ভাগিনার খোলা চিঠি (১৪)

এ বি সিদ্দিক

মামা,

অবসর সময় আসলেই কষ্টের। সময় গুলো বন্দীদশা পাখির মতো যেন নষ্ট হওয়া ঘড়ির কাঁটা। সমমনা সমবয়সের লোকের অভাবের কারণে আড্ডাবাজিটা তেমন জমে ওঠেনা। রাজা উজির মারার অভ্যাস তো নেই। তবে দেশ ও দশের কথা চিন্তা করার বেশ সময়হাতে থাকে। এ ছাড়া আবেগ অনুভূতি নানাভাবে তাড়িত করে যা প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম মামা ভাগিনার খোলামেলা এ আলোচনা।

আসলে মামা আমাদের যুক্তিহীন তর্ক, অর্থহীন বক্তব্য, ভিত্তিহীন কথা বার্তায় মনে হয় আমরা রুপকথার রাজ্যে বাস করি। বক্তৃতা বিবৃতিতে এমন সব প্রসঙ্গ টেনে আনা হয় যা সময়ে অসময়ে দিনমজুরদের কাছেও হাস্যরসের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় নেতা নেত্রীদের বাক্যালাপ বা সংলাপ শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যায়। রাজনৈতিক নেতারা মনে করে তাদের কথা পাবলিক বুঝে না।

হাততালিতে মুগ্ধ হয়ে যান। আসলে সাধারণ পাবলিক তাদের কথা আরও বেশী বুঝে তা তারা নেতা নেত্রীদের বুঝতে দেয় না। নেতারাও অনুধাবন করতে পারে না। ক্ষমতা থাকা অবস্থায় একরকম, ক্ষমতার বাহিরে থাকলে ভিন্নরকম।

প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করতে বিচারপতিরদের বয়স ৬৫ থেকে ৬৭ বছর করা হয় যা এখনও বলবৎ। এ জন্য ২০০৪ সালের ১৭ মে সংবিধান সংশোধন করা হয় [চতুর্দশ সংশোধনী]। বিরোধী দল আওয়ামী লীগের প্রবল আপত্তির মুখে কে এম হাসান কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করা সম্ভব হয়নি।

তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ক্ষমতাসীন দল নিজেদের প্রয়োজনে আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই ২০১১ সালের ৩০ জুন সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করে যা ছিলো ভয়াবহ স্বার্থপ্রনোদিত সিদ্ধান্ত। আদালতের সংক্ষিপ্ত রায়কে পুজি করে সংবিধান থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।এ পর্যন্ত দেশের সংবিধান ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে।

আসলে ডিগবাজিতে সবাই কম বেশী সিদ্ধহস্ত। শুনতে অবাক লাগে, বলতে লজ্জা হয়, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে রাজপথে রক্ত ঝরাতে হয়। আমরা আজ আবধি এমন নির্বাচন কাঠামো তৈরী করতে পারিনি যে,” আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেবো”।

নতুন প্রজন্মের কাছে নির্বাচন এখন প্রশ্নবোধক। এর দায় আমরা এড়াতে পারিনা। ভোটার হয়ে ভোট দিতে না পারার কষ্ট সত্যিই হতাশাজনক। আসলে জনগণের জন্য নেতাদের মায়াকান্নার অন্ত নেই, যাকে বলে “মাছের মার পুত্রশোক”। বর্তমান পরিস্থিতে দলীয় নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে জনদুর্ভোগের কথা জানানো যায় না।

এমন কি, কাছেই ভিড়া যায় না।তারা জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা কে কোন তোয়াক্কাই করে না। কারণ একটাই, তা হলো, তাদেরকে এখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হয় না। অথচ জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধুকে বার বার কারা বরণ করতে হয়েছে। যাপিত জীবনের অধিকাংশ সময়ই নির্জন কারাগারে কাটিয়েছেন।

নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য অসহযোগ আন্দোলন করেছেন। ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে তার সফল নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু আজ অবধি অর্থনৈতিক মুক্তি পাইনি। দেশের নাগরিক তাদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।

গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরের গায়েবী মামলার আসামী আলী আযম খান প্যারোলে মুক্তি পেয়ে হাতকড়া আর ডান্ডাবেড়ী পরা অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়েছে। গর্ভধারিণী মায়ের লাশ কবরে রাখার সুযোগ পায়নি। দারুণ কষ্ট আর আক্ষেপ। মানব সভ্যতার কত অধঃপতন হলে এ ধরনের নিষ্ঠুর অমানবিকতা দেখতে হয়। প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় এ ছবি প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপী সমলোচনার ঝড় উঠে ।

বিদেশের মাটিতে রেমিটেন্স যোদ্ধারাও ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন। প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদের আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম নামক সমালোচনা মূলক গ্রন্থের প্রাসঙ্গিকতা খুজে পাওয়া যায়। তার মতে, “আমাদের অজস্র স্বপ্ন ছিল।

গণতন্ত্রের, সমাজতন্ত্রের, ধর্ম নিরপেক্ষতার, বাঙালীত্বের, সাধারণ মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতার। আমরা কোন স্বপ্নকে সফল করতে পারিনি। মহান শিক্ষক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, যিনি রাজাকারের হাতে নিহত হয়েছিলেন তিনিই পূর্বদেশ এ প্রকাশিত [ ১৯৬৯ বা ১৯৭০ এ] একটি লেখায় প্রস্তাব করেছিলেন ‘’বাংলাদেশ’’ নামটি। তার রাখা বাংলাদেশ নামক দেশে এখন নিরন্তর মিথ্যাচারের মধ্যে ডুবে থাকতে হয়।

রাষ্ট্র অবিরাম শেখায় যে মিথ্যাচারই সত্যাচার, দুর্নীতিই সুনীতি, অত্যাচারই জনগনকে সুখী করার পদ্ধতি। প্রতারণাই সুসমাচার, অবিচারই সুবিচার, অনাধিকারই অধিকার, বর্বরতাই সংস্কৃতি, দাম্ভিকতাই বিনয়। ক্ষমতাসীনদের একচ্ছত্র তান্ডব আর নিস্পেষণই গনতন্ত্র।

“ আসলে আমরা তোষামোদকারী এবং চরম সুবিধাবাদী। নিজের স্বার্থ আর দেশবিরোধী কর্মকান্ড ছাড়া গঠনমূলক সৃষ্টিশীল অন্য কিছু চিন্তা করিনা। দেশের প্রতি মমত্ববোধ, দেশপ্রেম , মাটি ও মানুষের প্রতি মায়া বলতে কিছুই নেই।

আমরা সত্যের চাইতে মিথ্যাকে, ভালোর চাইতে মন্দকে, আসলের চাইতে নকলকে, প্রমাণের চাইতে গুজবকে, বাস্তবের চাইতে কল্পনাকে, ডাক্তারের চাইতে ওঝাকে, প্রশংসার চাইতে নিন্দাকে, নির্মাণের চাইতে ধ্বংসকে, সৃজনের চাইতে বিলোপন কে, বেতনের চাইতে উপরিকে, নীতির চাইতে দূর্নীতিকে, যোগ্যতার চাইতে অযোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি যা অযৌক্তিক ও অবান্তর।

মামা,

দেশের কবিসাহিত্যিকেরা বেশ সংবেদনশীল। তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন। শাসক ও শোষকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সব সময়ে মানুষের কথা বলেন। তাদের প্রতিবাদের ভাষা কাব্যিক ও ছন্দময়। লিখতে গিয়ে আলোচিত ও সমালোচিত হয়ে উঠেন। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রখ্যাত কবি রফিক আজাদ লিখেছিলেন, “ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র চিবিয়ে খাব”।

একই সময়ে সাংবাদিক নির্মল সেন “স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই” সম্পাদকীয় লিখে দেশে বিদেশে আলোচিত হয়েছিলেন। নব্বই দশকে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী কামরুল হাসানের শেষ রেখাচিত্র ছিলো ‘’দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’’। স্বৈরশাসক এরশাদকে উদ্দেশ্য করেই ঐ চিত্রকর্ম। এতে এরশাদের অধঃপতন দ্রুত ত্বরান্বিত হয়। ছড়াকার আবু সালেহ বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছেন,

“ধরা যাবেনা ছোঁয়া যাবেনা বলা যাবেনা কথা। রক্ত দিয়ে পেলাম ভাইরে এমন স্বাধীনতা।“

আমরা কে কেমন আছি কি অবস্থায় আছি তা একমাত্র বিবেক চক্ষুই বলে দিতে পারে। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ উপলক্ষে গ্রাম থেকে আগত অনেক নিরাপরাধ লোক এখনও জেলে। তাদের পরিবার-পরিজন অর্ধাহারে বা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। কে কার খবর নেবে? ঐ দিন সামাজিক যোগাযোগে এক ছড়াকার দেশের বর্তমান নীতি ও আদর্শের কথা বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন,

“সত্য বাবু মারা গেছেন

বিবেক বাবুর জ্বর,

নীতির বাবা দেশ ছেড়েছেন

বিটিভির খবর।

উচিত বাবুর কানে তালা

জুলুম বাবুর বেজায় জোর

শান্তি বাবু অশান্তিতে

হবে না আর হয়তো ভোর।“

মামা,

ক্ষনিকের জীবন। রূপ, গুণ, অর্থবৃত্ত, আর ক্ষমতার বাহাদুরী বড়ই বেমানান। ক্যান্সারের লাস্ট ষ্টেজে থাকা রোগীটা কিংবা অল্পবয়সে দুটো কিডনী নষ্ট হয়ে যাওয়ার বাচ্চার বাবা অথবা আইসিইউতে পড়ে থাকা জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে উপস্থিত হওয়া মানুষটার অর্থ সম্পদ অর্থহীন মনে হয়। মাত্র কয়েকটা দিন বেঁচে থাকতে পারাই সব চাইতে মূল্যবান।

ক্লাসে পড়াশুনায় সবচেয়ে বেশী সময় ব্যয় করা ছেলেটি এখনও বেকার। সবার আগে সবচেয়ে ভাল জায়গায় চাকরি পাওয়া ছেলেটি রোড় এক্সিডেন্টে মারা গেছে। ৭/৮ বছর ধরে নিজের ইচ্ছামত একের পর এক প্রেম করা সুন্দরী মেয়েটি নিজের অনিচ্ছায় অপছন্দের মানুষের সাথে ঘর-সংসার করছে। ক্লাসের বখাটে, বার বার ফেল করা ছেলেটি এখন মন্ত্রী।

ক্যাডার সার্ভিসে উত্তীর্ণ মেধাবী ছাত্রটি উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে অপদস্থ। চাকরি হারানোর ভয়ে টু শব্দ করতে পারছেনা। এসএসসি থেকে ডিগ্রী পর্যন্ত তৃতীয় শ্রেণী পাওয়া ছেলেটি এখন দেশের প্রেসিডেন্ট। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না হওয়ার কারণে আবাসিক হলে একরাত ও কাটাতে পারেনি অথচ সে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। অবাক হওয়ার কারণ নেই, আফসোসের ও সুযোগ নেই।

ভারতে সংবিধানপ্রণেতা বাবা সাহেব আম্বেদকর নিম্ন বর্ণের হিন্দু ছিলেন বলে স্কুলের বারান্দায় বসে ক্লাস করতেন। মাইলের পর মাইল হেটে পরীক্ষা দিয়েছেন। কোন গাড়ীতে চড়তেন না। নিম্ন বর্ণের হিন্দু হওয়ার কারণে তার শ্লেট খাতা স্কুল মশাই স্পর্শ করতেন না।

তিনি ভারতের দলিত সমাজের কাছে ঈশ্বরের মতো পূজনীয় এবং সম্মানীয়। এন্ড্রু কার্নেগী কে ময়লা পোশাকের জন্য পার্কেই ঢুকতে দেয়া হয়নি। অথচ ৩০ বছর পর পুরো পার্কটাই কিনে ফেলেন আর সাইন বোর্ডে লাগিয়ে দেন “সবার জন্য উম্মুক্ত”। স্টিব জবস ব্যবহৃত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে ৫ সেন্ট করে কামাই করতেন সেটা দিয়ে খাবার কিনতেন।

প্রতি রোববার ৭ মাইল হেটে হরে কৃষ্ণ মন্দিরে যেতেন শুধুমাত্র একবেলা ভাল খাবারের জন্যে, তিনিই হলেন অ্যাপল এর প্রতিষ্ঠাতা। যে যুবকটি অভাবের তাড়নায় কুলিগিরি করতো এবং অংকে পারদর্শী নয় বলে বাসের কনট্রাক্টর হতে পারেননি কিন্তু পরবর্তীতে বৃটেনের অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হন, তিনি হলেন জন মেজর। মেধা, ধৈর্য আর অধ্যবসায় হলো জীবনের সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি।

মামা,

চিঠি অনেক সময় মানুষের জীবন ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়ায়। জীবনের বিশেষ মুহুর্তের ঘটনা প্রবাহের স্বাক্ষ্য প্রমাণের অন্যতম দলিল হয়ে পড়ে। যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা একাত্তরের চিঠি তারই প্রমাণ। স্বাধীনতা যুদ্ধের অজানা অনেক কাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা চিঠিতে উঠে আসে। মা-বাবা , ভাই-বোন স্ত্রী-পুত্রের কাছে লেখা চিঠি স্বাধীনতা যুদ্ধে শক্তি সাহস ও প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে।

অনেকে চিঠি লেখার পর যুদ্ধের মাঠে গিয়ে শহীদ হয়েছেন আর ফিরে আসতে পারেন নি, আর চিঠি ও লেখা হয় নি। একাত্তরের চিঠি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যুক্তিসঙ্গত। তেমনি গেদু চাচার চিঠি অথবা ভাগিনার খোলা চিঠি হয়ত এক সময়ে কোন কোন ঘটনার প্রামাণ্য দলিল হিসাবে কাজে আসবে, যার সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

৯৬ বছর বয়সে গত ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যান। তার মৃত্যুতে বৃটেন সহ সারা বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রপ্রধানগন রাণীর শেষকৃত্যানুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে রাণীকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাণীর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের আলোচিত ঘটনা প্রবাহের মধ্যে রাণীর লেখা একটি গোপন চিঠি বেশ কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে।

রাণীর মৃত্যুর পর এ চিঠির প্রতি মানুষের আগ্রহ বা কৌতুহল আরো বেড়ে গেছে। এ চিঠি লেখা হয় ১৯৮৬ সালের নভেম্বর মাসে। খোলা হবে আজ থেকে আরো ৬৩ বছর পর অর্থাৎ ২০৮৫ সালে। ২০৮৫ সালের আগে এ চিঠি খোলা হবেনা। অস্ট্রেলিয়ার সিডনীর একটি ভোল্টের কাঁচের বাক্সে চিঠিটি রাখা হয়েছে। এ চিঠিতে কি লেখা আছে, রাণী ছাড়া আর কেউ জানেনা। তবে অস্ট্রেলিয়াবাসীদের কোন বার্তা দিয়েছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।

সিডনীর মেয়রের ঠিকানা দিয়ে লেখা এ চিঠি ২০৮৫ সালের কোন এক উপযুক্ত দিনে খোলার নির্দেশনা দিয়েছেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সিডনীর কুইন ভিক্টোরিয়া নামের ভবনে স্বযত্নে রাখা হয়েছে রানীর লেখা চিঠির ভোল্ট। ১৯৮৬ সালের নভেম্বরে ভিক্টোরিয়া নামের ভবনের কাজ করা হয়েছে। সে সময়ে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এ চিঠি লিখেছেন।

মামা,

দেশ নিয়ে এতো চিন্তাভাবনা করে নন্দলাল হাওয়ার প্রয়োজন নেই। কে কখন কার শত্রু হয়ে দাঁড়ায় তা বুঝা বড় মুশকীল। তারপর ও অহেতুক নানা প্রশ্ন মাথায় এসে ঘুরপাক খায়। যার জবাব খুজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এসব চিন্তা করলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর কবিতাটি মনে পড়ে যায়, “কেউ কথা রাখেনি “। ৫০টি বছর কেটে গেলো। জনগণের কথা কেউ রাখেনা। ঐদিন সুকুমার রায়ের ‘’বিষম চিন্তা’’ কবিতাটির ৪ লাইন হঠাৎ মনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে।

মাথায় কত প্রশ্ন আসে

দিচ্ছেনা কেউ জবাব তার

সবাই বলে মিথ্যে বাজে

বকিসনে আর খবরদার।

সোডার বোতল খুললে কেন

ফসফসিয়ে রাগ করে

কেমন করে রাখবে টিকি

মাথায় যাদের টাক পড়ে।

আমরা মনে করি পদ্মাসেতু আত্মমর্যাদার প্রতীক। নিজেদের সাহস, দৃঢতা, আত্মবিশ্বাস আর সক্ষমতার প্রমাণ। আমাজনের পরে পৃথিবীর দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী পদ্মার উপর নিজস্ব অর্থায়নে দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এ সেতু পার হতে মাত্র ৭ মিনিট সময় লাগে।

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করেছি এবং মেট্রোরেল চালু করেছি যা ছিলো স্বপ্নের মত। উড়াল সেতু নির্মাণ করেছি, পাতাল রেল সহ অনেক মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নাধীন । আমরা অনেক উন্নয়ন করেছি। কিন্তু প্রশ্ন জবাবদিহি মূলক একটি সুষ্ঠ নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারি না কেন?

জঙ্গি দমন করেছি কিন্তু মাদক নিয়ন্ত্রন করতে পারিনা। স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ করতে পারিনা। গ্যাস আমদানি করতে পারি কিন্তু গ্যাস অনুসন্ধান করতে পারিনা যার কারণে দীর্ঘদিন থেকে নির্মানাধীন বাড়ি ফ্লাটে এ গ্যাস সংযোগ নেই। অথচ গ্যাস সংযোগের দাবীতে প্রখ্যাত কবি নির্মেলন্দু গুণ মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট ফেরৎ দিতে চাইছেন। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে মানুষ বাড়ি নির্মাণ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে শুধু গ্যাসের জন্যে।

আমরা দীর্ঘ একুশ বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে সক্ষম হয়েছি যেটা জাতির দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিলো। এমন কি আরো জটিল কঠিন বিষয়ের সমাধান বের করে হত্যার বিচার করেছি কিন্তু ত্বকী হত্যা ও সাগর রুনি হত্যার বিচার করতে পারিনি। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নির্মম ভাবে এ সাংবাদিক দম্পতিকে খুন করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য এ পর্যন্ত ৯৫ বার তারিখ পেছানো হয়েছে। যে আলমারিতে এ প্রতিবেদন রাখা হয়েছে সে আলমারির চাবি হারিয়ে গেছে বলে রুনির মা মন্তব্য করেন। তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৫ ঘন্টার মধ্যে খুনিদের খুজে বের করা হবে বলে নিশ্চিত করেছিলেন। সাগর রুনির ছেলে মেঘ মা-বাবার বিচার দেখে যেতে পারবে কিনা জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। মামা, প্রশ্ন গুলো আপনার কাছে মনঃপুত নাও হতে পারে তবে আমজনতা আমাকে নানাভাবে প্রশ্ন করে বিধায় আপনার কাছে বিষয় গুলো তুলে ধরলাম।

মামা,

গুলিস্তানের পকেটমারের একটি গল্প দিয়ে লেখা শেষ করবো। গুলিস্তানে পকেটমারের উৎপাতের কথা শুনে স্বর্গলোকের এক দেবতা মানুষ্যরূপ ধারন করে বুক পকেটে ৫০০ টাকার একটি নোট নিয়ে অত্র এলাকায় ঘুরতে লাগলেন। অনেক ঘুরাঘুরির পরও কেউ তার পকেটে হাত দেয়নি, পকেটের টাকা পকেটেই রয়ে গেছে। দেবতা হতাশ হয়ে বললেন, “বাংলাদেশের পকেটমারেরা মোটেই দক্ষ নয়, নিতান্তই অপদার্থ।

আমার পকেটের টাকা পকেটেই রয়ে গেল।“ তখন পাশ হতে এক ভবঘুরে বালক বলে উঠল, “পকেটের রাখা নোটটি জাল টাকা”। অদুরবর্তী আরেক বালক বলে উঠল, “নোটের এক জায়গায় ছেড়া ও আছে”। দেবতার অজান্তে দুই দুই বার পকেটে হাত পড়েছে। দেবতা নোটের অচলত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হলেন এবং পকেটমারদের অসাধারণ দক্ষতা দেখে বিষ্ময়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেললেন।

গুলিস্তানের পকেটমারদের এ দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে দেবতা দেশের সকল পথশিশু, ভবঘুরে, পকেটমার, ছিঁচকে চোরদের মহাসম্মেলন ডাকলেন এবং আশির্বাদ করলেন, “তোমরা সকলে অনেক বড় হবে দেশ সেবায় এগিয়ে আসবে”। দেবতার আশীর্বাদ বৃথা যায়নি।

কালে কালে বড় হয়ে তারা বড় মানুষ হলেন। কেউ বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনায় নিযুক্ত হলেন। কেউ সংসদ সদস্য, এমনকি মন্ত্রী ও হলেন এবং ব্যাংক ও রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের মহৎ কর্মে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করলেন। দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধনের মাধ্যমে জনগনের মানসপটে স্থায়ী শ্রদ্ধার আসনে আসীন হন।

কাফনের কাপড় এক আজব জিনিস।

মামা,

আমরা কি চিন্তা করি কখন ও?

যে বানায় সে বিক্রি করে দে,

যে কেনে সে ব্যবহার করেনা,

যে ব্যবহার করে সে জানেই না।

অথচ আমরা লোভে পড়ে কত অপকর্ম করি।মানুষকে ঠকাই আর অমানুষিক যন্ত্রনা দিয়ে থাকি, যা কোনক্রমেই সমর্থন যোগ্য নয়।

করোনা কালে কাছের এবং দূরের অনেক বন্ধু বান্ধব কে হারিয়েছি। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠিদের সংখ্যা অনেক। এদের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলতে চাই,

বন্ধুরা যেখানে আছিস, ভাল আছিস

আমাদের কথা একটু মনে রাখিস।

কয়দিন পর তো এসেই যাবো

ডাকিস বা না ডাকিস।

হয়তো কথা হবে না, দেখা হবে

সেদিন ইয়া নাফসি,ইয়া নাফসি মুখে থাকবে!!

ইতি তোমারই ভাগিনা
চলবে……………

ভাগিনার খোলা চিঠি