ঢাকা কাস্টমসের ডিসি সানোয়ারুল ও সাদেকের সীমাহীন দুর্নীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ঢাকা কাস্টম হাউজ এর দুই উপ-কমিশনারের অনিয়ম অব্যবস্থাপনা এবং সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ দুই কর্মকর্তা একাট্টা হয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সানোয়ারুল কবীর ও মোহাম্মদ আব্দুস সাদেক।

তাদের অনুগত ও আত্মীয়-স্বজনের  মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন চোরাই পণ্য খালাসের সিন্ডিকেট । জানা গেছে,অনুগত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চোরাই পণ্য খালাস করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।

 অপরদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে। একই অফিসের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে, ‘ই-বাংলা’কে জানান, উপ-কমিশনার সানোয়ারুল কবির সরকারের রাজস্ব আহরণে মনোযোগী না হলেও অবৈধ পথে নিজে বিত্ত বৈভবের মালিক বনে গেছেন। তিনি বিদেশের মাটিতে বাড়ি কেনাসহ ঢাকায় আত্মীয়-স্বজন ও স্ত্রীর নামে একাধিক ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন।

ঠিক একই ভাবে উপ সহকারি কর কমিশনার আব্দুস সাদেক অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে থলের বিড়াল । এমন অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলের একাধিক কর্মকর্তা।

জানা গেছে , জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দুইজন সদস্যকে ম্যানেজ করে ওই কর্মকর্তাদ্বয়, দীর্ঘ দুই বছর ধরে ঢাকা কাস্টমস হাউজে পদায়ন নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসবে পরিণত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট দফতরে খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়,  দুই কর্মকর্তার একজন আগামী ১৫ নভেম্বর ২১ এবং ০৫ জানুয়ারী ২০২২ তারিখে পিআরএল এ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, ঢাকা কাস্টমস হাউজের মধ্যে প্রিভেনটিভ বিভাগ ও এয়ার ফ্রেইট ইউনিট হলো রাজস্ব আদায়ের বড় সেকশন। তাদের অধীনে ২৬ জন রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা থাকার পরেও। দুই উপ-কমিশনার অসৎ উদ্দেশ্যে ১৬ সদস্যের মধ্যে শুধুমাত্র ৬ জন কর্মকর্তাকে দিয়ে পণ্য খালাসের কাজ করাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, ছয় জনের মধ্যে একজন মো. সানোয়ারুল কবিরের চাচাত ভাই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মি: নূঈদ মাহমুদ এবং আপন ভগ্নিপতি তাবাস্সুম মুরাদ অপু।

অন্য চারজন দুই উপ-কমিশনারের দুর্নীতির বিশ্বস্থ সহযোগী, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) মোহাম্মদ সোহেল, মো. আমিনুল হক, মলিনা পারভীন ও মিলন মধু।

সূত্র জানায়, তাদের সিন্ডিকেট আরো শক্তিশালী করতে গত ৫ অক্টোবর সানোয়ারুল কবির তার ভগ্নিপতি তাবাস্সুম মুরাদ অপুসহ অভ্যন্তরীণ বদলির মাধ্যমে এআরও মো. নূরে আলম সিদ্দিকী, মো. তরিকুল ইসলামকে এয়ারফ্রেইট ইউনিটে পদায়ন করেন।

অন্যসব কর্মকর্তা পণ্য খালাসের কাগজপত্র না পেয়ে বাসা থেকে অফিসে যাচ্ছেন বসে থেকে বাসায় ফিরছেন। তারা কাজ না পেলেও প্রতিবাদ করার ক্ষমতা নেই। প্রতিবাদ করলেই তাদের ঢাকা কাস্টমস হাউজ থেকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়কারী সহকারী কমিশনার মো. সোলায়মানকে তারা সাজানো অভিযোগের ভিত্তিতে সিলেট কমিশনারেট এ বদলি করেন। এতে করে ঢাকা কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, ছয় কর্মকর্তাকে আরো ২০ জনের কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেলেও তারা আনন্দেই অফিস সময়ের বাইরেও ডিউটি করতে কোন আপত্তি করছেন না। কারন, এতে মধু আছে। সূত্র জানায়, অবৈধ পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে দুই কমিশনারের নির্দেশে ওই ছয় কর্মকর্তাই কাজ করে যাচ্ছে। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানী করা জীবন বিনাশী যৌন উত্তেজক ওষুধসহ নানা ধরণের অবৈধপণ্য আমদানীতে সহযোগিতার মাধ্যমে এই সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। এদিকে অবৈধ পন্থায় আয় করা টাকা বিদেশে পাচার করছে সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। ওই সব সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান পণ্য খালাসের মাধ্যমে একে অপরের অবৈধ কর্মকান্ড ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করছে।

আরো একাধিক সূত্রের অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপ-কমিশনার মো. সানোয়ারুল কবির ও আব্দুস সাদেক যৌথভাবে টিভি প্যানেল আমদানীর ব্যবসা শুরু করেছে। মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে এসব টিভি প্যানেল ও অবৈধপণ্য ছাড়িয়ে নিচ্ছে তার ঘনিষ্ট সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএন্ডএফ এর একাধিক স্বত্ত্বাধিকারী অভিযোগ করেন, সম্প্রতি এই দুই উপ-কমিশনার ব্যবসা থেকে শুরু করে যেভাবে রাষ্ট্রের রাজেস্বের টাকা লুটপাট করছে তাতে সৎ সিএন্ডএফ এজেন্টদের ঢাকা কাস্টমস হাউজে কাজ করার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

এদিকে প্রিভেনটিভ ইউনিটের ডিসি মো. সানোয়ারুল কবিরের সাথে অভিযোগ সম্পর্কে টেলিফোনে কথা বললে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, তাবাসসুম মুরাদ অপুর সঙ্গে কথা বললে তিনি জবাবে বলেন, সে তো এয়ারফ্রেইট বিভাগে কর্মরত। এই বিভাগ আমি দেখি না। এয়ারফ্রেইট এর ডিসি আব্দুস সাদেক সাহেবের সাথে আপনি সিন্ডিকেট করে এসব করছেন এমন অভিযোগের সম্পর্কে আরো জেনে নিতে বলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বাড়ি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি খোঁজ নিতে বলেন । এ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জনাব আব্দুস সাদেক বারবারই তার সেল ফোন কেটে দেন।চলবে…

টি/আর

কাস্টমসডিসিদুর্নীতি
Comments (0)
Add Comment