ফুটপাতে চাঁদাবাজি ও সাধারণের দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ঢাকা শহরের অধিকাংশ রাস্তার ফুটপাত হকারদের দখলে। স্বল্পপুঁজি বেশি রুজি আর কর্মস্থান এ হলো হকারদের স্লোগান। ফুটপাতের রাজত্ব হকারদের। হাজার হাজার যুবক

হকারী করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে বটে কিন্তু সাধারণ পথচারির রাস্তা চলাচলে করতে হচ্ছে জীবনের অনেক ঝুঁকি নিয়েই। এর জন্য অনেকটা দায়ী হকার ও চাঁদাবাজিরাই।

আরও পড়ুন… রাজউকের আতঙ্ক পিস্তল সোহাগ! (পর্ব)১

অন্ধ, বুড়া, খোঁড়া, লেংরা, অসুস্থ রোগী, ছোট ছোট অবুঝ শিশুসহ সাধারণ জনতার রাস্তার পাশের ফুটপাথ দিয়ে চলাচল করতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। পরিস্থিতি

অনেক সময় বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে। ঢাকা উত্তর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বারবার উচ্ছেদের পদক্ষেপ নিলেও কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় আবার বন্ধ হয়ে যায়।

তবে হকারদের সংঘবদ্ধতা এবং রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকার কারনে উচ্ছেদ অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ফলে হকারদের দখলে থাকা ফুটপাত

অবমুক্ত করা দুসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। সাধারণ পথচারীদের ফুটপাতে চলাচলের এ মহাসংকট জাতির জন্য এক অশনি সংকেত এবং উন্নয়ন রোল মডেলের অন্যতম এক বাধা। অন্যদিকে ফুটপাত উদ্ধার করতে না পারাটাও সরকারের চরম ব্যর্থতা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্তর ফুটপাত থেকে বছরে চাঁদা বাজির আয় প্রায় ৪ কোটি টাকা। এ টাকা ভাগ স্থানীয় নেতা ওয়ার্ড কমিশনারসহ পুলিশ পাচ্ছে। মিরপুর গোলচত্তর সংলগ্ন প্রায় ৭৩০ টি দোকান রয়েছে বলে ফুটপাতের ব্যবসায়ী ও চাঁদা আদায়কারীদের (লাইনম্যান) সাথে কথা বলে

জানা যায়। ব্যবসার ধরন ভেদে দৈনিক ৮০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা এবং কিছু দোকানদারকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। এতে প্রায় মাসে ৩২ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয়।

ফুটপাত দখল শুধু গুলিস্থান, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম আর পলটনে সীমাবদ্ধ নয়। পুরো ঢাকা শহরের পাড়া মহল্লা অলিগলিতে ফুটপাত দখলের হিড়িক। ফুটপাতে

ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট (চৌকি মাচা এমনকি ভ্যানগাড়ি) ব্যবসায়ীদের (হকার) কাছ থেকে যারা লাভবান তারা হলেন, স্থানীয় বড় বড় রাজনৈতিক দলের এবং ক্ষমতাশীন

দলের নেতা পরিচয়ের কতিপয় লোকজন (এলাকা ভিত্তিক) ও সরেজমিনে ঘুরে ঘুরে জানা গেছে, সহযোগী সংগঠনের নেতা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

এছাড়া এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে স্ট্রিট ভেন্ডর কার্যক্রম চালাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এ কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে হকার আপস নামে বাড়তি ২০ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে ভুক্তভোগী

ব্যবসায়ীদের। সরজমিনে দেখা যায়, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে কাজী পাড়া, মিরপুর-২, মিরপুর-১২ কিংবা মিরপুর-১৪ নম্বর সব দিকের ফুটপাতেই ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের

দোকান। মিরপুর-১৩ নম্বর কৃষি ব্যাংক থেকে ওপেক্স গার্মেন্টস পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে প্রায় দু’শ ভ্যানগাড়ি (ভ্রাম্যমান) দোকান বসে এবং প্রতি দোকান থেকে সকাল বিকাল ১২০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।

আরও পড়ুন…জামায়াতের আমির ও নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যানের বৈঠক

এতে প্রতিদিন চাঁদা আদায় হয় প্রায় ২৪,০০০/= হাজার টাকা এবং মাসে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা যা এলাকার কমিশনার, পুলিশ ও স্থানীয় ক্ষমতাশীন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভাগ

বাটোয়ারা করে নেন বলে জানা যায়। অথচ ফুটপাত প্রায় বন্ধ এবং যানজট অহরহ। এ ব্যপারে স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার ও পুলিশকে আবাসিক এলাকায় বসবাসকৃত জনগন তাদের অসুবিধার কথা লিখিতভাবে জানিয়েও কোন ফায়দা হচ্ছে না বলে প্রতিবেদককে জানান একাধিক ভুক্তভোগি।

আসলে ফুটপাত পাবলিক চলাচলের জন্য ফ্রি হওয়া উচিত। এ ফুটপাত থেকে অর্জিত চাঁদা আদায় করে স্থানীয় নেতাদের অনেকে কোটিপতি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু জনগণের ভোগান্তি

দিনের দিন শুধু বাড়ছে। এখনই উপযুক্ত সময় জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে হকারদের হাত থেকে ফুটপাত অবমুক্ত করা। সরকারের আশু পদক্ষেপ প্রয়োজন।

ইবাংলা/বাএ

চাঁদাবাজিফুটপাতে