ঐতিহাসিক বদর দিবসের তাৎপর্য

ইবাংলা ডেস্কঃ

আজ ১৭ রমজান, ঐতিহাসিক বদর দিবস। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ, হিজরি দ্বিতীয় বর্ষের ১৭ রমজান ৩১৩ জন সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে মহানবী (সা.) মদিনা শরিফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ৮০ মাইল দূরে বদর নামক স্থানে কাফিরদের সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মিলিত হন। ইতিহাসে এ যুদ্ধকে বদর যুদ্ধ বলে অভিহিত করা হয়।

আরও পড়ুন… ১৫ রমজান ‘শুক্রবার’ পৃথিবীতে হবে বিকট আওয়াজ! সত্যটা জানুন

মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে জনবল ছিল মাত্র ৩১৩ জন। এর মধ্যে ৭০ জন মুহাজির, বাকিরা আনসার।অন্যদিকে কাফির কুরাইশ বাহিনীর সংখ্যা ছিল এক হাজার। এরমধ্যে ১০০ জন অশ্বারোহী, ৭০০ জন উষ্ট্রারোহী ও বাকিরা পদব্রজি ছিল।

সত্যপথের অনুসারী অল্পসংখ্যক রোজাদার মুসলমান বিশাল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মিথ্যার অনুসারী কাফির-মুশরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করায় সত্য-মিথ্যার চিরপার্থক্য সূচিত হয়ে যায়। তাই এ দিবসকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যের দিন বলা হয়। জালিম আর মজলুমের দ্বন্দ্ব চিরন্তন। অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অত্যাচারিতের প্রতিবাদ, নিপীড়কের বিরুদ্ধে নিপীড়িতের সংগ্রাম এক অনিবার্য বাস্তবতা। যত দিন পৃথিবী থাকবে, যত দিন মানুষ নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিষ্পেষিত হবে, মুক্তিকামী মানুষের লড়াইও চলতে থাকবে। যুগে যুগে, দেশে দেশে নিত্য-নতুন রূপে এ লড়াইকে রূপায়িত ও চিত্রিত করা হবে। দেশ-ভাষা-অঞ্চলভেদে সে লড়াইকে নতুন নামে ডাকা হবে। এর জন্য নতুন পরিভাষা দাঁড় করানো হবে।

জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের সে লড়াইকে কোরআন ‘জিহাদ’ বলে অভিহিত করেছে, এ বিষয়ে কোরআনের ভাষ্য হলো: ‘যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হলো তাদের, যারা আক্রান্ত হয়েছে। কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩৯)

মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে সব লোক পরস্পর লড়েছিল তাদের মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা-নিদর্শন রয়েছে। একদল আল্লাহর রাস্তায় লড়েছিল আর অপরদল ছিল কাফির, আল্লাহকে অস্বীকারকারী।’ (সূরা: আল ইমরান,আয়াত:১৩)

আরও পড়ুন… ইসলামের অনুসারীদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে কি ধর্ম (ইসলাম) প্রযোজ্য 

এ ছিল এক আশ্চর্য দৃশ্য। মুসলিম শরীফে বর্ণিত, রাসুল সা. তখন খুবই কান্নাভারাক্রান্ত অবস্থায় ছিলেন। দুহাত তুলে তিনি আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করছিলেন আর বলছিলেন, হে আল্লাহ! হে রাব্বুল আলআমীন! তুমি আমার সঙ্গে যে ওয়াদা করেছো তা আজ পূরণ করো। আত্মবিশ্বাস ও আত্মহারা অবস্থায় তাঁর চাদর কাঁধ থেকে বারবার গড়িয়ে পড়ছিল। কখনো-বা তিনি সিজদায় লুটিয়ে পড়ছিলেন আর বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আজ যদি এই দলটি ধ্বংস হয়ে যায়, তা হলে কিয়ামত পর্যন্ত তোমার ইবাদত করার কেউ থাকবে না।’ (সহিহ মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ ওযাস সিয়ার)

অস্থির ও আত্মহারা অবস্থায় আল্লাহর বিশিষ্ট বান্দাদের কান্নাভারাক্রান্ত দেখা দেয়। হজরত আবু বকর আরজ করলেন, আল্লাহর রাসুল, মহান আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূরণ করবেন। আপনি উঠুন। (সহিহ বুখারি, কিতাবুল মাগাজি)

অবশেষে আত্মিক প্রশান্তিসহকারে তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘অতিসত্বর বাহিনী পরাজিত হবে এবং পলায়ন করবে।’ (সহিহ বুখারি, কিতাবুল মাগাজি)

আরও পড়ুন… হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরীমকে সংবর্ধনা দেবে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এই যুদ্ধে আত্মোৎসর্গ ও জীবনবাজির সর্বাধিক বিস্ময়কর দৃশ্য ছিল। উভয় দল মুখোমুখি হলে দেখা গেলো, স্বয়ং আদরের কলিজার টুকরো সন্তানরাই তলোয়ারের সামনে। হজরত আবু বকর (রা.) এর ছেলে যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রসর হলে তিনি তলোয়ার হাতে বের হোন।(সিরাতুন নবি, শিবলি নুমানি, ১ম খণ্ড) উতবা ময়দানে অবতরণ করলে তার ছেলে হুযায়ফা (রা.) তার মোকাবিলায় বের হোন। হজরত উমর (রা.) -এর তলোয়ার এই যুদ্ধে আপন মামার রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। (ইবন হিশাম, ১ম খণ্ড)।

ইবাংলা/এইচআর/৯ এপ্রিল ২০২৩

১৭ রমজানঐতিহাসিকদিবসবদর