হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। সুতরাং আমাদের ক্ষমা করে দিন। মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল। তিনি গাফুর এবং গাফফার। এই ক্ষমা মহান আল্লাহর একটি বিশেষ গুণ। আল্লাহ তাআলা এ গুণের অধিকারী হওয়ার কারণেই তিনি ক্ষমাকারী বান্দার প্রতি অনুগ্রহশীল।
ভুল-ত্রুটি ও ভালো-মন্দের মিশেলে মানুষের জীবন। কেউ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু কারো ভুলে তার প্রতি ক্রোধ দেখানো, রাগ ঝাড়া, জেদ-উত্তেজনা কিংবা উগ্র-কাতর হওয়া ভীষণ নিন্দনীয়। এসব মানুষকে ছোট করে। আমলনামা থেকে সওয়াব মুছে দেয়।
বিপরীতে ক্ষমা মানুষের মান-মর্যাদা বাড়ায়। কাউকে ক্ষমা করে একজন সাধারণ মানুষও হয়ে ওঠতে পারেন অসাধারণ মানুষ।
অন্যকে ক্ষমার গুণ থাকা মুমিনের জন্য উচ্চ মর্যাদা ও সম্মান পাওয়ার একটি আমল। যার বিনিময় অনেক বেশি। যে আমলে আল্লাহ তাআলা মুমিনের ইজ্জত ও সম্মান বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা নবিজিকে এ গুণে রঙিন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিনটি কাজের নির্দেশ দেন। তাহলো-
خُذِ الۡعَفۡوَ وَ اۡمُرۡ بِالۡعُرۡفِ وَ اَعۡرِضۡ عَنِ الۡجٰهِلِیۡنَ
(হে নবি!) আপনি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করুন। সৎ কাজের নির্দেশ দিন এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চলুন।’ (সুরা আরাফ: আয়াত ১৯৯)
ক্ষমার গুণে নিজেকে রাঙাতে পারলেই মহান আল্লাহ মানুষের ইজ্জত ও সম্মান বাড়িযে দেবেন। কেননা ক্ষমা আল্লাহর বিশেষ গুণ। তিনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। এ কারণেই কোরআন-সুন্নাহতে মানুষকে বার বার তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা নির্দেশ ও উপদেশ দিয়েছেন। এ একটি গুণের আমলেই মানুষ ইজ্জত ও সম্মানের অধিকারী হন।
হাদিসের দিকনির্দেশনা
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও উম্মতে মুহাম্মাদিকে আল্লাহর এ বিশেষ গুণে নিজেদের রঙিন করার উপদেশ দিয়েছেন। যদি কেউ বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে এবং কেউ অন্যায় করলে তাকে ক্ষমা করে তবে মহান আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির মর্যাদা ও ইজ্জত বাড়িয়ে দেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জাকাত বা দানের কারণে কখনো সম্পদ কমে না। অবশ্যই ক্ষমা ও উদারতার দ্বারা আল্লাহ তাআলা (বান্দার) মান-সন্মান বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যে লোক বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে আল্লাহ তাআলা তাকে অতি মর্যাদা দান করেন।’ (তিরমিজি, মুসলিম)
ক্ষমা এমন একটি মহান গুণ ও বিশেষ আমল। যা মানুষের সম্মান বাড়িয়ে দেয়। ক্ষমাকারীরা আল্লাহর কাছে সৎকর্মশীল বান্দা হিসেবে পরিচিত। আল্লাহ নিজেই ক্ষমাশীল। তিনিও ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। যারা কাউকে ক্ষমা করে তিনি তাদেরকেও ভালোবাসেন। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ الۡکٰظِمِیۡنَ الۡغَیۡظَ وَ الۡعَافِیۡنَ عَنِ النَّاسِ ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ
‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, রাগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৩৪)
মনে রাখা জরুরি
ভুল-ভ্রান্তি আর ভালোমন্দ নিয়েই মানুষের জীবন। এ ভুলের কারণেই মানুষের মাঝে তৈরি হয় ক্ষোভ, রাগ ও বিদ্বেষ। যা এক সময় মারাত্মক অপরাধে পরিণত হয়। যদি কেউ মানুষের এ পারস্পরিব ভুল-ভ্রান্তিকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে মিলেমিশে চলে; ভুলকারীকে ক্ষমা করে দেয়; তবে ক্ষমাকারী ব্যক্তির ইজ্জত সম্মান বেড়ে যাবে। এ কথাই কোরআন-সুন্নাহর ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
اِنۡ تُبۡدُوۡا خَیۡرًا اَوۡ تُخۡفُوۡهُ اَوۡ تَعۡفُوۡا عَنۡ سُوۡٓءٍ فَاِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَفُوًّا قَدِیۡرًا
‘যদি তোমরা ভালো কিছু প্রকাশ করো কিংবা গোপন করো অথবা মন্দ ক্ষমা করে দাও, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, ক্ষমতাবান।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৪৯)
মানুষের এ ক্ষমায় বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ পায়। ক্ষমায় ব্যক্তি পরিবার সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্ষমাকারী আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হন। ক্ষমার এ গুণ অর্জনে মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনার বিকল্প নেই। কেননা তিনি মহান ক্ষমাকারী। এ কারণেই রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-
‘অপরাধ মার্জনা (ক্ষমা) করার কারণে, আল্লাহ (মার্জনাকারীর) সম্মান ও ইজ্জত বাড়িয়ে দেন।’ (মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে ক্ষমার গুণে নিজেদের রঙিন করার তাওফিক দান করুন্। ক্ষমার গুণ অর্জনের মাধ্যমে দুনিয়ায় নিজেদের ইজ্জত ও সম্মান বাড়ানোর তাওফিক দান করুন। পরকালের মুক্তি দান করুন। আমিন।