১০ দফা দাবিতে রাজধানীতে পদযাত্রা করেছে বিএনপি। শনিবার বেলা আড়াইটায় উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় মালিবাগের আবুল হোটেলের সামনে গিয়ে পদযাত্রা শেষ হয়। ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে রাজধানীতে ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) বিএনপির ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব। ঘোষণা অনুযায়ী প্রথম দিনের পদযাত্রা শেষ হলো। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ৩১ জানুয়ারি গাবতলী টার্মিনাল থেকে শুরু করে মিরপুর ১ নম্বর হয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করবে মহানগর উত্তর বিএনপি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে আন্দোলন দমানো যাবে না। ‘বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠানো হবে’- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা যে কত প্রতিহিংসাপরায়ণ, তারা যে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তার (প্রধানমন্ত্রী) এই উক্তিতেই প্রমাণ হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এই ধরনের উক্তি করেছেন তিনি।’ হুমকি-ধমকি দিয়ে বিএনপির আন্দোলন থামানো যাবে না বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব। শুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি ৩০ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত এবং ১ ফেব্রুয়ারি মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। ঢাকাকেন্দ্রিক পদযাত্রার এই কর্মসূচিতেও সমর্থন দিয়েছে যুগপৎ আন্দোলনকারী দলটির সমমনারা।
পদযাত্রার এই কর্মসূচিকে ‘নতুন আন্দোলন’ আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমরা এক নতুন আন্দোলন শুরু করলাম। এই নীরব যাত্রার মধ্য দিয়ে, এই নীরব প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব।
এই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে এই সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, আর কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবার ক্ষমতা দিন। অন্যথায় আপনাদের (সরকার) অত্যন্ত ভারাক্রান্তভাবে চলে যেতে হবে, পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।’
দেশের বর্তমান অবস্থার চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চালের দাম বেড়ে গেছে, ডালের দাম বাড়ছে, ডিমের দাম বেড়ে গেছে, তেলের দাম বেড়েছে, লবণের দাম বেড়ে গেছে। এই যে রিকশাশ্রমিক ভাইয়েরা, কারাখানার শ্রমিক ভাইয়েরা এখন জীবনযাপন করতে পারছেন না। তাঁরা চাল-ডাল-তেল-লবণ কিনতে পারছেন না।
বাচ্চাদের ডিম খাওয়াতে পারছেন না। শুধু তা-ই নয়, আজকে কথা বলতে গেলে গ্রেফতার করা হয়, প্রতিবাদ করতে গেলে মামলা হয়, মিথ্যা মামলা-গায়েবি মামলা দিয়ে সমস্ত বিরোধী দলকে আটক করে রাখা হচ্ছে। সমগ্র দেশকে এরা (সরকার) একটা কারাগারে পরিণত করেছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমার ভোটের অধিকার, আপনার ভোটের অধিকার। সে জন্য আমরা বলেছি, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সেই কারণে আওয়ামী লীগ সরকারকে, শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।’
পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্যসচিব আমিনুল হক বক্তব্য দেন। এদিকে ঢাকার ব্যস্ততম সড়কে পদযাত্রা শুরুর আগপর্যন্ত যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকে। তবে পদযাত্রা শুরুর পর ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক যাত্রী হেঁটে গন্তব্যে যান। বিএনপির এই কর্মসূচি ঘিরে বাড্ডা-মালিবাগ সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ইবাংলা/জেএন/২৮ জানুয়ারি, ২০২৩