দুবাইয়ে গিয়ে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর। এ ঘটনায় নানা নাটকীয়তা করেছেন তিনি। কখনও ছবিকে এডিট বলে দাবি করেছেন, আবার কখনও স্বীকার করেছেন বৈঠক করার ঘটনা।
নুরের আগেও মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী। ওই ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনা ও মামলার জেরে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে।দেশে ফেরার পরেও একেক সময় একেক রকম মন্তব্য করেছেন নুরুল হক নুর। এমনই এক বক্তব্যে আসলাম চৌধুরীর পক্ষে সাফাই গাইলেন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব।
এক ভিডিও বক্তব্যে নুর বলেন, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর অন্য কোনো মামলা আছে কিনা আমি সেটা জানি না। কিন্তু পত্রপত্রিকায় যেটি আলোচিত হয়েছে তিনি ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার কথিত এই লোক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করার অপরাধে সরকার তাকে কারাগারে রেখেছে। সে মিটিং করেছে কি করেনি, সেটা কিন্তু আমরা জানি না।
বিএনপির সমালোচনা করে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব বলেন, ‘বিএনপিও এ বিষয়টি নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করেছিল। সেটা বিএনপির উচিত হয়নি। তাদের দলের একজন নেতা, তার পক্ষে বিএনপির অবস্থান থাকা উচিত ছিল।’
আরও পড়ুন…বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু
যদিও আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে নিজের ঘটনার মিল নেই বলে জানান নুর।সম্প্রতি নুরুল হক নুর কাতার যান, সেখান থেকে দুবাই। এখানে তিনি দেশ থেকে ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক করেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দাসূত্র। এরপর ফেসবুক লাইভে এসে নানা ধরনের উসকানিমূলক কথা বলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি দুবাই থেকে সৌদি আরব যান। সেখানে ওমরাহ পালন করেন। এ সময় প্রকাশিত হয় দুবাইয়ে ইসরাইলের গোয়েন্দা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তার ছবি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি এবং কূটনৈতিক কোনো সম্পর্কও নেই। ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ সব সময় ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দুদিন আগেও জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে ইসরাইলি গোয়েন্দার সঙ্গে ছবি তুলে নুরুল হক নুর কি দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন কিনা, সে প্রশ্নও উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, ভিপি নুর কি পবিত্র ওমরাহ পালনের কথা বলে বিদেশ ঘুরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টদের সঙ্গে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন? সাফাদির সঙ্গে ওই ছবি প্রকাশ পাওয়ার পর অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, ভিপি নুর পবিত্র ওমরাহ পালনের কথা বলে দেশ ছাড়লেও মুসলিমবিরোধী ইসরাইলির সঙ্গে বৈঠক করলেন কেন?
ভিপি নুরের সঙ্গে মেন্দি এন সাফাদির ছবি দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, দেশে আলেম-ওলামার জন্য নুর কান্নাকাটি করেন; কিন্তু ক্ষমতায় যেতে ইসরাইলের শরণাপন্ন হন। অনেকে বলছেন, চরম সাম্প্রদায়িক বক্তৃতা দেওয়া নুর স্রেফ পাবলিসিটির জন্য ধর্মের কথা বলেন।
এদিকে এ বিষয়ে জানার জন্য নূরের হোয়াটসঅ্যাপে সময়ের আলোর পক্ষ থেকে একাধিকবার কল করা হয়। মেন্দি সাফাদির সঙ্গে একসঙ্গে ছবির বিষয়ে নুরুল হক নূর বলেন, এটি এডিট করা করা ছবি, ছবিটা দেখলেই বোঝা যায় ঐ ভদ্রলোকের ছবির পাশে আমার যে ছবিটা বসানো হয়েছে এটি এডিট করা, ছবির লাইটিং ফোকাস দেখলে আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে। সাফাদির সঙ্গে আমার কোন পরিচয় নেই। আমি ওমরা করতে এসেছি। আমার হায়া কার্ড করা থাকায় আমি দুবাই ও কাতারে আমার সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেছি।
নুরুল হক নুর বলেন, মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তাতে কি। বাংলাদেশের আইনে কি কোথাও বলা আছে ছবি তোলার আগে সরকারের পারমিশন নিবে আদালতের অনুমতি নেবে। গোয়েন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নেবে। তবে আপনারা কেন অতি উৎসাহী অতি কথন গল্প রচনা করছেন।
২০১৬ সালে বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী বিদেশে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে দুজনের ছবি ফাঁস হয়ে গেলে দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। একপর্যায়ে আসলাম চৌধুরীর দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের উদ্দেশে আসলাম চৌধুরী ইসরায়েলি নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানায় পুলিশ।
ইবাংলা/জেএন/২০ জানুয়ারি, ২০২৩