ইসলাম মানব জাতির পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহর বিধান, রাসুলের আদর্শ অনুসরণ, পারস্পরিক লেনদেন, আচার-ব্যবহার থেকে শুরু করে মানব জীবনের প্রয়োজনীয় প্রতিটি দিক সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ইসলামে। ইসলাম মানুষের যে বিষয়টির প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে তাহলো উত্তম চরিত্র।চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ। চরিত্রকে পবিত্র রাখা একজন মানুষের অবশ্য কর্তব্য। চরিত্রহীন ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও দেশের কলঙ্ক।
চরিত্র কি, আখলাক আরবি শব্দ। এর অর্থ চরিত্র। আখলাক বা চরিত্র হলো একজন মানুষের আচার-ব্যবহার চাল চলন কথাবার্তা জীবনযাপন। আখলাক বা চরিত্র দুই প্রকার।
১. আখলাকে হামিদা বা উত্তম চরিত্র।
২. আখলাকে যামিমা বা নিকৃষ্ট চরিত্র।
একজন মুসলমান নিজের জীবনে ইসলামী অনুশাসন, ইসলামী আচার-শিষ্টাচারের প্রতিফলিত ঘটিয়ে মানবচরিত্রের সর্বোন্নত শিকড়ে পৌঁছাতে পারে। বিপরীতে ইসলাম নির্দেশিত পথের ভিন্নপন্থা অবলম্বন এবং কথিত সভ্যতার নামে অশ্লীলতার জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়ার প্রবণতা মানব চরিত্রের সর্বনিকৃষ্ট পর্যায়ে নিয়ে।
‘সর্বোত্তম ব্যক্তি, যার চরিত্র উত্তম’ উত্তম চরিত্র হল ঈমানের প্রতিফলন। চরিত্র ব্যতিত ঈমান প্রতিফলিত হয় না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যার চরিত্র উত্তম।’ -( আবু দাউদ ও তিরমিজি)
ইবাদতের মাধ্যমে উত্তম চরিত্রের প্রতিফলন, প্রতিটি ইবাদত মানুষের মাঝে উত্তম চরিত্রের প্রতিফলন ঘটায়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সামনে মাথা নত না করার শিক্ষা দেয়। মানুষকে আত্মশুদ্ধি ও অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ -(সূরা আনকাবুত ; ৪৫)
রোজা মানুষকে সংযমী হতে শিক্ষা দেয়। জাকাত মানুষকে কৃপণতা, অহংকার ও লোভ থেকে রক্ষা করে। হজ মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধি করে ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। এভাবেই ইসলামের প্রতিটি ইবাদত মানুষের চরিত্রের উন্নতি সাধন করে থাকে।
উত্তম চরিত্র গঠনে রাসুলের নির্দেশনা, উত্তম চরিত্র গঠনের জন্য মৌলিক কিছু বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। কিছু দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তার মধ্যে অন্যতম হলো –
১. সত্যবাদিতা।
আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সাথে থেকো। (সূরা তাওবা ১১৯)
২. আমানত।
উত্তম চরিত্র গঠনের আরেকটি দিক হল আমানদারিতা। মহান আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনে বলেন, হে মুসলিমগণ! আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় আমানত তার হকদারের হাতে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। -(সূরা নিসা. আয়াত, ৫৮)
৩. বিনয় ও নম্রতা।
বিনয় বা নম্রতা অর্থ, কারো তোষামোদী করা নয়। বরং কোমল ব্যবহারকে বিনয় বলে। ধনী, গরিব, ছোট, বড় সবার সঙ্গেই কোমল ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি তোমার পার্শ্বদেশ মুমিনদের জন্য অবনত করে দাও। -(সূরা হিজর, আয়াত, ৮৮)
৪. মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।
মা-বাবা আমাদের পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে ইসলামে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর তার সাথে কিছু শরিক করো না এবং পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার কর। -(সূরা নিসা ৩৫)
মহান আল্লাহ তায়ালা মা-বাবার জন্য কিভাবে দোয়া করতে হবে তাও আমাদের শিখিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমার রব তাদের প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন পালন করেছেন।’ (সূরা ইসরা, আয়াত, ২৪) এছাড়াও উত্তম চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলো হল, প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার করা। গুরুজনকে সম্মান করা। শিক্ষককে শ্রদ্ধা করা। বিপদে ধৈর্যধারণ করা। একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা রাখা।
ইবাংলা/জেএন/১২নভেম্বর ২০২২