ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট এবং অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সাত প্রতিষ্ঠানের কাছে নথিপত্র তলব করে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (১৭ অক্টোবর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম সই করা পৃথক চিঠিতে নথিপত্র তলব করা হয়েছে।
আরও পড়ুন…বিপর্যয় কাটিয়ে ৮২ রানে বড় সংগ্রহ জিম্বাবুয়ের
দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি জানায়, ঢাকা ওয়াসার এমডি বরাবর পাঠানো চিঠিতে, ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পিপিআই সংক্রান্ত যেসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে সে সংক্রান্ত সব রেকর্ডপত্রে সত্যায়িত কপি চাওয়া হয়েছে।
আরব বাংলাদেশের (এবি) ব্যাংক লিমিটেডের কারওয়ান বাজার শাখার ম্যানেজার বরাবর পাঠানো চিঠিতে কারওয়ান বাজার শাখায় ওয়াসার অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম, কেওয়াইসি, সিগনেচার কার্ড ও ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ সকল রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়। ব্র্যাক ব্যাংকের বিজয় নগর শাখার ম্যানেজার বরাবর পাঠানো চিঠিতে ওয়াসার অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম, কেওয়াইসি, সিগনেচার কার্ড ও ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ সকল রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি চাওয়া হয়েছে।
জনতা ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে পাঠানো চিঠিতে তলব করা নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে, ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড ও প্রোগ্রাম ফর পারফরম্যান্স ইম্প্রুভমেন্টের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম, কেওআইসি, সিগনেচার কার্ড হিসাব খোলা ও পরিচালনা সংক্রান্ত সমিতির সকল রেজ্যুলেশন।
ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড ও প্রোগ্রাম ফর পারফরম্যান্স ইম্প্রুভমেন্টের নামে ২০১৮ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত পরিচালিত ব্যাংক হিসাব। এদিকে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো চিঠিতে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. এর মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল, গঠনতন্ত্র, আর্থিক আয়-ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা চাওয়া হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতির কাছে পাঠানো চিঠিতে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. এর মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল, গঠনতন্ত্র আর্থিক আয়-ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা চেয়েছে দুদক। এছাড়াও
সমিতির বর্তমান ও পূর্ববর্তী কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কার্যকরী কমিটির সকল সদস্যের নাম, পদবি (দাপ্তরিক ও সমিতির) বর্তমান কর্মস্থল, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর চাওয়া হয়েছে।
একই চিঠিতে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পিপিআই প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও ব্যাংক ব্যালেন্স সংক্রান্ত সকল রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সমিতির আয় ব্যয়ের হিসাব ও ব্যাংক ব্যালেন্স সংক্রান্ত সকল রেকর্ডপত্রের কপি চাওয়া হয়েছে।
দুদকের তলব করা নথিপত্র আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে সরবরাহের অনুরোধ করেছেন দুদক কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর ধাপে ধাপে সময় বাড়িয়ে তিনি এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। বিতর্কিত তাকসিম এ খানের পুনঃনিয়োগের ক্ষেত্রেও বিধি মানা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো, ঠিকাদার নিয়োগে সিন্ডিকেট, ঘুষ লেনদেন, পদ সৃষ্টি করে পছন্দের লোককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, অপছন্দের লোককে ওএসডি করাসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন…শীতের শুরুতে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেওয়া যায়
ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকা ছয়টি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের প্রত্যক্ষ মদতে ও নির্দেশে অপর আসামিরা টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন এমন অভিযোগ তাকসিম এ খানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। ওই মামলার তদন্তভার দুদকের হাতে ন্যস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ২৫ আগস্ট প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব তলব করে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
ইবাংলা/জেএন/১৭ অক্টোবর ২০২২