পুরুষদের উদ্দেশ্য করে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের প্রতি কল্যাণকামী হও।’ অন্য হাদিসে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘তোমরা জেন রেখো! তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের ওপর অধিকার আছে। আর তোমাদের স্ত্রীদেরও অধিকার আছে তোমাদের ওপর।’
স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের সম্পর্ক কেমন হবে; তার বিবরণ ফুটে উঠেছে স্বয়ং নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পারিবারিক জীবনে, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। তাহলো-
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন। একবার তিনি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় ইচ্ছা করে হেরে যান। কিছুদিন পর পুনরায় দৌড় প্রতিযোগিতায় হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হেরে যান। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আয়েশা! আজ আমি তোমাকে হারিয়ে দিয়েছি, তুমি আমার সঙ্গে পারনি। এটা হলো প্রথম প্রতিযোগিতায় জিতে যাওয়ার বদলা।
২. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক সময় স্ত্রীদের সঙ্গে বসে বিভিন্ন ঘটনা, কাহিনি ও অন্যান্য আলোচনা করতেন। এমনকি প্রত্যেক স্ত্রীও নবিজিকে পালাক্রমে নতুন নতুন কিসসা-কাহিনি শোনাতেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে নিজেও তাঁদের কিসসা শোনাতেন।
৩. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তিনি আমাদের সঙ্গে এমনভাবে হাসতেন, কথা বলতেন ও বসে থাকতেন, আমাদের মনেই হতো না যে তিনি একজন মহান রাসুল।
৪. তিনি কখনো তাঁর স্ত্রীদের ভর্ৎসনা, তিরস্কার করতেন না এবং তাদের সঙ্গে কটাক্ষ বা রুক্ষ ভাষায় কথা বলতেন না। বরং মায়া-মমতায় মন জুড়ানো আকর্ষণীয় কথা বলতেন। তাঁর কথার ভাবভঙ্গিতে স্ত্রীদের মন জুড়িয়ে যেতো।
৫. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের কোনো কথা তাঁর মনের বিপরীত হলে তাদের সে কথা থেকে মনোযোগ ফিরিয়ে অন্য চিন্তা করতেন। তিনি স্ত্রীগণকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাদের চুমু দিতেন এবং কখনো কখনো তাদের উরুতে মাথা রেখে শুয়ে বিশ্রাম নিতেন।
৬. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা পাত্রের যে স্থানে মুখ দিয়ে পানি পান করতেন, বিশ্বনবিও সে স্থানে মুখ দিয়েই পানি পান করতেন। আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁড়ের যে জায়গা থেকে গোস্ত খাওয়া শুরু করতেন হজরত আশয়া রাদিয়াল্লাহু আনহাও হাড়ের ওই জায়গা থেকে গোস্ত খাওয়া শুরু করতেন।’
৭. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত খুশি মনে মুচকি হাসতে হাসতে গৃহে প্রবেশ করতেন এবং দরদমাখা কণ্ঠে সালাম দিতেন। বিশ্রামের সময় বিছানার ব্যাপারে কোনো দোষ ধরতেন না, এমনকি বিছানা যেভাবে পেতেন তার ওপরই শুয়ে পড়তেন।
৮. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম স্বামী যে তার স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। আমি আমার স্ত্রীদের সঙ্গে সবার চাইতে ভালো ব্যবহার করি।
এসব দৃষ্টান্ত থেকে প্রমাণিত হয় যে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীদের সঙ্গে তাঁর কত মধুর সম্পর্ক ছিল। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাম্পত্য জীবন হোক তাঁর উম্মতের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।
বিশ্বনবির দাম্পত্য জীবনের আলোকে বোঝা যায় যে, সুখ ও শান্তিময় জীবন যাপনে স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্কে বিকল্প নেই। জীবনকে সুখ-শান্তি ও আনন্দময় করে তুলতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও অনুকরণ আবশ্যক কর্তব্য।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাদের প্রত্যেকের দাম্পত্য জীবনকে সুখ ও শান্তিময় করে গড়ে তুলতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাম্পত্য জীবনের মতো করেই রাঙিয়ে নেওয়া জরুরি। আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুহাম্মাদিকে তাঁর মতো করে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইবাংলা/জেএন/১৮ জানুয়ারি, ২০২৩