ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুসলমানরা এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। দিন-রাতে, প্রকাশ্যে-গোপনে মসজিদসহ মুসলমানদের বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হচ্ছে, অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় মসজিদ রক্ষার্থে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানকার মুসলমানরা বলছেন, আমরা রাতে ঘুমাই না, মসজিদ পাহারা দেই। আল জাজিরা।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহিজিলা জেলার নারাউরা গ্রামের বাসিন্দা লিটন মিয়া জানান, গত ২৩ অক্টোবর রাত ১০টায় হঠাৎ হৈচৈ শুনতে পাই। ছুটে গিয়ে দেখি, মসজিদের ভেতর ও উঠানে আগুন জ্বলছে। হামলাকারীরা মসজিদের ভেতরেও কেরোসিন ঢেলে দিয়ে গেছে। বড় কোনো ক্ষতি হওয়ার আগে সবাই টের পেয়ে যাওয়ায় হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এরপর ২৬ অক্টোবর উত্তর ত্রিপুরা জেলার পানিসাগর শহরে ঘটে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা। ওইদিন সেখানে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সমাবেশ চলছিল। বিকেল ৩টার দিকে তাদের একটি র্যালি চামটিলা এলাকা দিয়ে যায়। সেখান থেকে মহানবীর (সা.) বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ও অবমাননাকর স্লোগান দেয়া হচ্ছিল। হঠাৎ তাদের মধ্যে ৩০-৪০ জন মসজিদের দিকে এসে ভাংচুর করে। মসজিদের সামনে থাকা গাছগুলো উপড়ে ফেলে।
- এরপর তারা আশেপাশের কয়েকটি মুসলমান বাড়িতে আক্রমণ করে। খানিক পরে দোকানে আগুন দিতে শুরু করে। কিছু দোকান সম্পূর্ণ, আবার কয়েকটি আংশিক পুড়ে যায়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এমন তাণ্ডব চালানো হলেও পুলিশ তাদের থামাতে পারেনি।
হামলার এমন ধারাবাহিকতা ত্রিপুরার মুসলিম সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয় ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ত্রিপুরার প্রভাবশালী মুসলিম সংগঠন জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দের একটি অংশের প্রধান মুফতি আবদুল মোমিন বলেন, ১৬টি মসজিদকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। বেশিরভাগ ঘটনা রাতেই ঘটেছে। প্রশাসন অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারেনি।
পানিসাগরের চামটিলা এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেছেন, আজকাল আমরা রাতে ঘুমাই না। মসজিদ পাহারা দেই। ছয়-সাত জনের একটি দল ভোর পর্যন্ত গ্রাম পাহারা দিচ্ছে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্থানীয় নেতা বিজিত রায় এসব সহিংসতার জন্য কিছু দুষ্কৃতিকারীকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় মসজিদের লাউডস্পিকার থেকে কিছু দেশবিরোধী স্লোগান বেজে উঠেছিল। তখনই কিছু দুর্বৃত্ত দোকানে আগুন দিয়েছে বলে শুনেছি।
ইবাংলা/ টিআর/ ৭ নভেম্বর/ ২০২১