ই-কমার্স ব্যবসার নামে গ্রাহকের টাকা অত্মসাতসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়া অন্তত ২৮টি প্রতিষ্ঠানের নাম সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে হস্তান্তর করেছে ৩ গোয়েন্দা সংস্থা।
সোমবার (১ নভেমবর) সভা শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কমিটির সমন্বয়ক এএইচএম সফিকুজ্জামান।
এসময় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনের হিসাবের তথ্য তাদের হাতে পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
এএইচএম সফিকুজ্জামান জানান, তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে পৃথক তালিকা পেয়েছে কমিটি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরমধ্যে এক তালিকায় ১৯টি, আরেকটি তালিকায় ১৭টি এবং অন্যটিতে ১৩টি কোম্পানির নাম পাওয়া যয়।
তবে সর্বোচ্চ সংখ্যাটি ১৯ এর চেয়েও বেশি। কারণ ১৭ ও ১৯টি প্রতিষ্ঠানের তালিকার মধ্যে কমন রয়েছে আটটি। এগুলো সমন্বয় করে ফিন্যান্সিয়ল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের কাছে জমা দেওয়া হবে। তারা এই তালিকা ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ-খবর নেবে।
আগামী ৯ নভেম্বর কমিটির আরেকটি বৈঠক হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সভায় এই তালিকার কোম্পানিগুলোর আর্থিক লেনদেনের হিসাব তুলে ধরা হবে। এরপর তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উত্থাপন করব।
তিনি আরও বলেন, এটুআইকে কিছু বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেটা হচ্ছে ইউনিক বিজনেস আইডি। একটা কমিটি এটা ফাইনাল করেছে। প্রাথমিক অনুমোদনও পেয়েছে এই মডেলটি। অ্যানালগ ফরমেট থেকে এটুআই এটাকে ডিজিটাল ফরমেটে তৈরি করে দেবে। খুব দ্রুতই ইউনিক বিজনেস আইডি চালু করা হবে।
যারা ই-কমার্সে বিজনেস করবে, তাদের বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কাজটি হবে ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে। আমরা এই প্রক্রিয়াটিকে খুব সহজ করেছি। যাতে করে ইউনিক বিজনেস আইডি চালু করতে গিয়ে কোনো ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
এসক্রো সার্ভিস অটোমেশন করার জন্যও এটুআই থেকে সহযোগিতা নিয়ে একটি অ্যাপ তৈরি করে কাজও এগুচ্ছে বলে জানায় সফিকুজ্জামান।
গোয়েন্দাদের ফাইলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কার কার নাম আছে, তা জানায়নি মন্ত্রণালয়। তবে গোয়েন্দা সংস্থার অনুমেদান পেলে এসক্রো সার্ভিসে আটকে থাকা গ্রাহকদের ২১৪ কোটি টাকা ফেরত দেয়া শুরু হবে বলে বৈঠক থেকে জানান হয়।
সফিকুজ্জামান বলেন, এটা ফ্রিজ করে রেখেছে সিআইডি। তাদের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই টাকা বিতরণ শুরু করা যাবে। এখানে হয়ত সার্ভিস চার্জ বাবদ ১ শতাংশ টাকা কাটা হতে পারে। টাকাটা যেহেতু অনলাইনে দেওয়া হয়েছে, সেহেতু এটা অনলাইনেই ফেরত যাবে।
দেশে ই কমার্সের ব্যবসা বেশ কয়েক বছর ধরেই বাড়ছিল, এর মধ্যে মহামারী শুরু হলে নতুন নতুন বেশ কিছু কোম্পানি খুব দ্রুতই ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করে।
বাজারমূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান লাখ লাখ সাধারণ গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে এখন।
অনেকে অর্ধেক দামে পণ্য কিনে পরে বেশি দামে বিক্রির আশায় এসব কোম্পানিতে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে। কিন্তু তাদের অনেকে মাসের পর মাস প্রতিক্ষা করেও পণ্য বুঝে পাননি, এমনকি কোম্পানি তাদের টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।
এসব ঘটনায় ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা করা হয়েছে। কিন্তু অগ্রিম টাকা দিয়ে পণ্য না পাওয়া গ্রাহকরা রয়েছেন সব চেয়ে ক্ষেতির মধ্যে।
এ পরিস্থিতিতে ই-কমার্স খাতের সংস্কার ও সমন্বয়ের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তদারকির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাদের সুরক্ষায় গত ১২ অক্টোবর উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি করে সরকার।
সফিকুজ্জামানকে সভাপতি করে গঠিত এই কমিটিকে এক মাসের মধ্যে সাতটি বিষয়ে সুপারিশ করতে বলা হয়। সফিকুজ্জামান বলেন, কোন কোম্পানির অনিয়ম কতটা, বিএফআইইউর প্রতিবেদন পাওয়ার পর তারা সে বিষয়ে বলতে পারবেন।
ইবাংলা/নাঈম/১ নভেম্বর, ২০২১