২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সিনচিয়াং কর্মসভা আয়োজনের পর, সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পৌর সরকার গ্রাম পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। বর্তমানে দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের অনেক গ্রাম অনেক উন্নত হয়েছে।
আজকের আসরে আমি আপনাদেরকে দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের গ্রামগুলোর ধনী হওয়ার গল্প শোনাবো।দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ে অবস্থিত কিজিলসু কিরগিজ স্বায়ত্তশাসিত বান্নারের আকতো জেলার বরেন থানার বরেন গ্রামে গরুপালন শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দারা ধনী হয়েছেন।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ২০ দোকান পুড়ে ছাই
বারেন গ্রামের দুই-তৃতীয়াংশ গোবি মরুভূমি। সে জন্য এখানে কৃষি শিল্প উন্নয়ন সম্ভব না। ২০১৯ সালে গ্রামটি চীনের অন্য এলাকার অর্থ সাহায্য ও নিজের সম্পদ থেকে নেওয়া অর্থ মিলিয়ে মোট ৩০ লাখ ইউয়ান বিনিয়োগ করে গরুর খামার নির্মাণে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা উসমান জাংদাউতি হলেন গরুর খামারের একজন কর্মী। আগে তাঁর কৃষি কাজ থেকে বছরে আয় হতো মাত্র ২০ হাজার ইউয়ান। বর্তমানে তাঁর আয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, “আমি খামারে কাজ করছি দেড় বছর ধরে। বর্তমানে আমার মাসিক বেতন ৩হাজার ইউয়ানেরও বেশি। আমার জীবনমান উন্নত হয়েছে।”
স্থানীয় সরকারি সংস্থা জাতীয় দারিদ্র্য বিমোচন পরিকল্পনার আওতায় বারেন গ্রামকে গরুপালন শিল্পে সহায়তা করেছে। স্থানীয় সরকার গ্রামে বিশেষ কর্মদল গড়ে তুলেছে।
কর্মদলের কর্মী একবেলতোকবাই বলেন,“কেন্দ্রীয় সরকার সিনচিয়াংয়ের গ্রামের জন্য বিশেষ অর্থ বরাদ্দ করে। আমরা এ দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য গরু কিনেছি। প্রতি বছর তাঁদেরকে গরুর খামার থেকে মুনাফা প্রদান করি। তাঁদের আয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।”
আরও পড়ুন…১০ ঘণ্টাতেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি টেক্সটাইল মিলের আগুন
এ দিকে বান্নারে পতাকা উৎপাদন শিল্পের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দারা ধনী হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা এক করিম আইনওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর জন্মস্থানে ফিরে এসে স্থানীয় সহায়তায় একটি পতাকা কারখানা গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, “প্রতিটি উত্সবে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের বাড়ির জানালা ও দরজায় পতাকা ঝুলান। আমার মনে হলো, পতাকা এখানে ব্যাপকভাবে বিক্রয় করা যাবে। সেজন্য এ পতাকা কারখানা গড়ে তুলেছি। আমার কারখানা প্রতিবছরে প্রায় ১লাখ পতাকা উৎপাদন করতে পারে।”
পতাকা কারখানায় গত বছরের অক্টোবরে উৎপাদন শুরু হয়। অনুমান অনুযায়ী, বার্ষিক মুনাফা হবে দেড় লাখ ইউয়ান। বর্তমান কারখানায় ১৪জন কর্মী রয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০জন ছিলেন হতদরিদ্র বাসিন্দা। শ্রমিক বুওয়েই হাইলিকিম ইউসুপ বলেন, কারখানাটিতে কাজ করার পর তাঁর আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। তিনি বলেন, “আগে আমার পরিবার কৃষিকাজ করতো। আমার নিজের আয় ছিল না। তখন আমাদের জীবনমান নিম্ন ছিল। তবে বর্তমানে আমার নিজের আয় আছে। আমি খুবই সুখী।”
কারগাশ এলাকার জেপু জেলার সাইলি থানার হুয়াংদি গ্রামে ওয়ালনাট উৎপাদন কারখানার মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দারা ধনী হয়েছেন। গ্রামটির ওয়ালনাটজাত পণ্য চীনের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় হয়। থানাটির গর্ভনর মাইমতজং তুরাফ বলেন, “ওয়ালনাটজাত পণ্য উত্পাদন কারখানা স্থাপনের আগে স্থানীয় কৃষকরা ওয়ালনাট বিক্রি করতেন মাত্র ৬ থেকে ৯ ইউয়ান প্রতি কেজি। তবে বর্তমানে কমপক্ষে ১০ ইউয়ান প্রতি কেজি দাম পাচ্ছেন তারা। কৃষকদের আয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ দিকে ওয়ালনাট শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। ওয়ালনাট কারখানার কর্মীর সংখ্যা ৫ শতাধিক।”
হুয়াংদি গ্রাম আগে দরিদ্র ছিল। এখানে বিশাল জনসংখ্যা এবং আবাদি জমির আয়তন কম। স্থানীয় বাসিন্দা টাক্সুংগুল জায়তি কয়েক বছর আগে গ্রামের নতুন আবাসিক এলাকায় স্থানান্তরিত হন। তার বসবাসের অবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। প্রতিটি পরিবারের একটি করে ছোট বাগান আছে। কলের পানি, বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে।
তিনি বলেন, “আমার একটি মেয়ে আছে, যে উরুমুছিতে কাজ করে, তাঁর নিজের আয় আছে। গত বছর আমাদের ওয়ালনাট শিল্প থেকে আয় ছিল ২০ হাজার ইউয়ানেরও বেশি। এ ছাড়াও, আমরা গরু পালন করি।”তিনি আরও বলেন, আগে তাঁরা ওয়ালনাট চাষ করতেন। তবে তখন প্রযুক্তি উন্নত ছিল না। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ওয়ালনাট শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি তাঁদের এ ক্ষেত্রের আয় অনেক বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন…মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক
বিভিন্ন শিল্প ছাড়াও গ্রামটিতে অবকাঠামো অনেক উন্নত হয়েছে। বড় বড় সড়ক, দূষিত পানি পরিশোধনের কারখানা ইত্যাদি এখানে আছে। বর্তমানে দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের গ্রামগুলো পুনরুজ্জীবনের পথে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সূত্র: ছাই ইউয়ে ,সিএমজি।
ইবাংলা/জেএন/২৯ নভেম্বর ২০২২