ভাগিনার খোলা চিঠি (১৩)
মামা,
মাঝে মধ্যে লেখায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলি এবং লেখা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু পারা যায় না। সুদূর আমেরিকা থেকে বন্ধুমহলের লেখার তাগিদ এবং অগণিত পাঠকের আগ্রহ ও চাহিদা মনকে শিহরিত করে। ভাবতে শেখায়। মনের মাঝে অজানা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
ফলে বাড়তি উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আবার লেখায় নিমগ্ন হই। উঁচু মাপের লেখক হতে পারিনি বটে কিন্তু সমাজের অনিয়ম, অসঙ্গতি, অসহিষ্ণুতা, প্রতিবন্ধকতা, চাটুকারিতা, নিষ্ঠুরতা, রাজনীতি শূন্যতা আর শাসকগোষ্ঠীর দাম্ভিকতা, মিথ্যাচারিতা নিয়ে আমার চিন্তাভাবনা, ধ্যানধারণা প্রকাশ করে সমাজের দায়বদ্ধতা থেকে নিষ্কৃতি লাভের চেষ্টা করি মাত্র।
ফলাফল বা উপকারিতা কি তা বলা বড় মুশকিল। তবে নির্লজ্জ প্রেমিকের মত আশার সুতোয় ভাঙ্গা হৃদয় জোড়া লাগিয়ে সমাজ পরিবর্তনের প্রত্যাশা নিয়ে সুদিনের প্রহর গুণছি। আমার কথাগুলো পেইনকিলারের মত কাজ করলেও দূষিত সমাজের শোষিত মানুষের কাজে আসবে কিনা সন্দেহ। কারণ মাছের মাথায় পচন ধরলে যেমন মাছ খাওয়া যায়না তেমনি আমাদের সমাজের মাথায় (অগ্রভাগে) পচন ধরেছে ফলে সমাজকে রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও বলতে হবে।
তবে এখন সত্য কথা বলা বড় কঠিন যা জ্বলন্ত আগুনে হাত দেয়ার মত। এখন চাইলেও সব বিষয় নিয়ে লেখা যায়না (প্রথম আলো, ১৫ মে ২০২২)। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করার আইন অতীতে ছিল। তবে এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, উপাত্ত সুরক্ষা আইন, গণমাধ্যমকর্মী আইন, ওটিটি নীতিমালা ও বিটিআরসি প্রবিধানমালা যুক্ত করে গণমাধ্যমের হাত পা বেঁধে ফেলা হয়েছে, যা গণতন্ত্র বিকাশের বিরাট অন্তরায়। জাতীয় পর্যায় থেকে জেলা পর্যন্ত সাংবাদিকদের তীক্ষ্ণ নজরদারিতে রেখে ভয় ভীতির পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২০টি জায়গায় সাংবাদিকদের দন্ড দেয়ার সুযোগ আছে।
এর মধ্যে ১৪টি জামিনযোগ্য নহে। এ আইনের প্রয়োগ হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। এ আইনে গ্রেফতারকৃত লেখক মুশতাক আহমেদকে জেলখানায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, “আমরা বিপদজনক অবস্থায় আছি। আজ ভয় আগুনের মত। বলতেও পারিনা, লিখতেও পারি না। লিখলে মনে হয় বিপদ আসতে পারে। “
ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “আমরা লিখতে পারি কিন্তু যেটা চাই সেটা লিখতে পারিনা। “
এদিকে সরকার দেশে এবং বিদেশে গিয়ে বলছে দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। সরকারের কোন হস্তক্ষেপ নেই। এ অবস্থা হলে আমাদের মত চুনোপুঁটিদের বোবা হয়ে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর রাখার দরকার নেই। রাজবাড়ির নারীনেত্রী ও ডোনার ক্লাবের সভাপতি সোনিয়া আকতার (স্মৃতি) কে ফেসবুকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ার অভিযোগে গত ৫ অক্টোবর মধ্যরাতে গ্রেফতার করা হয়। এতে মিডিয়ায় হইচই পরে যায়। তবে রক্তকন্যা গত ১০ বছর যাবত প্রায় ১২ হাজার মুমূর্ষু রোগীকে বিনামূল্যে রক্তদানের ব্যবস্থা করেছেন। মানবতাবাদী সোনিয়া আকতার নিজেই গত ৬ বছরে ১৯ বার রোগীদের রক্তদান করেন।
আওয়ামী লীগকে ব্যঙ্গ করে গত ২৪ জানুয়ারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাল্পনিক গল্প পোস্ট করার অভিযোগে এক যুবককে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। কারাদন্ডপ্রাপ্ত যুবকের নাম আব্দুল মুকিত ওরফে রাজু। আসলে তাদেরকে সুখে থাকতে ভ‚তে কিলায়। সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করা বা কিছু লেখা নিজের বিপদ ডেকে নিয়ে আসা। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করতে হলে সরকার বা দলের প্রশংসা করাই উত্তম পন্থা। তা না হলে জেল জরিমানা বা নির্যাতন অনিবার্য। আসলে সব সময় সব কথা বলতে নেই। রেল কর্মকর্তাদের সামনে টাইমটেবিলের কথা, পুলিশকে সততার কথা বলতে নেই।
বলেছেন কি ফেঁসেছেন। বোবা হয়ে থাকুন। কারণ বোবার শত্রæ নেই। চোখে ছানি পড়লে তা কাটাবেন না। দৃষ্টি যত ঝাপসা, বেঁচে থাকার আনন্দ তত বেশি। পরিকল্পনার পাঠশালায় সবাই ভাওতাবাজ, ভাবতে নিশ্চয়ই পারেন কিন্তু বলতে নেই। যেখানে বুয়েট ছাত্র আবরারের মৃত্যুবার্ষিকী পালনে চরম বাধা, মৃত্যুবার্ষিকী পালনকারীদের উপর মামলা নির্যাতন এমনকি আহতদের মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার অবশেষে কারাগারে, সেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা কিভাবে আশা করেন বা আশা করবেন।
এখানে ক্ষমতাই মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়। সত্য কথা বলতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গীর তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন (প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর)। ডলার সংকট, এলএনজি কেনা ঝুঁকিপূর্ণ, প্রয়োজনে দিনের বেলায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার কথা বলতে গিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী আজ কোণঠাসা। একই কারণে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিগত দেড় বছর যাবত অফিসে অনিয়মিত।
আইএমএফ আমাদের রিজার্ভ ফান্ডের হিসাব সঠিক নয় বলছেন এমনকি জিডিপির হিসাবের ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলেছেন। নানা ভাবে আমরা এখন ঘরে বাইরে সত্যের মুখোমুখি। আসলে এখানে সত্য বলতে বাধাদান করা হয়। তবে ক্ষমতার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে আজগুবি ও উদ্ভট সব মিথ্যাকে বুক ফুলিয়ে বীরত্বের সাথে সত্য বলে প্রচার করা হয়। সবাইকে তা মানতে বাধ্য করা হয়। বিদেশীরা মনে হয় ইদানীংকালে আমাদের ছলচাতুরি কিছুটা টের পেয়ে গেছেন।
মামা,
পল্লীকবি জসীমউদদীনের “কবর” কবিতায় দাদা তার নাতিকে বলেন,
“এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,
ত্রিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে। “
অর্থাৎ দাদা তার নাতির কাছে তার শোকবহ জীবনের প্রিয়জন হারানোর মর্মস্পর্শী করুন কাহিনী একে একে বর্ণনা করে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে শোককে কিছুটা মন্দীভ‚ত করার চেষ্টা করেছেন। আমিও মামার কাছে সমাজের সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্টের করুণ চিত্র তুলে ধরে কিছুটা হালকা হওয়ার চেষ্টা করি।
কারণ সমাজের অবিচার, অনাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি দেখতে দেখতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। মামা, আমার কথায় কষ্ট নিও না। রাগের মাথায় আমাকে ভুল বুঝো না। দূরে সরিয়ে দিও না। কারন একটা মন ভাঙ্গা আর একটা মসজিদ ভাঙ্গা সমান কথা। আমার অবস্থা কদম ফুলের মতই। যাকে বলি,
‘আমি ফুল কদম ডালে,
ফুটেছি বর্ষাকালে,
সারাটি জনম গেল চোখেরই জলে।’
তবে জীবন নদীর খেয়ায় আমরা সবাই কম বেশি দুঃখ কষ্টের যাত্রী। কষ্টের কোন আলাদা রঙ নেই। ধনী-গরিব, বড়-ছোট সব লোকেরই কষ্ট একই রকম। পথের কাঁটা সব পথিকের জন্য একই বাধা। সব দেশেরই সব মানুষের কষ্ট একই রকম। চোখের দু গন্ড বেয়ে নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়া অশ্রæর স্বাদ সবারই নোনতা। সব কিছু ভেঙ্গে পড়লে তার শব্দ হয়। শব্দ ছাড়া কিছুই ভাঙ্গে না।
শুধু হৃদয় ভেঙ্গে গেলে কেউ শুনতে পারে না। নীরবে, নিভৃতে, গোপনে কিংবা প্রচন্ড শব্দে ভ‚মিকম্পের মত হৃদয় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। কেউ শুনতে পারে না। এমনকি কেউ দেখতেও পারেনা। নরম কাদামাটি একবার পুড়ে যদি ইট হয়ে যায় তারপর যতই পানি ঢালা হোক না কেন, আর গলে না। বরং আরো শক্তিশালী হয়। মানুষের মন ও একই রকম।
একবার কষ্ট পেলে শত আবেগেও তার কোন পরিবর্তন হয় না। জন দুর্ভোগের শেষ নেই। কষ্টেরও পরিসীমা নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে, রাস্তার যানজটে, শেয়ার মার্কেটের দরপতনে, ভোটারবিহীন নির্বাচনে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। ডলার সংকটে, লোডশেডিং আর বেকারত্বের অভিশাপ, লাগামহীন দুর্নীতি, সুশাসন আর সামাজিক ন্যায়বিচারের অভাবে মানুষ দিশেহারা। কষ্টে কষ্টে মানুষ তীরবিদ্ধ পাখির মত ছটফট করছে এবং কষ্টের পাথর বুকে নিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
দিনের পর দিন সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সরকারকে আর ভালোবাসতে পারছে না, কষ্ট হচ্ছে। কারণ, পেটে খেলে পিঠে সয়। আগাম দুর্ভিক্ষের আভাসে মানুষ অস্থির। বিশ্বের দুর্ভিক্ষের তালিকায় ৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এটা সর্বত্রই আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এ সময়ে মজুতদারদের উপর কঠোর নজরদারি রাখতে হবে বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে হুঁশিয়ার করেন এবং এক ইঞ্চিও জায়গাও অনাবাদী না রেখে খাদ্যশস্য উৎপাদনের নির্দেশ দেন।
মামা,
দেশের কারাগারগুলোতে প্রায় ৮৩ হাজার বন্দী রয়েছেন। তাদের জন্য মাত্র ৪ জন চিকিৎসক রয়েছেন (প্রথম আলো, ৯ অক্টোবর ২০২২)। শুনলে অবাক লাগে। ভিআইপি বন্দীরা কারাগারের বাইরে কিছু হাসপাতালে সেবা নিতে পারলেও সাধারণ বন্দীদের বেশীর ভাগের ভাগ্যে চিকিৎসা জুটে না। অমানবিক। মোট ৬৮ কারাগারের জন্য ১৪১ টি চিকিৎসক পদের ১৩৭ টি খালি। সারাদেশের কারাগার গুলোতে মোট বন্দীর ধারন ক্ষমতা ৪২ হাজার ৬২৬ জন।
এখন বন্দীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুনের বেশী। বর্তমানে ৮২ হাজার ৭৬৬ জন কারাবন্দী। কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কারাগারে একজন মনোরোগ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কোন কারাগারে একজন চিকিৎসকও নেই। বন্দীরা মানসিক ও শারীরিক সমস্যা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঠিকমত চিকিৎসা পাচ্ছেনা।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৭২ শয্যার হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় নেই, রেডিওলজিস্ট নেই, টেকনোলজিস্ট নেই। কোন ল্যাব নেই, যন্ত্রপাতি নেই। ফলে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছেনা এমনকি প্রাথমিক চিকিৎসাও ঠিক ভাবে দেয়া যাচ্ছেনা। যথা সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে অনেক কয়েদীর মৃত্যু হয়েছে। আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। চিকিৎসার অভাবে বন্দী মারা গেলেও এসব মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে কারা কর্তৃপক্ষ চালিয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, “যেদেশে গরিব মানুষের অধিকার নেই, সেখানে রাষ্ট্র কারাবন্দীদের পেছনে টাকা খরচ করবে তা চিন্তাও করা যায়না।” তিনি আরো বলেন, কারাবন্দীদের মানবাধিকারের দিকে কারো লক্ষ্য নেই। প্রতি ক্ষেত্রে চরম অব্যবস্থাপনা। খাবার, চিকিৎসা, আবাসন সব ক্ষেত্রে পদে পদে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন তারা।” দেশে মানবাধিকার আছে কি নেই, তা সরাসরি বলে সরকারের রোষানলে পড়ার প্রয়োজন নেই। আসলে, যে যায় লঙ্কা, সে হয় রাবণ।
মামা,
গত ২৯ অক্টোবর শনিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২ ব্যাচের বন্ধুদের আনন্দ ভ্রমনের আয়োজন। উদ্দেশ্য পদ্মা সেতু ভিজিট ও জাতির পিতার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। ঢাকা/টুঙ্গিপাড়া এ ভ্রমণে শতাধিক জনের অংশগ্রহন। সকাল ৮ টায় পল্টন থেকে যাত্রা শুরু তবে ভাঙ্গায় চা-বিরতি। রথ দেখা কলা বেচা। দীর্ঘ করোনাকালীন সময়ে সবাই গৃহবন্দী। কতিপয় ব্যবসায়ী বন্ধু ছাড়া চাকরিজীবী সবাই অবসরে। কমবেশী নানাভাবে রক্তশূন্যতায়। চেয়ারবিহীন অচল মাল হলেও সবাই রসিক ও প্রাণবন্ত।
করোনায় আঠারো জন বন্ধু আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তাদের দুই একজন এর পরিবার আমাদের সঙ্গের সাথী। মাত্র তিন ঘন্টায় গোপালগঞ্জ শহর হয়ে টুঙ্গীপাড়ার মধুমতী নদীর পাশে খালের পাড়ের নির্ধারিত সুরম্য রেস্ট হাউজে উপস্থিত। কামরুলের সৌজন্যে এ আয়োজন। তবে সাইফুদ্দিন ও জামালের নেতৃত্ব অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
সাদেক বাতেন রওনক ওবায়েদের কর্মতৎপরতায় ভ্রমণ আরো মনোমুগ্ধকর ও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠে। মানিক আর আফসার এ খানের ফটোসেশনে ছেলেদের থেকে মেয়েরা বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তবে তাদের অঙ্গভঙ্গি আর চাহনি অনেকাংশে দায়ী। মেয়েদের সুবিধা অসুবিধা দেখার দায়িত্ব পালনে ওবায়েদ থেকে বাতেন অনেক এগিয়ে কিন্তু ওবায়েদ পিছিয়ে থাকার কারন সঙ্গে থাকা ভাবী। তারপর ও বলব, কয়লা ধুলে ময়লা যায়না। পুরনো অভ্যাস বদলাতে পারেনি ওবায়েদের খাবার টেবিলে মেয়েদের বসার উপস্থিতি তার প্রমাণ। এবার সবার দৃষ্টি আকর্ষণের মত একটি ঘটনা ঘটেছে।
আসলে আমাদের সমস্যা হলো কোথায় ইনশাআল্লাহ বা কোথায় ইন্নালিল্লাহ পড়তে হয় তা আমরা জানিনা। সাইফুদ্দিন আর সাদেকের বেলায় তাই ঘটেছে। এরা একই কালারের এমন দুটো গেঞ্জি পরেছে, দৃষ্টি নন্দনের বদলে দৃষ্টিকটু হয়েছে। কেউ সিঁদকাটা চোর, কেউ রাখাল ছেলে বলে ডাকছে। অথচ, একজন কলেজের হিসাবশাস্ত্রের প্রফেসর, অন্যজন বেসিকের কন্ট্রোলার অব একাউন্টস ছিলেন। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি রোষানলে। শরীরচর্চাবিদদের মতে, বেমানানের অন্যতম কারণ তাদের শারীরিক গঠন। এ প্রসঙ্গে জালালউদ্দিন রুমির কথাটি মনে পড়ে বেশি। তা হলো, “আমি অনেক মানুষ দেখেছি, যাদের শরীরে পোশাক নেই।
আমি অনেক পোশাক দেখেছি যেগুলোর ভেতরে মানুষ নেই।” বিকালবেলায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও জিয়ারতের কাজ করে জাদুঘর ও লাইব্রেরী পরিদর্শন করে গোপালগঞ্জের জেলা গেস্ট হাউজে শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করি। ডিনার শেষে আমরা আবার ঢাকা অভিমুখে রওনা হই। সফল আয়োজন। ধন্যবাদ কামরুল। আমাদের এ আলোচনা নিছক রঙ্গ রস ছাড়া আর কিছু নয়, তবে ফেনী সরকারী কলেজের বাংলার প্রফেসর রফিক ভুইঞার ক্লাসে কাব্যরস আর হাস্যরসের আলোচনার মতই হলো।
মামা,
আমরা সম্পদের পিছনের দৌড়াচ্ছি। জনগণের সম্পদ লুটপাট করছি। সম্পদের পাহাড় করছি। ক্ষমতার ফাপর দেখাচ্ছি। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নানা অপকৌশলে নিয়োজিত আছি। শত শত কোটি ডলার বিদেশে পাচার করছি। রিজার্ভ ফান্ড শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসছি। একবার ও জনদুর্ভোগের কথা ভাবছি? একবারও কি ভাবছি কেউ সন্তান ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে দায় মুক্তি চাইছে, কেউ একটা সন্তানের জন্য সারাটা জীবন হাহাকার করছে।
দামী খাটে শুয়েও আবার ঘুমের ওষুধ খেতে হচ্ছে। কেউ আবার হিমেল হাওয়ায় রাস্তার ওভারব্রিজে অঘোরে ঘুমাচ্ছে। গভীর রাতে কারো পাজেরো গাড়ী থামছে নিষিদ্ধ পল্লীতে ঘরে অপেক্ষারত স্ত্রী দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলছে। কেউ ভাঙ্গা ঘরে থেকেও স্ত্রীকে নিয়ে অবিরত সুখের স্বপ্ন বুনছে। কল্পনার ফানুস উড়াচ্ছে। কেউ লাখ টাকার ডাইনিং টেবিলে বসেও তৃপ্তি সহকারে ভাত খেতে পারছে না। কেউ পেঁয়াজ কাঁচামরিচ কচলায়ে গোগ্রাসে ভাত গিলছে। আসলে নানা রঙের মানুষ, নানান রঙের স্বপ্ন ঘুড়ি। তবে শেষ ঠিকানা সাড়ে তিন হাত মাটি।
পরিশেষে একটি গল্প দিয়ে আজকের লেখা শেষ করলাম। সুনসান রেল ষ্টেশন। দিনের শেষ ট্রেনটি প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে চলে গেছে। একা বৃদ্ধা বসেই আছেন। জানেন না পরের ট্রেনটি আসবে পরের দিন। এক কুলির নজর গেল সেদিকে। বৃদ্ধাকে বলল মাইজি তুমি কোথায় যাবে? বৃদ্ধা বলল, “দিল্লী যাব বাবা ছেলের কাছে। “কুলি বলল, “আজকে আর ট্রেন নেই মাইজি। “বৃদ্ধার অসহায় দৃষ্টি। চোখের পানি টলমল। কুলিটির বোধহয় দয়া হলো।
– মাইজি তোমাকে ওয়েটিং রুমে রেখে আসি। আমার সঙ্গে চল।
– তাই চল বাবা। কি আর করব।
– তোমার ছেলে কি দিল্লীতে থাকে?
– হ্যাঁ বাবা।
– কি করে?
– রেলে কি যেন একটা কাজ করে।
– নামটা বল দেখি। যোগাযোগ করা যায় কিনা দেখছি।
– ও তো আমার লাল। সবাই ওকে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী বলে ডাকে যে।
তিনি তখন ভারতীয় রেলওয়ের কেবিনেট মিনিস্টার। মুহূর্তের মধ্যে গোটা স্টেশন তোলপাড়। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলো সালুন যাকে বলে Saloon Car। বৃদ্ধা অবাক। তার ছেলের এত ক্ষমতা। লাল বাহাদুর কিছুই জানতেন না। সমস্ত আয়োজন করেছিল ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ। পরিশেষে একটিই কথা এমন মা না হলে অমন ছেলে হয়? এ রকম নেতা এখন দুর্লভ। এরা ক্ষমতা প্রতিপত্তির জন্য পদে বসেননি। এরাই পদকে অলংকৃত করেছেন। ছেলের দেখা পাওয়ার পর তিনি ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “বেটা তু রেলমে কেয়া কাম কারতে হো, এ লোগ পুছা তো ম্যায়নে কুছ নেহি বোল পায়া। “তার উত্তরে ছেলে বলেছিলেন, “ছোটিসি কাম, মা। “
ইতি
তোমারই ভাগিনা
চলবে…