সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে পেনশন সুবিধা না পাওয়া সংক্রান্ত বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের অংশবিশেষ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। তবে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ চলমান থাকছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। অন্যদিকে, রিট আবেদনকারী আইনজীবী মাহবুব মোরশেদ নিজেই শুনানি করেন।
আরও পড়ুন…ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে নৌ চলাচল বন্ধের নির্দেশ
২০১১ সালে অতিরিক্ত জেলা জজ মাহবুব মোরশেদ স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র জমা দেন। একই বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে তার পদত্যাগপত্র কার্যকর হয়। পরবর্তী সময়ে এককালীন পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরের জন্য তিনি আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মাহবুব মোরশেদের পেনশন সংক্রান্ত বিষয়টি ফেরত দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ করলে আগের চাকরিকাল বাজেয়াপ্ত হবে, অর্থাৎ পেনশনের জন্য গণনাযোগ্য হবে না। আলোচ্য ক্ষেত্রে পেনশনারের (মাহবুব মোরশেদ) চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়নি। তিনি ২৫ বছর পূর্তি সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট বিধানের আলোকে পেনশনের জন্য কোনো আবেদন করেননি বলে পেনশনপ্রাপ্ত নন (১৯৭৪ সালের গণকর্মচারী অবসর আইনের ৯ ধারা)।
এ অবস্থায় বিধি-৩০০ এবং ওই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জে ২০১৬ সালে করে মাহবুব মোরশেদ রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ৮ মে হাইকোর্ট রুল রুল জারি করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০২১ সালের বছরের ১৮ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন…কোম্পানীগঞ্জে ওমান প্রবাসীর স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
রায়ে ২০১৫ সালের ২৫ মার্চের ওই চিঠি আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে চাকরির মেয়াদ অনুসারে মাহবুব মোরশেদের পেনশনসহ অন্যান্য বকেয়া সুবিধা গণনা ও মঞ্জুর করতে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের বিধি-৩০০ (এ) অনুযায়ী, সরকারি চাকরি থেকে কেউ পদত্যাগ করলে অথবা অসদাচরণ, দেউলিয়া, অদক্ষতা অথবা নির্ধারিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারার কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অপসারিত হলে তার চাকরি বাজেয়াপ্ত বলে বিবেচিত হয়।
বিধির ৩০০ (বি) বলছে, অন্য কোনো পেনশনযোগ্য চাকরিতে যোগদানের উদ্দেশ্যে কেউ পদত্যাগ করলে তা সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ হিসেবে গণ্য হবে না।
আরও পড়ুন…সিত্রাংয়ের প্রভাবে খুলনায় ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বাঁধে ভাঙন,আতঙ্কে মানুষ
হাইকোর্ট চাকরি থেকে পদত্যাগের কারণে পেনশন না পাওয়া সংক্রান্ত বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের (বিএসআর) প্রথম খণ্ডের বিধি-৩০০ (এ) অংশটুকু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। তখন চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন। আর আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়।
ইবাংলা/জেএন/২৪ অক্টোবর ২০২২