ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের টুংরাকান্দি গ্রামের ইলিয়াস কাজী ও উজ্জ্বল কাজী। তারা ইউটিউব দেখে কমলা চাষ করে সফল হয়েছেন। দুই বন্ধুর কমলা বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে কমলা। তাদের কমলা বাগান দেখতে প্রতিদিন দূর থেকে ছুটে আসছে নানা শ্রেণির মানুষ। জাহাপুর মূলত লিচুর জন্য বিখ্যাত। লিচুগ্রাম খ্যাত জাহাপুরে এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বড় আকারে কমলা বাগান করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে জানা যায়, মোট ৫২ শতাংশ জমির ওপর কমলা বাগান। গাছের পরিমাণ প্রায় দেড় শতাধিক। প্রতিটি গাছে প্রচুর কমলা ধরেছে। কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে গাছ। বাগান দেখতে আসা অনেকেই কমলা ছিঁড়ে খাচ্ছেন। কেউ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কমলা ধরে ছবি তুলছেন।
আরও পড়ুন…৮ ডিসেম্বর ভর্তি আবেদন শুরু
ফরিদপুর শহর থেকে ছুটে এসেছেন কামরুজ্জামান হীরা ও আকবর বিশ্বাস রাজুসহ বেশ কয়েকজন। তারা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এর আগে কখনও কমলা বাগান দেখা হয়নি। বাগানের কথা শুনে দেখতে এসেছি। খুব ভালো লেগেছে। খেতেও বেশ সুস্বাদু। গাছ থেকে ছিঁড়ে খেলাম। একশ টাকা কেজি দরে কয়েক কেজি কিনে নিলাম। বাগান মালিকদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি। আমরাও স্বল্প পরিসরে কমলা বাগান করার উদ্যোগ নেবো।’
বোয়ালমারী থেকে আসা শাহিনুজ্জামান খান ডেভিড বলেন, ‘কমলা বাগানের খবর শুনে এসেছি। বাগান ঘুরে দেখলাম। বেশ ভালো লেগেছে। কমলা ছিঁড়ে খেলাম। বাড়ির জন্য কিনে নিলাম কয়েক কেজি। পরামর্শ নিয়েছি। আমি এ বছরই বাগান করার উদ্যোগ নিচ্ছি।’
আরও পড়ুন…ব্রণ দূর হবে সহজ উপায়ে
বাগান মালিক ইলিয়াস কাজী বলেন, ‘আমার বন্ধু উজ্জ্বল কাজী ইউটিউব দেখে উদ্যোগ নেন কমলা বাগান করার। পরে তার সহযোগিতা নিয়ে ৩ বছর আগে চুয়াডাঙ্গার একটি নার্সারি থেকে দেড় শতাধিক চারা সংগ্রহ করি। সেই চারা ৫২ শতাংশ জমিতে রোপণ করি। এরপর ইউটিউব দেখে গাছের পরিচর্যা করা হয়। গত বছর বেশ কয়েকটি গাছে ফুল ও ফল হলেও বেশিদিন থাকেনি। বেশিরভাগ ফুল ও ফল ঝরে পড়ে। কিন্তু আমরা মোটেও হাল ছেড়ে দিইনি। এ বছর সবাইকে অবাক করে দিয়ে গাছগুলোয় ব্যাপক কমলার দেখা মেলে।’
ইলিয়াস কাজীর স্ত্রী শাপলা বেগম জানান, এ বছর বাগান থেকে পঞ্চাশ হাজারের বেশি টাকার কমলা বিক্রি করা হয়েছে। এখনও যে কমলা আছে, তা আরও পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি বিক্রি করা সম্ভব। আগামী বছর এ বাগান থেকে ২-৩ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি স্বামীর সঙ্গে দিন-রাত বাগানের পরিচর্যা করি। বাগানে ২ জাতের কমলা আছে। একটি চায়না জাতের, অন্যটি দার্জিলিং জাতের। বাগান থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। আগামী বছর আরও জমিতে কমলার বাগান করার কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি সাহায্য পেলে বড় আকারে বাগান করা সম্ভব হবে।’
বাগান সম্পর্কে উজ্জ্বল কাজী বলেন, ‘দুই বন্ধু ইউটিউব দেখে কমলা চাষের সিদ্ধান্ত নিই। বাগানের দেখাশোনা করেন ইলিয়াস ও তার স্ত্রী। আমি বিভিন্নভাবে তাদের সাহায্য করি।’
হাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শামসুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নটি লিচুর জন্য বিখ্যাত। জাহাপুর থেকে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার লিচু বেচাকেনা হয়। লিচুর গ্রামে কমলা বাগান শুরু করেছেন ইলিয়াস কাজী ও উজ্জ্বল কাজী। আমি এ বাগান দেখে কমলা চাষের উদ্যোগ নিয়েছি। অনেকেই আমার মতো উদ্যোগ নিয়েছেন।’
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিয়াউল হক বলেন, ‘শুনেছি দুই তরুণ কমলা চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছেন। ফরিদপুর জেলার মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের জন্য মোটামুটি উপযোগী। এ বিষয়ে প্রয়োজনে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
ইবাংলা/বায়েজীদ/৩০নভেম্বর ২০২২