যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলায় ১৫৭ জন হুথি বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন। দেশটির উত্তরাঞ্চলের তেল–গ্যাস সমৃদ্ধ মারিব শহরের কাছে চালানো ওই হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে বলে শনিবার (৬ নভেম্বর) দাবি করেছে সৌদি আরব।
শনিবার (৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ ও ডব্লিউআইওএন। এর আগে গত ২৮ অক্টোবর মারিব শহরের কাছে চালানো পৃথক হামলায় ৯৫ হুথি বিদ্রোহী নিহত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইয়েমেনের মারিব শহরের কাছে চালানো হামলায় ১৫৭ জনেরও বেশি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে জোটের হামলায় ১৪টি সামরিক যানও ধ্বংস হয়েছে।
তেল-সমৃদ্ধ মারিব প্রদেশের দু’টি পৃথক স্থানে চালানো হামলায় হুথি বিদ্রোহীদের প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। ওই স্থান দু’টি হচ্ছে- মারিবের উত্তরে অবস্থিত আল-জাওয়াফ এবং দক্ষিণে অবস্থিত আল-বাইদা। এছাড়া মারিব শহরের পশ্চিমে অবস্থিত সিরওয়াহ এলাকায়ও হামলা চালায় সৌদি জোট।
- সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের দাবি, গত ১১ অক্টোবর থেকে মারিব ও এর আশপাশে চালানো বিমান হামলায় প্রায় ২ হাজার হুথি বিদ্রোহীকে হত্যা করা হয়েছে। তবে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির কথা খুব কমই প্রকাশ করে থাকে। আর তাই হুথি বিদ্রোহীদের হত্যার ব্যাপারে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বার্তাসংস্থা এএফপি।
এর আগে গত ২৮ অক্টোবর ইয়েমেনের সৌদি সমর্থনপুষ্ট সরকার এক বিবৃতিতে মারিব অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী আল-জাওবা এবং আল-কাসারা নামক দু’টি জেলায় বিদ্রোহীদের অবস্থানে বিমান হামলার মাধ্যমে ২২টি পৃথক অভিযান পরিচালনার কথা জানায়। এসব হামলায় ৯৫ জন হুথি বিদ্রোহী নিহত এবং ১১টি সামরিক যান ধ্বংস হয় বলে সেসময় দাবি করা হয়।
২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
- অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।
ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ‘ছায়াযুদ্ধ’ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং এক সময়ের স্বচ্ছল এই দেশ।
ইবাংলা/ টিআর/ ৭ নভেম্বর/ ২০২১