নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বহুল সমালোচিত দুর্নীতিবাজ শিক্ষক মঞ্জুরের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থী অভিভাবকেরা। জেলা প্রশাসকের নাম ভাঙ্গিয়ে গণিতের শিক্ষক না হয়েও রুটিনে গণিত ক্লাস ও অতিরিক্ত ক্লাসের নামে কোচিং বাণিজ্য চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিতর্কিত শিক্ষক মঞ্জুরের বিরূদ্ধে। ছাত্রজীবনে পিছনের বেঞ্চে বসা মঞ্জুর কমার্স বিভাগের একজন শিক্ষক। তার পড়ানো খুবই নিমানের।
সার্টিফিকেট থাকলেও বিদ্যা-বুদ্ধি খুব ভালো না। তিনি নড়াইল শহরে গোয়ার শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। আবার কেউবা তাকে কোচিং মঞ্জুর হিসেবে চেনেন। শিক্ষক সুলভ কোন আচরন তার মধ্যে নেই।
কোচিং বাণিজ্য তার নেশা ও পেশা। চাকুরীর এক যুগ পার করলেও নিজেকে শিক্ষক হিসেবে পরিচিত করতে পারেননি। তার আচরনিক কারনে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক,সাধারণ মানুষ কেউ তাকে মূল্যায়ন করেন না। বরং তাচ্ছিল্য করেন।
আরও পড়ুন…দেশে নানামুখি উন্নয়নে জনগণ খুশি: কাদের
অর্থ পিচাশ মঞ্জুরের কারনে শিক্ষকদের মর্যাদা হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি প্রধান শিক্ষককে জিম্মি করে গণিত বিষয়ের শিক্ষক না হয়েও ক্লাস রুটিনে গণিতের শিক্ষক হয়েছেন শুধু প্রাইভেট পড়ানোর জন্য।
সবকিছুতে তার উদ্দেশ্য খারাপ। আর শ্রেণি কক্ষে ছাত্রদের না পড়িয়ে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে স্কুলের বাইরে খুলে বসেছেন কোচিং সেন্টার। নতুন শিক্ষাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে কোন লিখিত পরীক্ষা থাকছে না।
ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে শ্রেণি কক্ষে অর্থাৎ শিক্ষকের হাতে পাস ফেল থাকবে। ফলে স্থানীয় প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ শিক্ষক মঞ্জুর হোসেনের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে প্রধান শিক্ষক, শিক্ষার্থী অভিভাবকেরা। সরেজমিনে ১৫ ফেব্রæয়ারি সাড়ে ১২টার দিকে স্কুল মাঠের উত্তরপার্শ্বে টিনের ঘরে দেখা যায় নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্মাসের শিক্ষক মোঃ মঞ্জুর হোসেন নিজ স্কুলের ছাত্রদের কোচিং করাচ্ছেন।
আরও পড়ুন…নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক দায়িত্ব শুধু সরকারি দলের নয়, বিএনপিসহ সকলের : তথ্যমন্ত্রী
প্রত্যেক ছাত্রের নিকট হতে প্রতি মাসে ১২০০ টাকা করে নেন। নিজের স্কুলের ছাত্রদের কোচিং বা প্রাইভেট পড়ানো নিষিদ্ধ। অথচ সেই কাজটি করছেন শিক্ষক মঞ্জুর। কিভাবে কোচিং করাচ্ছেন? জানতে চাইলে শিক্ষক মঞ্জুর হোসেন বলেন,জেলা প্রশাসক তাকে অনুমতি দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মঞ্জুর হোসেনের কার্যক্রম খুবই আপত্তিকর। শিক্ষক সুলভ কোন আচরন তার মধ্যে নেই। তার বাড়ি নড়াইল শহরের ভওয়াখালী এলাকায় হওয়ায় তিনি নিজেকে স্থানীয় লোক হিসেবে পরিচয় দেন। সব সময় রাজনীতির গরমে চলেন। প্রধান শিক্ষককে জিম্মি করে জোর করে কোচিং বাণিজ্য করতে রুটিনে গণিতের কøাস নিয়েছেন।
এ ছাড়া প্রতি শিফটে ৩ জন গনিত শিক্ষকের পদ রয়েছে। মঞ্জুর হোসেন প্রধান শিক্ষককে জিম্মি করে প্রভাতী শিফটে ২জন গণিত শিক্ষক ও দিবা শিফটে ৪জন গণিত শিক্ষক রেখেছেন। প্রভাতী শিফটের ২জন গণিত শিক্ষক ও মঞ্জুর হোসেন গণিত ক্লাস নিয়ে কোচিং বাণিজ্য চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন…গা ঢাকা দেন ফাঁসির আসামি ওয়াহেদ
একাধিক অভিভাবক জানান,এমনিতেই স্কুলের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় নম্বর পাওয়া যায় না। এবার নতুন শিক্ষাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে ১০০ নম্বরই হবে শ্রেণি কক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে অথাৎ শিক্ষকের হাতে পাস ফেল নির্ভর করবে। দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।
এ বিদ্যালয় হতে তাকে অপসারন না করলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। জনৈক শিক্ষক জানান,নতুন শিক্ষা নীতিতে এক বিষয়ের শিক্ষক হয়ে অন্য বিষয়ের ক্লাস নেয়ার কোন সুযোগ নেই। অথচ শিক্ষক মঞ্জুর সেই কাজটি করে ছাত্রদের জীবন নষ্ট করে টাকা কামাচ্ছেন।
এ বিষয়ে নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে,তিনি বলেন,আমি কাউকে প্রাইভেট,কোচিং করানোর অনুমতি দেইনি। যে শিক্ষক কোচিং, প্রাইভেট পড়ায়, সেটা তার নিজ দায়িত্বে। শিফট ভিত্তিক শিক্ষক আর রুটিন আমি আসার আগেই করা হয়েছে।
আরও পড়ুন…ভাসানচর পরিদর্শনে ৪ দেশের রাষ্ট্রদূত
নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন,বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক থাকতে অন্য শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানোটা অনিয়ম এ বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।
ইবাংলা/ জেএন/১৭ ফেব্রুয়ারি , ২০২৩