ফলন বাড়াতে কৃষিবিদদের গবেষণার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈশ্বিক প্রতিকূল পরিস্থিতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্যশস্যের ফলন বাড়াতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কৃষিবিদদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)’র সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, আমাদের নিজেদের খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে হবে।’ শেখ হাসিনা আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতেও বাংলাদেশকে ঐতিহ্যগত শস্যের পাশাপাশি নতুন জাতের শস্য উৎপাদন করতে হবে। তিনি গাজীপুরে ব্রি-তে বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।

টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরতে বহুমুখী গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন অংশীদারিত্বে সহযোগিতার লক্ষ্যে কানাডার সাচকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির সাথে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর ব্রি-তে এই কেন্দ্রটি স্থাপিত হয়।

আরও পড়ুন…অদেখা সৌন্দর্য্যের দ্বার উন্মোচনের অপক্ষোয় বান্দরবান

যদিও প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু খাদ্যশস্য উৎপাদনেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেনি, বরং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য কৃষিপণ্যও উৎপান করে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুদ্ধে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, তাই তাঁর সরকার দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মেলাতে, আমরা ন্যানো-প্রযুক্তি, বায়ো-ইনফরমেটিক্স, মেশিন, ইন্টারনেট ও অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে জেনেছি। আমাদের এই প্রযুক্তিগুলো কাজেও লাগাতে হবে।’

কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির স্বাগত বক্তব্য রাখেন।এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ‘ব্রি’র ৫০ বছরের গর্ব ও সাফল্য’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

আরও পড়ুন…১৯ ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক প্রদান

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী ব্রি’তে আগমন করে সেখানে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন। এছাড়াও তিনি ব্রি’র সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উড়িয়ে দেন।

এ সময় কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জিন বালি, গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অ্যান্ড চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার স্টেভেন ওয়েব অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী চারাগাছ রোপন, ব্রি ল্যাবরোটরি ও এর বিভিন্ন উদ্ভাবন পরিদর্শন এবং ‘ধান-কাব্য’ নামের একটি সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। এছাড়াও তিনি ব্রি ও বিএআরসি এর পাঁচটি গবেষণা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে স্বনির্ভর করে এবং দেশের বছওে ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি মিটিয়ে খাদ্য উদ্বৃত্ত রেখে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় আসে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ পুনরায় খাদ্য ঘাটতির সম্মুখিন হয়।

আরও পড়ুন…ইউক্রেনে রাশিয়া কখনই জয়ী হবে না : বাইডেন

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেই দেশে ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি পায়। আওয়ামী লীগ সরকার এ অবস্থা মোকাবেলায় কৃষি গবেষণা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করে এবং কৃষকদের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল বীজ-সার বিতরণ করে এবং কৃষকদেরকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হয়।

এই উদ্যোগের ফলে আমরা খারাপ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে সামনে এগিয়ে যাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ফসল চাষ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় কৃষি উৎপাদন পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, ব্রি উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে।

এ পযর্ন্ত ১১১ ধরণের ধানের আধুনিক জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ১০৪ টি ইনব্রিড এবং ৭ হাইব্রিড। এর মধ্যে ২৪টি বিভিন্ন প্রতিকুলতা সহিঞ্চু জাত রয়েছে। যার ১০টি লবনাক্ততা সহিঞ্চু, তিনিটি ডুবে যাওয়া সহিঞ্চু, তিনটি খরা সহিঞ্চু, চারটি শীত সহিঞ্চু, দু’টি জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যাওয়া সহিঞ্চু, একটি আধা গভীর জল এবং দ্বৈত সহিঞ্চু (সাল+সাব)।

প্রধানমন্ত্রী কৃষিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু’র পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা কৃষিতে পদক্ষেপ নিয়েছি। কৃষির যান্ত্রিকায়নের জন্য আমরা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছি।

সরকার প্রধান দেশের তরুণদের কৃষিতে সম্পৃক্ত হওয়ার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করে বলেন, তাদের স্কুল জীবন থেকেই এটি শুরু করতে হবে।

ইবাংলা/টিএইচকে

কৃষিবিদদেরগবেষণারনির্দেশ