রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং দেশের শীর্ষ উলামা-মাশায়েখ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শনিবার (২৪ জুন) রাজধানীর গুলিস্তানে ইম্পেরিয়াল কনভেনশন সেন্টারে চরমোনাই পীর ও দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের আহ্বানে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তবে ছিলেন না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধি।
রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস হাফিজ ইব্রাহিম, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসীহ, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা (মসজিদ মিশনের মহাসচিব) ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীম বীরপ্রতীক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।
আরও পড়ুন>> ঈদের বাজারে জাল নোট চিনবেন যেভাবে
আরও উপস্থিত ছিলেন এনডিএমের সভাপতি ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, খেলাফতে রব্বানীর চেয়ারম্যান মুফতী ফয়জুল হক জালালাবাদী, জাতীয় ইনসাফ কায়েম পার্টির সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ জমিয়তুল মুছলেহীনের আমির মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, ফরায়েজী জামাতের সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান, মুসলিম লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) বলেন, বিদ্যামান সংকট নিরসনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। আর জাতীয় সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। যা দেশের জনগণের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে এবং দেশে আরও একবার সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মুফতি রেজাউল করীম বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে না। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়েও আপত্তি করেছেন তিনি।
চরমোনাই পরী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজনের পাঁয়তারা চলছে। মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
রেজাউল করীম বলেন, স্বাধীনতার পর দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয়নি। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে এক তরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করাই দলীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য থাকে। ভবিষ্যতেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আশা করা যায় না। ১৯৭৩, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন তার প্রমাণ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিরোধিতা করে চরমোনাই পীর বলেন, রাজনৈতিক একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালে। ওই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তৎকালীন বিরোধীদল বলেছিল নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। এ অজুহাতে বিরোধী দল অনেক দিন পার্লামেন্ট বর্জন করেছিল। আবার দ্বিতীয়বার ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ওই সময়ের বিরোধী দল বলেছিল ভোটে স্থূল কারচুপি হয়েছে এবং তারাও লাগাতার সংসদ বর্জন করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় নাই।
জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করে তিরি বলেন, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই দলীয় সরকার, সামরিক সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। বর্তমানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং বিগত পদ্ধতিগুলোর ত্রুটির কারণে নিবন্ধিত সব দলের পরামর্শক্রমে ও অংশগ্রহণে জাতীয় সরকার গঠন করে তার অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে ইসলামী আন্দোলন মনে করে।
জাতীয় সরকারের রূপরেখা প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে। যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউ নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না।
ইবাংলা/এসআরএস