আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। প্রতিবছর হিজরি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দের এই দিনে আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যথাযোগ্য মর্যাদায় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে থাকেন।

আজ বৃহস্পতিবার ১৪৪৫ হিজরীর সনের ১২ রবিউল আউয়াল। মুসলমানদের জন্য এ দিবসটি অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত দিন। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযথ মর্যাদায় মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এ দিনটি পালন করবেন। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর ওপর আলোচনা, জশনে জুলুছ (র‌্যালী), মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

আরও পড়ুন>> গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন বাক-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

এছাড়া রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জাতীয় পতাকা ও কালেমা খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সারাদেশের মসজিদ মাদরাসায় ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাসূলের জীবনী নিয়ে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সমগ্র মানবজাতির শিরোমণি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাতের দিন আজ। ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মা আমিনার কোলে জন্ম নেন। ৬৩২ খ্রীষ্টাব্দের এ দিনে ৬৩ বছর বয়সে তিনি ওফাত লাভ করেন। বিশ্বের মুসলমানরা দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী বা সীরাতুন্নবী (সা.) হিসাবে পালন করেন। আজ সরকারি ছুটি। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন এক বাণীতে মহানবী (সা.) এর সুমহান আদর্শ যথাযথভাবে অনুসরণের মাধ্যমে দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে কাজ করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট বলেন, মহান আল্লাহ তা’আলা হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে ‘রহমাতুল্লিল আলামীন’ তথা সমগ্র বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেন। দুনিয়ায় তার আগমন ঘটেছিল ‘সিরাজাম মুনিরা’ তথা আলোকোজ্জ্বল প্রদীপরূপে। মহানবী (সা.)এর প্রতিটি কথা ও কর্মই মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে বলেছেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.)’র সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যেই মুসলমানদের অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে। এ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান। দিবসটি উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল বুধবার বিকেলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে মাসব্যাপী ইসলামী বই মেলা উদ্বোধন করেছেন ধর্ম সচিব আবদুল হামিদ জমাদ্দার। বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ধর্ম সচিব আবদুল হামিদ জমাদ্দার। এতে সভাপতিত্ব করেন ইফার ডিজি ড. মো.বশিরুল আলম। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় মসজিদে প্রতিদিন বাদ মাগরিব থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ওয়াজ মাহফিল, সপ্তাহব্যাপী সেমিনার, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান, রাসূল (সা.)-কে নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর, কেরাত মাহফিল, হামদ-নাত প্রতিযোগিতা, মহানবীর (সা.) জীবন ও শিক্ষাবিষয়ক আলোচনা সভা।

বিশ্বনবী মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত। তার সার্বজনীন শান্তির বার্তা দুনিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। সমাজে সাম্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় তার আদর্শের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনুল কারীমে বলেছেন, আমি আপনাকে পুরো জগদ্বাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭)। জীবনের সর্ব ক্ষেত্রের জন্যই প্রিয়নবী (সা.) আমাদের আদর্শ। কোরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনেই তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহজাব, আয়াত নং-২১)।

জাহেলিয়াতের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়া বিশ্বমানবতার মুক্তির একমাত্র দূত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পৃথিবীর বুকে শুভ আগমনে মাস এই রবিউল আউয়াল। মাতৃ গর্ভ থেকে তিনি দুনিয়াতে আসার মুহূর্তেও ছিলেন পুত-পবিত্র এবং খতনা করা অবস্থায়। রাসূল (সা.) ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই পবিত্রতা, ঈমানী জ্যোতি ও আখলাকের সুবাস ছড়িয়ে গেছেন পূর্ণাঙ্গ তেষট্টি বছরের হায়াতে জিন্দেগিতে।

আল্লাহপাক কোরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।এক সাহাবীর প্রশ্নের জওয়াবে রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন সোমবার আল্লাহপাক আমাকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন, যে কারণে আল্লাহপাকের শোকর আদায়ের স্বরূপ সোমবারে আমি রোজা রাখি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম থেকে ওয়াফাত পর্যন্ত তার প্রত্যেকটা আমল অনুসরণ অনুকরণ দুনিয়া ও আখেরাতে আমাদের কামিয়াবির একমাত্র মাধ্যম।

এক সময় গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। আরববাসীরা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। এ যুগকে বলা হতো আইয়ামে জাহেলিয়াত। তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করতো। অন্ধকার সেই যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহ তা‘আলা রসূলুল্লাহকে (সা.) প্রেরণ করেন এই ধরাধামে। মহানবী অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেম অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী (সা.) মক্কায় বিবি খাদিজা নামের এক ধনাঢ্য মহিলার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুয়্যাতপ্রাপ্ত হন। আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভ করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, “আমি আপনার আলোচনাকে বুলন্দ করেছি।” কতটুকু বুলন্দ? এতটুকু যে মহান আল্লাহ তা‘আলা তার নাম মুবারকের সাথে দরূদ সংযুক্ত করে দিয়েছেন।

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর জীবনের ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ইবাংলা/এসআরএস

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)