সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রতিবাদে আগামী ১২ নভেম্বর বিকেল ৪টার সময় সারাদেশে ‘ধিক্কার মিছিলের’ ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
আগামী ১২ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে ঢাকার শাহবাগ চত্বরে ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে এ কর্মসূচি পালিত হবে।
শনিবার (৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ডাক দেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত।
লিখিত বক্তব্যে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, ‘বিগত দিনগুলোতে আমাদের দেশের কোনও রাজনৈতিক দল স্বীকার করতে চাননি যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্বিচারে সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে। অনেকেই এ ঘটনাগুলোকে অতীতে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এবার দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সাম্প্রদায়িক হামলা সংক্রান্ত দোষারোপের রাজনীতি করে চলেছে এবং এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছে সাম্প্রদায়িক হামলা অতীতেও ছিল, বর্তমানেও আছে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণে তা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। আমরা সবগুলোর নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত চাই। দলমত নির্বিশেষে যারা-ই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। হাজার হাজার মানুষ গ্রেপ্তার করলেই সুবিচার আসে না। নিরপরাধ কেউ যেন গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার না হয়, এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের দেওয়া বিবৃতির প্রতি ধিক্কার জানিয়ে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, ‘অতি সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি আমাদের ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। সামগ্রিক ঘটনাকে লঘু করে দেখার প্রবণতা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষুণ্ণ করেছে।
তিনি বিবৃতিতে পবিত্র কোরআন যে কুমিল্লার পূজামণ্ডপে হনুমানের মূর্তিতে রেখেছিল তাকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে’ বলে মূল ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। সিআইডির ভাষায় ‘সে ভবঘুরেও নয়, মানসিক ভারসাম্যহীনও নয়, সে চতুর।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ দায়িত্ব ও কাণ্ডজ্ঞানহীন বিবৃতির জন্যে আজ এ সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা তাকে ধিক্কার জানাই।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত ২ নভেম্বর তার ভার্চুয়াল ভাষণে সত্য কথা তুলে ধরার জন্যে আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা মনে করি, ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের রক্ষায় শুধু কথা-ই নয়, কাজের মাধ্যমে তা দৃশ্যমান করা আজ যথার্থ অর্থেই প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে ঘোষিত সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠনের যে অঙ্গিকার করা হয়েছিল, অনতিবিলম্বে তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়ত ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।’
তিনি বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর ইউটার্ন আমাদের হতবাক ও বিস্মিত করেছে। ইতোমধ্যে এক সেমিনারে তিনি বলেছিলেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে এবং দ্রুত তা পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হবে। চার দিন যেতে না যেতেই তিনি বললেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন নয়, সাক্ষী সুরক্ষা আইনের কথা বলেছেন।
ইবাংলা/টিআর/০৬ নভেম্বর, ২০২১