কর বাড়ানোর মাধ্যমে তামাকজাত পণ্যের লাগাম টানার দাবি জানিয়েছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের চিকিৎসক ডা. মাহবুব সোবহান। সেইসঙ্গে প্রতিবছর কর বাড়লেও তামাকজাত পণ্য ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘তামাক কোম্পানির বহুল প্রচারিত রাজস্ব মিথ এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
আরও পড়ুন…অজুর সময় পুরো মাথা মাসেহের সুন্নত নিয়ম
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি ও ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজিত হয়।
ডা. মাহবুব সোবহান বলেন, বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত আইন অমান্য করে তামাকের ব্যবহার বাড়াচ্ছে ও কর ফাঁকি দিচ্ছে। প্রতিবছর কর বাড়লেও প্রচলিত কর কাঠামোর ত্রুটির কারণে তামাকজাত পণ্যের দাম ভোক্তার নাগালের মধ্যেই থাকছে। অথচ কর ও দাম বাড়ানোর বিষয়টিকে তামাক নিয়ন্ত্রণে সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হিসেবে বিবেচিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের তামাক কোম্পানিগুলো বিশেষ করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (ব্যাট) সরকারকে সর্বোচ্চ পরিমাণ ট্যাক্স দেওয়ার তথ্য দিয়ে থাকে। তবে বাস্তবে তামাক খাতের রাজস্বের ৯৪ শতাংশেরও বেশি আসে জনগণের ভ্যাট থেকে। অনেকদিন ধরে ভোক্তাদের ওপর প্রদত্ত ভ্যাটকেও তামাক কোম্পানি তাদের প্রদত্ত রাজস্ব বলে চালিয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র কর বাড়িয়ে ২০০৭ থেকে ২০১০ এই তিন বছরে ইউরোপের ৪১টি দেশের ৩৫ লাখ মানুষকে তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। তামাক ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট জনস্বাস্থ্য ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরপরেও তামাকজাত দ্রব্যের কর বাড়াতে তেমন আশানুরূপ কোনো পরিবর্তন আসেনি।
ডা. মাহবুব সোবহান বলেন, সিগারেটের প্যাকেটে মুদ্রিত খুচরা মূল্যের আগে বা পরে সর্বোচ্চ/সর্বনিম্ন শব্দটি উল্লেখ নেই। এতে স্থান ভেদে পণ্যের মোড়কে মুদ্রিত মূল্যের থেকে অধিক মূল্যে তামাকজাত পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এই অতিরিক্ত মূল্যের ওপর কোনো ধরনের কর ধার্য না হওয়ায় সরকার প্রতিবছর প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মূলত দুইটি বিদেশি কোম্পানি দেশের তামাক ব্যবসার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা এদেশ থেকে শুধু লভ্যাংশই নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দায়হীনভাবে রেখে যাচ্ছে তামাকের ফলে সৃষ্ট রোগ, অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক ক্ষতি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর তামাক খাত থেকে সরকারের উপার্জিত রাজস্বের বিপরীতে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় সরকারের ব্যয় হয় ৭.৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
আরও পড়ুন…দক্ষিণ যুবলীগের কমিটি ঘোষণা
আলোচনা সভায় এক প্রশ্নের জবাবে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ গোলাম মহিউদ্দিন ফারুখ বলেন, দাম বাড়ালেই ধুমপান কমে যাবে আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। তবে সামগ্রিক বিবেচনায় ধূমপায়ীর সংখ্যা ৪৩ থেকে কমে ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
ইবাংলা/জেএন/১৬ নভেম্বর ২০২২