-৯০ সাল পর্যন্ত তিনি রেড ক্রিসেন্ট কিশোরগঞ্জ জেলা ইউনিটের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
মুজিবুল হক চুন্নু ছাত্রাবস্থায় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরে তিনি সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করেন। ১৯৭৮-৮০ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০-৮৬ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সহকারী জজ (বিসিএস জুডিশিয়াল) হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করেন মুজিবুল হক চুন্নু। সমাজের সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য তিনি ১৯৮৬ সালে চাকরি ছেড়ে রাজনীতি শুরু করেন এবং পরবর্তী সময়ে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার জাতীয় পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে পুনরায় জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ ও ২০১৩ সালেও তিনি সংস সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি জয় পান।